২০৫০ সাল নাগাদ ৮০ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হবে পোলট্রি খাতে
পোলট্রি মেলায় হাজার কোটি টাকার বিজনেস ডিল- কাওসার আজম
- ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১০
রাজধানীর পূর্বাচলে বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল তিন দিনব্যাপী ১৩ম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো। গত বৃহস্পতিবার শুরু হয়ে এ মেলা শেষ হয় গতকাল শনিবার। শেষ দিনে স্টলগুলোতে ছিল উদ্যোক্তা, দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। শেষদিনে কয়েক হাজার উদ্যোক্তা পোলট্রি ব্যবসা নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করেছেন। মেলার সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এ শিল্প ও পরিবেশ সুরক্ষায় পোলট্রি আবর্জনা ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে। পোলট্রি খামার স্থাপনকারী ও শিল্প উদ্যোক্তাদের পদচারণায় মুখরিত ছিলো তিন দিনের এ মেলা। বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞরাও যোগ দেন মেলায়। পোলট্রি, অ্যানিমেল ও মেডিসিন কোম্পানিসহ মোট ৮২৫টি দেশী-বিদেশী স্টল ছিল মেলায়। ছিল পোলট্রি ব্যবসায়ী, পোলট্রি ফিড ব্যবসায়ী, পোলট্রির সরঞ্জামাদি ব্যবসায়ী, মেডিসিন কোম্পানি, রিপ্রেজেনটেটিভ, ডাক্তার, বিশেষজ্ঞ, ইঞ্জিনিয়ারসহ পোলট্রি শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত হাজারও উদ্যোক্তা। সাসটেনেবল পোলট্রি ফর এমাজিং বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ মেলায় ১৮টি দেশের দুই শতাধিক কোম্পানি প্রযুক্তি ও সেবা নিয়ে মেলায় হাজির হয়। বাচ্চা উৎপাদন, লালনপালন, মার্কেটিং, পোলট্রি খাদ্য উৎপাদন, মৎস উৎপাদন, মাছের খাদ্য উৎপাদন, গরুর খামারসহ পোলট্রি, গবাদিপশু ও মৎস্য খাতের সবই ছিল এ মেলায়।
ওয়ার্ল্ড’স পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) যৌথভাবে এ মেলার আয়োজন করে। আয়োজকরা জানান, প্রায় ৩০ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতির মধ্য দিয়ে গতকাল শেষ হয় তিন দিনব্যাপী পোলট্রি শো। মেলায় এক্সিবিটর কোম্পানির সাথে খামারি ও উদ্যোক্তাদের প্রচুর বিজনেস টক হয়েছে। প্রাথমিক বিবেচনায় অন্তত হাজার কোটি টাকার বিজনেস ডিল হয়েছে। আশা করা হচ্ছে- আগামী দুই বছরে বেশকিছু ছোট-বড় প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, যা নিরাপদ ডিম, মুরগি ও ফিডের উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানে ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, শূন্য থেকে শুরু হয়ে আজ প্রায় ৪০ হাজার কোটি বিনিয়োগ হয়েছে। ২০৫০ সাল নাগাদ হয়তো ৮০ হাজার কোটি টাকার শিল্পে পরিণত হবে। বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্প হবে দক্ষিণ এশিয়ায় অনুকরণীয়। এমন দিন আসবে যখন এশিয়ার সবচেয়ে বড় পোলট্রি শো আমরাই আয়োজন করব। মসিউর বলেন, দেশ ও মানুষের প্রয়োজনেই দেশীয় পোলট্রি শিল্পকে টেকসই করতে হবে। ছোট-বড় সকল খামারের জন্য নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে হবে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সঠিক পরিকল্পনা ছাড়া খামারের নিবন্ধন দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, পোলট্রি রিসাইক্লিং আমাদের জন্য সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলতে পারে। এ জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তি আমদানিতে বিশেষ ছাড় এবং শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা উদ্যোক্তাদের শিল্প স্থাপনে উৎসাহিত করবে। তিনি বলেন, পোলট্রিতে আমরা ‘নেট জিরো কার্বন’ ইস্যুতে কাজ করছি। বাংলাদেশের বড়-মাঝারি পোলট্রি খামারগুলোর রুফটপে সোলার প্যানেল স্থাপন করা হলে কয়েক শত মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
