১২ বছরে একবার

প্রতি ১২ বছরে মাত্র একবার ফোটে ‘নীলকুরিঞ্জি’ ফুল। ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় দেখা মেলে এ ফুলের। এ কারণে এ পর্বতমালাকে নীলকুরিঞ্জি ফুলের রাজ্যও বলা হয়। যখন এ ফুল ফোটে তখন গোটা পর্বতের সারি ঢাকা পড়ে যায় এক আশ্চর্য নীল গালিচায়।
সেখানকার আদিবাসীদের কাছে এই ফুল শুভ বার্তার প্রতীক। এর বৈজ্ঞানিক নাম স্ট্রোবিল্যান্থেস কুনথিয়ানা।
এক যুগ পর পর একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভারতের তামিলনাড়ু ও কেরালা রাজ্যের নীলগিরি পাহাড়ে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এই নীলকুরিঞ্জি ফুল।
নীলকুরিঞ্জি নামটি সর্বাধিক প্রচলিত নাম হলেও স্থানীয়রা এই ফুলকে কুরুঞ্জি বা কুরুঞ্জিও নামেও ডেকে থাকে। এই ফুল ফুটতে নির্দিষ্ট উচ্চতা ও বিশেষ জলবায়ুর প্রয়োজন।
কেউ হঠাৎ করে ফুলটিকে দেখলে এর তেমন কোনো বৈশিষ্ট্যই চোখে পড়বে না। অন্যান্য ফুলের মতোই জংলি কোনো ফুল পাহাড়ি ফুল বলে মনে হবে। ফুলটি দেখতে অনেকটা ঘণ্টার মতো, সাধারণত থোকায় থোকায় দলবদ্ধভাবে ফোটে। তাই আলাদাভাবে এই ফুল লোকজনকে খুব একটা আকর্ষণ করার কথা নয়। কিন্তু মাইলের পর মাইল যখন ফুলে ফুলে ছেয়ে যায়, দেখে মনে হয়, কে যেন নীল-বেগুনি রঙের গালিচা পেতে দিয়েছে।

প্রায় আগাছার মতোই এতগুলো বছর ফুলের গাছগুলো নিজের মতো করে বাঁচে-মরে; আবার নতুন করে পাতা জন্মায়, প্রকৃতির খেয়ালে নিজের মতো করেই বেড়ে উঠে। কিন্তু যখই এই ফুলের ফোটার সময় আসে, অমনি বনের চেহারাটাই পাল্টাতে থাকে। মনে হয় কে যেন রঙ-তুলি দিয়ে নীল রঙের ক্যানভাসে ফুলগুলো পর পর এঁকে চলেছেন। কুঁড়ি থেকে ফোটা পর্যন্ত প্রতিনিয়ত রঙ বদলাতে থাকে এ ফুলের।
রঙের ক্রমিক এই পরিবর্তনটিও চোখে পড়ার মতো। কুড়ি থেকে ধীরে ধীরে এই ফুল যখন ফুটতে থাকে, তখন নীল থেকে নীলচে-বেগুনি ও সবশেষে ফিকে বেগুনি রঙ ধারণ করে। ফুলের এমন পরিবর্তন দেখার জন্য প্রতি বছর দেশ-বিদেশের পর্যটকদের ভিড় লেগে যায় এই উপত্যকায়।
নীলকুরিঞ্জি ফুল ফুটলে নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকায় মৌমাছিসহ বিভিন্ন কীটপতঙ্গের আধিক্য বহু গুণ বেড়ে যায়। উদ্ভিদ বিজ্ঞানী এবং ভূবিজ্ঞানীদের মতে, নীলকুরিঞ্জির বৈচিত্র্যময় রঙ, মিষ্টি গন্ধ এবং ফুলে মধুর আধিক্য কীটপতঙ্গদের প্রবলভাবে আকর্ষণ করে। ফলে মৌমাছিরা মধুর লোভে, অন্য পতঙ্গরা বংশবিস্তারের নেশায় এই ফুলের চারপাশে ঘুরে বেড়ায়।
শোনা যায়, নীলগিরি পাহাড়ের নামই হয়েছে এই ফুল থেকে। যখন এই ফুল ফোটে পাহাড়ের ঢালে ঢালে, তখন থাকে শুধু নীলেরই বাহার। ২০০৬ সালে এমনই নীল রঙের ফুলে ঢেকে গিয়েছিল নীলগিরি। এর পর ২০১৮ তেও একই রূপ ধারণ করে। এর ১২ বছর পর ২০৩০ এ নীলগিরির বিস্তীর্ণ এলাকা ফের আরেকবার ঢেকে যাবে নীলকুরিঞ্জি ফুলে। ইন্টারনেট