২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন

আপিল বিভাগের প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ

-


রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না বা নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব থাকবে না বলে সুপারিশ করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে কমিশনের সুপারিশে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা সমুন্নত রাখা এবং কার্যকারিতা নিশ্চিত করা অনেকাংশে নির্ভর করে বিচার বিভাগের নেতৃত্বদানকারী ও শীর্ষ ব্যক্তি প্রধান বিচারপতির ওপর। বিদ্যমান সংবিধানের ৪৮ (৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কারো পরামর্শ ব্যতিরেকে রাষ্ট্রপতি নিজস্ব প্রজ্ঞা অনুসারে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারেন; কিন্তু অতীতে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে নির্বাহী কর্তৃপক্ষ নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও কার্যকারিতা নানা সময়ে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে।

বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন মনে করে যে, প্রধান বিচারপতির নিয়োগকে নির্বাহী কর্তৃপক্ষের প্রভাবমুক্ত রাখার লক্ষ্যে সংবিধানে এই মর্মে বিধান থাকা প্রয়োজন যে, রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। অর্থাৎ, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতির স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা প্রয়োগ বা অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতি রাখা যাবে না। এর ফলে প্রধান বিচারপতির নিয়োগে রাজনৈতিক বিবেচনা প্রয়োগের সুযোগ বহুলাংশে লোপ পাবে। সেই লক্ষ্যে সংবিধানের ৪৮(৩), ৫৫(২) এবং ৯৫(১) অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
৯৫ (১) অনুচ্ছেদ অনুসারে, প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং প্রধান বিচারপতির সাথে পরামর্শ করে রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগদান করবেন।

এই অনুচ্ছেদে কাকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন সেই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেয়া নেই। তাই রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের যেকোনো বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এতে একাধিক বার সুপারসিড (জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন) করা হয়েছে।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন থেকে বলা হয়েছে, প্রধান বিচারপতি পদে এবং সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বিচারকদের নিয়োগকে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত রাখা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার পূর্বশর্ত। একই সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রত্যাশিত ভূমিকা পালনের ক্ষেত্রে এর জবাবদিহি কার্যকরভাবে নিশ্চিত করা আবশ্যক। এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিভাগ বিভাগ সংস্কার কমিশন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের নিয়োগ ও জবাবদিহির ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার অর্থবহ সংস্কার প্রস্তাব করছে।

সংশোধনী প্রস্তাব : বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে উপ-অনুচ্ছেদ যুক্ত করে রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন মর্মে সংশোধন করতে সুপারিশ করে।
এ বিষয়ে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি ফয়সাল মাহমুদ ফয়েজী নয়া দিগন্তকে বলেন, একসময় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে গোলাম রব্বানী সাহেবকে আপিল বিভাগে দেয়া হলো। তখন তো সে আন্দোলনে আমরাই ছিলাম। আমরাই বলেছি জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন ঠিক নয়। ওই ঘটনাই সে সময় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের নিকৃষ্ট উদহারণ ছিল। আমরা শপথ অনুষ্ঠানের সময় বাধা দিয়েছিলাম। সে সময় বিনা কারণে সিনিয়র অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদাসহ আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হলো। তখন ১৮ বা ১৯ জন আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা হয় জননিরাপত্তা আইনে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি আমরা সে দিন যে অবস্থা নিয়েছিলাম সেটি আমরা এখনো ধারণ করি। দীর্ঘ দিনের প্রথা ছিল যিনি আপিল বিভাগে সিনিয়র তিনি প্রধান বিচারপতি হবেন এবং সেটি হয়ে আসছিল। সে সময় তারা একটা রায় আদায় করে নিলো। যে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন হওয়া সংবিধান পরিপন্থী না এবং এটা রীতি পরিপন্থীও না। যে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দিতে পারেন।

তিনি বলেন, এখন অনেক দিন পরে আমাদের সুযোগ হয়েছে এটা সংশোধন করার। আমি মনে করি, কমিশন ভালো প্রস্তাব দিয়েছে। যেটা আমরাই একসময় উত্থাপন করেছিলাম। আন্দোলন করেছিলাম। সেটা এখন এসেছে। সুতারং নৈতিকভাবে সেটিকে আমরা সমর্থন করি।
তিনি আরো বলেন, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করা হলে তা জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির ওপর মানসিক প্রভাব পড়ে। এটা দ্বারা ক্ষমতাসীনদের তুষ্ট রাখার একটা চাপ মানসিকভাবে সৃষ্টি হয়। একজন বিচারপতি চিন্তা করেন তাকে তো আপিল বিভাগে নিবে না। অথবা আপিল বিভাগে যাওয়ার পরে তাকে তো প্রধান বিচারপতি করবে না।
তিনি মনে করেন, এই পেশায় সুপারসিডেড হওয়ার পরে যে অপমানটা হয়, সেটি দূর করার জন্য আরেকটা পেশা যে শুরু করবে সেটি তো আর উনার দ্বারা সম্ভব নয়। আরেকটা বিষয় হলো সমাজে এবং সবকিছুতে একটি প্রশ্নের সম্মুখীন হন তিনি। উনার পরিবারের ওপর একটা মানসিক চাপ, সামাজিক একটি হীনম্মন্যতা সৃষ্টি হয়। এগুলো কে ফেস করতে চায়। সে জন্য কোন না কোনোভাবে সরকারকে তুষ্ট করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে সরকারের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করার দুঃসাহস থেকে দমে যান। সুতারং এটা আমাদের বিচার বিভাগের জন্য খারাপ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
নোয়াখালীতে পুকুরে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মাদরাসা ছাত্রের মৃত্যু মেহেরপুরে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের ৫১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন বিইউপি ক্রিকেট টুর্নামেন্টের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত কিছু নষ্ট-ভ্রষ্টরা আমার ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লেগেছে : শিরীন নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীকে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখার অভিযোগ এসির তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রির ওপর রাখার সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদের সাদুল্লাপুরে বজ্রপাতে শ্রমিকের মৃত্যু দেশে আর কোনো অরাজকতা সৃষ্টি করতে দেয়া হবে না : হাবিব উন নবী এফডিসির এমডিকে অপসারণে আলটিমেটাম রিজওয়ান-শাকিলকে হারিয়ে বিপদে পাকিস্তান  দামুড়হুদায় গর্তে ডুবে ৯ মাসের শিশুর মৃত্যু

সকল