২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১, ২৩ শাবান ১৪৪৬
`

খিলগাঁওয়ের আগুনে ২৪ গাড়ি পুড়ে ছাই

রাতে পুড়েছে কড়াইল বস্তির ৬১ ঘর
-


স’মিল থেকে সৃষ্ট আগুন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে পাশের গ্যারেজ পট্টিতে। এক এক করে ধেয়ে আসা আগুনে পুড়তে থাকে এল শেপের ওই গ্যারেজ পট্টির ২০টি দোকান, মেরামতের জন্য থাকা ২৪টি গাড়ি এবং দুটি স’মিল। গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর খিলগাঁওয়ে তালতলায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ এই অগ্নিকাণ্ডে নিঃস¦ হয়ে গেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা।
গতকাল শনিবার খিলগাঁওয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থল সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্যারেজ পট্টিতে এখন অবশিষ্ট কিছুই নেই। দোকান কাঠামো, মেরামতের জন্য আনা গাড়ি, গাড়ির যন্ত্রাংশ, সব কিছুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। দোকানগুলোতে মেরামতের জন্য যে গাড়িগুলো রাখা ছিল, সেগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পোড়া অবকাঠামো দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, গাড়ি ও মোটরসাইকেলগুলো অনেকটা সারিবদ্ধভাবেই গ্যারেজ পট্টিতে রাখা হয়েছিল। গ্যারেজ পট্টির চালের টিনগুলো ঘটনাস্থলে পড়েছিল, দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে, প্রচণ্ড আগুনের তাপে টিনগুলো বেঁকে গিয়েছে। দোকানগুলোর যন্ত্রপাতি রাখার আলমারিও পুড়ে ছাই হয়ে পড়েছিল ঘটনাস্থলে। এ দিকে, বেশ কয়েকটি সিলিন্ডার ঘটনাস্থলে পড়েছিল। গ্যারেজ পট্টির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এসে আহাজারি করছিলেন ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা। দোকান মালিকদের কেউ কেউ খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে দেখছিলেন।

গ্যারেজ পট্টির ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, গত শুক্রবার এই গ্যারেজ পট্টি বন্ধ ছিল। এখানের কোনো দোকানের মালিক বা কর্মচারীদের কেউ ছিলেন না। কারণ গাজীপুরে মালিক সমিতির পিকনিক চলছিল। শুধু দু’জন সিকিউরিটি গার্ডি ছিলেন। স’মিলে আগুন লাগলে সেই আগুন এত দ্রুত আমাদের গ্যারেজ পট্টিতে ছড়িয়ে পড়বে এবং সব কিছু এমনভাবে পুড়ে যাবে- এটা ভাবতে পারছি না। আমাদের ধারণা, হয়তো কেউ নাশকতামূলকভাবেও আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।
অন্য দিকে খিলগাঁওয়ের স্থানীয়রা বলছেন, স’মিল থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে গ্যারেজ পট্টিতে। গ্যাড়েজের এক কোণে আগুন লেগে যায়। এতে গ্যারেজের ভেতরে থাকা সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হলে পুরো গ্যারেজ পট্টিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। একজন দোকান মালিক মো: মুন্না মিয়া বলেন, আগুনে গ্যারেজের প্রায় ১৭টি প্রাইভেটকার এবং সাতটি মোটরসাইকেল পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

এ দিকে, ঘটনাস্থলে কাজ করা ফায়ার সার্ভিসের একাধিক কর্মকর্তা বলছেন, খিলগাঁওয়ের তালতলায় অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কিভাবে সেটি তদন্ত ছাড়া সঠিকভাবে বলা খুব কঠিন। তবে সব বিষয়ে আমরা আমলে নিয়েছি। শর্ট সার্কিট কিংবা সিগারেটের আগুন থেকে এ অগ্নিকাণ্ড হতে পারে। আবার নাশকতাও হতে পারে। নির্দিষ্টভাবে এখন কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবে গ্যারেজ পট্টিতে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যাল সিলিন্ডার ও গাড়ির সিলিন্ডার বিস্ফোরণের কারণে আগুন মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।
খিলগাঁও, শাজাহানপুর, সবুজবাগ, মুগদা এবং রামপুরা অঞ্চলের বাংলাদেশ অটোমোবাইল মালিক সমিতির সভাপতি ও মাসুম অটো ওয়ার্কশপের মালিক মো: মাসুম বলেন, ‘অনেক সময় আমাদের মার্কেট বন্ধ থাকে। কোনো দিন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু কালকে এখানে কেউ ছিলেন না, তখনই আগুন লেগে গেল! এটা সন্দেহের বিষয়।’

