বিদেশীদের একক নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্ক
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:৫১
- যোগাযোগ ও নিরাপত্তাতেও বড় ধরনের হুমকি
- বিভিন্ন অজুহাতে শতাধিক কর্মীকে চাকরিচ্যুত
ঠুনকো অজুহাতে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির টাওয়ার বা নেটওয়ার্ক কাজের সাথে জড়িত দক্ষ কর্মীদের। একই সাথে কৌশলে একক আধিপত্য তৈরি করা হচ্ছে এই সেক্টরে ভারতীয়দের। ফলে দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ইতোমধ্যে দুই শতাধিক কর্মীকে ব্যয় সঙ্কোচন নীতির অজুহাতে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। যদিও প্রধান ও বিশেষ বিশেষ পদে এখনো ভারতীয় এবং অন্যান্য কিছু দেশের কর্তা ব্যক্তিদের মোটা বেতনে চাকরিতে বহাল রাখা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে এসব কর্তা ব্যক্তিদের যোগসাজশেই মোবাইল নেটওয়ার্ক খাতে বিপর্যয়ের চেষ্টা করা হচ্ছে। অবশ্য দক্ষ এই নেটওয়ার্ক কর্মীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশন। অন্যদিকে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, বিষয়টি নিয়ে তাকে কেউ কোনো অভিযোগ জানায়নি।
এদিকে চাকরিচ্যুত কর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে থার্ডপার্টির মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি নিয়োগ করে বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানি। যদিও আগে কোম্পানিগুলো পৃথকভাবে মোবাইলে টাওয়ার নির্মাণ করে সেগুলোতে কর্মী নিয়োগ করে নেটওয়ার্ক সচল রাখার কাজ পরিচালনা করা হতো। তবে পরবর্তীতে একটি টাওয়ারের মাধ্যমেই একাধিক কোম্পানি তাদের নেটওয়ার্ক পরিচালনা করে। তবে কোম্পানিগুলো তাদের কাজের সুবিধার্থেই আলাদাভাবেই কর্মী নিয়োগ দিয়ে আসছে। তবে ইদানিং একটি দুষ্টুচক্র মোবাইল কোম্পানিগুলোর নেটওয়ার্কে পরিকল্পিতভাবে বিঘœ সৃষ্টির জন্য মাঠপর্যায়ে দক্ষ কর্মীদের বিনা অজুহাতে চাকরিচ্যুত করছে।
সূত্র মতে, ইতোমধ্যে ইডটকো বাংলাদেশ কোং লিমিটেডের মাধ্যমে রবি নেটওয়ার্ক মেইনটেন্যান্স কাজের জন্য ঞযরৎফ ঢ়ধৎঃু ঐজ এর মাধ্যমে অনেক দেশীয় ইঞ্জিনিয়ার ও টেকনিশিয়ান অস্থায়ী পদে চুক্তিভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এই কর্মীরা ১২/১৪ বছর আগে শুরুতে ৩ মাসের চুক্তিভিক্তিক হলেও গত কয়েক বছর কোনো প্রকার লিখিত চুক্তি ছাড়াই কর্মরত ছিল। যদিও চুক্তি অনুযায়ী প্রাত্যহিক (সাপ্তাহিক সরকারি ছুটি ব্যতীত) সাড়ে ৮ ঘণ্টা কাজের কথা উল্লেখ থাকলেও ফিল্ড অপারেশনের প্রয়োজনে তাদেরকে দিয়ে ১২-১৪ ঘণ্টা কাজ করানো হতো এবং সরকারি ছুটি ছুটির দিনেও নির্দিষ্ট বেতনের বাহিরে কোনো পারিশ্রমিক দেয়া হতো না। কিন্তু যারা স্থায়ী কর্মচারী তাদের ক্ষেত্রে নিয়ম ছিল ভিন্ন। তারা সাপ্তাহিক ছুটি শুক্রবার ও শনিবার এবং সরকারি ছুটি উপভোগ করতে পারেন।
স্থায়ী কর্মীরা হেলথ ইন্স্যুরেন্স, ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, প্রফিট শেয়ারসহ আরো অনেক সুযোগ-সুবিধা পেলেও অস্থায়ী কর্মীরা ছিলেন বৈষম্যের শিকার। সম্প্রতি কর্মীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে ঊফড়ঃপড় ইধহমষধফবংয ঈড়স খঃফ. কোম্পানির প্রধানের দায়িত্বে এসেছেন ভারতীয় একটি কোম্পানি। এই ম্যানেজমেন্ট দায়িত্বভার নেয়ার পর কোনো রকম নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে এবং পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই প্রায় দুই শতাধিক কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করেছেন। এই চাকরিচ্যুতির পেছনে শুধু আর্থিক সাশ্রয়ের বিষয়টি জড়িত থাকার কথা নয় বরং এখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে দেশে একটি অরাজকতা সৃষ্টির পাঁয়তারা থাকতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