বিপিআইসিসির সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন ডিম, মুরগি ও ফিডকে নিরাপদ করতে হলে খামারিদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। ছোট খামারিগুলোর আকার বাড়াতে হবে। তিনি বলেন আমরা মাত্র ৫৪ বছরের ব্যবধানে- বছরে মাথাপিছু ১ কেজি মুরগির গোস্ত ও ২০ পিস ডিম থেকে বর্তমানে প্রায় ১০ কেজি মুরগির গোস্ত ও ১৩৫ পিস ডিমের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে পেরেছি। ২০৩৫ সাল নাগাদ এ পরিমাণ দ্বিগুণ হবে বলে আমরা আশাবাদী। খালেদ বলেন, শুধু প্রোটিন কনজাম্পশন বাড়ানোই যথেষ্ট নয়; সবার জন্য সুষম বণ্টনও নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়াপসা-বিবির সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার প্রমাণিক বলেন, প্রতিদিন জনপ্রতি একটি করে ডিম খেলে পোলট্রি শিল্পের আকার অন্তত দ্বিগুণ করতে হবে। তিনি বলেন শহরের অনেকটা বাইরে অনুষ্ঠিত হলেও এবারের মেলায় পোলট্রি খামারি ও উদ্যোক্তাদের অভূতপূর্ব সাড়া মিলেছে। ২০২৭ সালে ১৪তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো অনুষ্ঠিত হবে।
সমাপনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা: মো: আবু সুফিয়ান বলেন উন্নত প্রযুক্তি ও দক্ষ জনশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে আমরা অনেক দূর এগুতে পারব। অপর বিশেষ অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত নেদারল্যান্ডসের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স আনদ্রে কারসটেনস- বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্পের অগ্রগতিকে ইতিবাচক বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পোলট্রি শিল্পের উন্নয়নে সহযোগিতা বাড়াতে নেদারল্যান্ডস সরকার ‘পোলট্রিটেক বাংলাদেশ’ নামে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের বিশ^বিদ্যালয়ের সাথে শিক্ষা ও গবেষণা বিষয়ক সহযোগিতা উভয় দেশের পোলট্রি খাত, শিক্ষক-গবেষক ও বিজ্ঞানীদের মধ্যকার সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করবে। উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে ডাচ সরকারের সহযোগিতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশ^াস দেন তিনি।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে পোলট্রি মেলার উদ্বোধন করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। এ সময় তিনি উদ্যোক্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন আপনাদের এগিয়ে যাওয়া মানে বাংলাদেশ এগিয়ে যাওয়া। আমাদের দায়িত্ব হলো ক্ষুদ্র খামারিদের রক্ষা করা। মুরগিকে খারাপ কিছু খাওয়ানো হলে তা আবার খাদ্যের সাথে মিশে মানুষের পেটে যাচ্ছে। সেজন্যই অর্গানিক ফুড বিশ্বে নতুন চিন্তার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। অগার্নিক হওয়া মানে আধুনিক হওয়া; তাই অর্গানিক আরো বেশি বৈজ্ঞানিক।
মেলায় উদ্যোক্তারা বলেন, সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা না থাকলে কাউকেই পোলট্রি খামারের নিবন্ধন দেয়া ঠিক হবে না। জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয় মাথায় রেখে বিজ্ঞানীদের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন মুরগির জাত উদ্ভাবন করতে হবে। রিসাইক্লিংয়ের কথাও গুরুত্বের সাথে ভাবতে হবে। সরকারকে পরিবেশবান্ধব ও নিরাপদ শিল্প স্থাপনে প্রণোদনা এবং স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে- এই বিষয়ে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করতে হবে।