আগুনের সূত্রপাত কী তা খুঁজে বের করতে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি তদন্ত শুরু করেছে পুলিশও। আগুনের ঘটনায় খিলগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। এ বিষয়ে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দাউদ হোসেন বলেন, ‘আগুনের ঘটনায় একটি জিডি হয়েছে। আগুনের সূত্রপাত খুঁজে বের করতে বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখেই আমরা তদন্ত করছি।’
ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, খিলগাঁওয়ের আগুনে দুটি স’মিল ও ২০টি দোকান পুড়েছে। ওই গ্যারেজে অক্সিএসিডিলিন শিখা ছিল, পেইন্টিং কেমিক্যাল ছিল, অনেক সিলিন্ডার ছিল। সেখানে বিস্ফোরণ ঘটায় আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল। আমাদের ১০টি ইউনিট কাজ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুনের সূত্রপাত কী তা এখনই বলা সম্ভব নয়।’
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সাড়ে ৭টার দিকে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। এরপর ৭টা ৩৫ মিনিটে প্রথম ইউনিট আসে। এরপর একে একে ৯টি ইউনিট আগুন নেভাতে কাজ করে। এসব গ্যারেজে বিভিন্ন ধরনের কাজ হয়। ইঞ্জিন মেরামতের কাজ হয়, পেইন্টিংয়ের কাজ হয়। এসব গ্যারেজে অক্সিএসিডিলিন শিখা ছিল, পেইন্টিং কেমিক্যাল ছিল, অনেক সিলিন্ডার ছিল। আমরা পৌঁছার পরই একটি সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হয় এবং সেখান থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।’

উৎসুক জনতার জন্য কাজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এতো পরিমাণে উৎসুক জনতা ছিল, গাড়িগুলো স্পটে আনতে পারছিলাম না। পানির লাইনগুলো আনতে পারছিলাম না। এখন পর্যন্ত ভেতরে অনেক সিলিন্ডার রয়েছে। সেগুলো যেকোনো সময় বিস্ফোরণ হতে পারে। এখনও এই এলাকা সাধারণ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। ভেতরে এখন পর্যন্ত অনেক মানুষ আছে। তারা ক্ষয়ক্ষতি দেখার জন্য জায়গা ত্যাগ করছে না। কিন্তু আগুন নিয়ন্ত্রণে বললেও এই জায়গা নিরাপদ নয়। ভেতরে থাকা সিলিন্ডারগুলো আমাদের সবগুলো বের করে আনতে হবে। আমাদের কাজ এখনও চলছে।’ তিনি বলেন, ‘আগুন লাগার কারণ হিসেবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ২০টির বেশি গ্যারেজ পুড়েছে। কিন্তু এখনও সঠিকভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।’

রাতে পুড়ল কড়াইল বস্তির ৬১ ঘর
গত শুক্রবার রাতে রাজধানী মহাখালীর কড়াইল বস্তিতে লাগা আগুনে ৬১টি ঘর পুড়ে গেছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, গত শুক্রবার রাত ১২টা ৪৪ মিনিটে কড়াইল বস্তির একটি রান্নাঘরের চুলা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে ৬১টি বস্তি ঘর পুড়ে যায়। প্রায় এক ঘণ্টা পর রাত ১টা ৩৫ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিটের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর নেই।

 


আরো সংবাদ



premium cement
পবিপ্রবিতে বিএনপির দু’গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ২ দাউদকান্দিতে স্কুলশিক্ষকের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ নেত্রকোনায় ফিরছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ভারতের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ে পাকিস্তান চট্টগ্রামে পঞ্চম বিয়ে করায় চতুর্থ স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন! নাইজেরিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৪ কম্বোডিয়ায় গ্রেনেড বিস্ফোরণে ২ শিশু নিহত মার্কিন এফ-১৬ যুদ্ধবিমানে হামলা চালিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী আমতলীতে অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বাড়িতে ডাকাতি ৫ দফা দাবিতে চমেক হাসপাতালে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি এস আলমের ৮ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা অবরুদ্ধের আদেশ

সকল