এ বিষয়ে চাকরিচ্যুত কর্মীদের পক্ষ থেকে টেলিযোগাযোগ উপদেষ্টা এবং শ্রম মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদের হস্তক্ষেপও চেয়েছেন তারা। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি চাকরিচ্যুত কর্মীদের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা।
নয়া দিগন্তের এই প্রতিবেদকের কাছে চাকরিচ্যুতির হুমকিতে থাকা এক কর্মী বলেন, আমাদের নিয়োগের সময়ে বলা হয়েছিল ৩ মাস পর পর চুক্তি বাড়ানো হবে এবং পরবর্তীতে চাকরি স্থায়ী করা হবে। কিন্তু বছরের পর বছর আমাদের দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করানো হলেও আমাদের চাকরি এখনো স্থায়ী করা হয়নি বরং এখন চাকরি থেকেই বের করে দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের কাজের কোনো সেফটি নেই। যদিও আমাদের সবাইকে উঁচু টাওয়ার এ ইলেকট্রিক এবং টাওয়ারের উপরে উঠে নিয়মিত মেইনটেইন্যান্সের কাজ করতে হচ্ছে। প্রায়ই শারীরিক ইনজুরি বা ইলেকট্রিক শক বা টাওয়ারের উপর থেকে নিচে পড়ে মৃত্যুর আশঙ্কাও থাকে। অথচ ইডটকো কোম্পানি এত বড় একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি হওয়া সত্ত্বেও আমাদের সেইফটি ইন্স্যুরেন্স বা লাইভ ইন্স্যুরেন্স দেয় না, যা দেশের আইন মোতাবেক চরম একটি অপরাধ। যদিও ইতোমধ্যে অভিযোগ উঠেছে যে এই কোম্পানি নিয়োগ বাণিজ্য (নিজেদের আত্মীয়স্বজন পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের প্রায়োরিটি দিয়ে পারমানেন্ট নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত এবং দক্ষ কর্মীদের বাদ দিয়ে হঠাৎ করে কি উদ্দেশ্যেই বা নিজেদের পছন্দের অদক্ষ ও অখ্যাত কর্মীদের নিয়োগ দেয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে সেটি নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে।
এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: মহিউদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, দক্ষ কর্মীদের ছাঁটাই করে আর্থিক সাশ্রয় করার কৌশল নিয়ে ইডককোর কাজকর্মে সন্দেহ রয়েছে। তারা লাখ লাখ টাকা বেতন দিয়ে কর্তা ব্যক্তিদের পেছনে ব্যয় করছেন আর মাঠপর্যায়ের দক্ষ কর্মীদের চাকরিচ্যুতি করছেন এটা ভিন্ন কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। বিষয়টি নিয়ে এখনি সরকারের দৃষ্টি দেয়া জরুরি। অন্যথায় মোবাইল নেটওয়ার্ক নিয়ে বড় ধরনের কোনো বিপর্যয়ের মধ্যে দেশবাসীকে পড়তে হতে পারে। মনে রাখতে হবে মোবাইল নেটওয়ার্ক দেশের নিরাপত্তার বড় একটি উপাদান। এক্ষেত্রে বিদেশী কোনো দেশ বা কর্তা ব্যক্তিদের একক আধিপত্য বা নিয়ন্ত্রণে মোবাইল নেটওয়ার্ক দেয়া যাবে না।
অবশ্য টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের মহাপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন গতকাল সন্ধ্যায় মুুুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে জানান, কোম্পানির মাধ্যমে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজে জড়িত কর্মীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়টি এখনো আমি জানি না। আমাকে কেউ লিখিত কিংবা মৌখিকভাবেও বিষয়টি জানায়নি। কাজেই বিষয়টি নিয়ে আমি অবহিত নই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা