একুশ ঘিরেই সব প্রত্যাশা
- আবুল কালাম
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৪
আর মাত্র একদিন পরই একুশে ফেব্রুয়ারি। বাঙালির ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিবিজড়িত দিন। অর্থাৎ যে দিবসটি ঘিরে সব আয়োজন সেই মর্যাদার দিন মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। যা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেও স্বীকৃত। যার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে শহীদ হয়েছেন সালাম, বরকত রফিক জব্বারসহ অনেকে। এ দিনটি ঘিরেই এখন মেলায় ক্রেতাদের সব প্রত্যাশা।
প্রকাশকরা বলছেন, এবার অন্যান্য বছরের তুলনায় বিক্রি বেশি বলা যাবে না। তবে তাদের প্রত্যাশার দিন হলো ফেব্রুয়ারির ২১ তারিখ। প্রতি বছরই এ দিনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। এবারো তাই হবে বলে তাদের প্রত্যাশা। তাই আগেভাগেই তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যার যা বই আছে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে তা স্টলে আনার কাজ চলছে।
যদিও একুশ ছাড়াও মেলায় বেচাকেনার আরো বড় দুটি উপলক্ষ চলে গেছে। এর একটি হলো পয়লা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস। কিন্তু বাংলা দিনপঞ্জিকার আধুনিকায়নে এই দুটি দিবসও একই দিনে পড়ছে। দিবস দুটি পেরিয়ে গেছে। তাতে বেচাকেনায় যে গতি এসেছে তা একুশে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে।
গতকাল মেলার ১৮তম দিনে নতুন বই এসেছে ৭৯টি। মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায় এবং চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বেলাশেষের শহীদ কাদরী’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন তারানা নূপুর। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন শামস আল মমীন এবং আহমাদ মাযহার। সভাপতিত্ব করেন হাসান হাফিজ। প্রাবন্ধিক বলেন, বাংলা কবিতায় শহীদ কাদরী সমকালতাড়িত, সংবেদনশাসিত, স্বল্পপ্রজ এবং সত্যসন্ধিৎসু একজন কবি। জীবন ও শিল্পে তিনি অবৈষয়িক, আপাদমস্তক নাগরিক এবং শেষপর্বে বিশ^নাগরিক। পূর্বাপর সমকাল-সচেতনতা ছিল তার মর্মগত। উন্মেষ-পর্বে কোনো দর্শন, মতবাদ কিংবা নির্দিষ্ট কাব্যাদর্শে তিনি বিশ^াসী ছিলেন না, তবে শেষপর্বে তিনি মতাদর্শী না হলেও সাম্যবাদের প্রতি গভীরভাবে আস্থাবান ছিলেন। সমকাল ও চলমান বাস্তবতার মধ্যে নিজের অস্তিত্ব ও কথামালাই তার কবিতার বিষয়। বাস্তবতাকে স্বীকার করে নিলেও ফেলে আসা সময়ের জন্য দীর্ঘশ^াসগুলো কবি লুকাতে পারেননি। তিনি স্বেচ্ছায় তার শতকের সীমাকে বরণ করেছেন জীবনাদর্শে ও কবিতায়।
আলোচকদ্বয় বলেন, প্রবাসে অবস্থানকালে স্বদেশের চিন্তা কবি শহীদ কাদরীকে তাড়িত করেছে। স্বদেশ তার মানসজগতে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করেছিল। তিনি ছিলেন পরিশীলনবাদী এবং ব্যক্তি মানুষ হিসেবে মননশীল। শব্দের ইশারা ও প্রতীকের মধ্য দিয়ে তার কাব্যপ্রতিভার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। গদ্যরচনা ও অনুবাদকর্মেও শহীদ কাদরীর অনুপম দক্ষতা ছিল, তথাপি কবি হিসেবেই তিনি নিজেকে পরিচিত করতে চেয়েছেন।
সভাপতির বক্তব্যে হাসান হাফিজ বলেন, বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল ও প্রতিভাবান কবি শহীদ কাদরী স্বতন্ত্র কাব্যভাষা নির্মাণের ক্ষেত্রে একজন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। তার কবিতার বিষয় ও আঙ্গিক উভয়ই সমান গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা কাব্যজগতে তার কবিতা নিঃসন্দেহে চিরস্থায়ী আসনে অধিষ্ঠিত থাকবে।
লেখক বলছি, অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি হাসান হাফিজ এবং গবেষক খান মাহবুব। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মো: ফজলুল হক এবং কবি আশিকুল কাদির। ছিল মো: মিজানুর রহমানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা’ এবং সবুজ শামীম আহসানের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘কৃষ্টিবন্ধন’-এর পরিবেশনা।
আজ বুধবার। অমর একুশে বইমেলার ১৯তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টায় পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘জন্মশতবর্ষ : রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জুলফিকার শাহাদাৎ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন শাহাবুদ্দীন নাগরী। সভাপতিত্ব করবেন সৈয়দ মোহাম্মদ শাহেদ।
মেলায় নতুন বইয়ের মধ্যে এসেছে ‘বামপন্থার সুরতহাল’। এর লেখক মহিউদ্দিন আহমদ। প্রকাশক প্রথমা প্রকাশন। ‘আই লাভ ইউ’। লেখক নির্মলেন্দু গুণ। এটির প্রকাশক শাপলা প্রকাশ। ‘বর্তমান ও ভবিষ্যৎ’। লেখক সেলিম জাহান। প্রকাশ করেছে জাগৃতি। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’। এর লেখক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি প্রকাশ করেছে ইতি প্রকাশনী। ছাত্র-জনতার পাশাপাশি, জুলাই বিপ্লবের সেই ভয়াল দিনগুলোতে ফ্যাসিস্ট হাসিনার তাণ্ডবের মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল বিএনপি এবং অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। বইটিতে ছাত্রদের ওপর নৃশংসভাবে গুলিবর্ষণের প্রতিবাদ, হাসিনার পদত্যাগ দাবি এবং একটা রক্তক্ষয়ী সংগ্রামকে বিজয়ের পথে নিয়ে আসার সম্পূর্ণ যাত্রার স্পষ্ট চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা