ভারত থেকে কেনা হচ্ছে ৫০ হাজার টন সিদ্ধ চাল
ব্যয় হবে ২৬৫ কোটি টাকা- বিশেষ সংবাদদাতা
- ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০১:২৪
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্যাকেজ-০৮ এর আওতায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। দরপত্রে অংশগ্রহণকারী ভারতীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এ চাল সরবরাহ করবে। এতে মোট ব্যয় হবে ২৬৫ কোটি সাত লাখ ৫৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি চালের দর পড়বে প্রায় ৫৪ টাকা।
জানা গেছে, চাল আমদানির নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে খাদ্য অধিদফতর কর্তৃক চাল ক্রয়ের জন্য গত ২৯ জানুয়ারি আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র (প্যাকেজ-৮) আহ্বান করা হয়। এতে মোট ১১টি দরপত্র বিক্রি হলেও মোট আটটি সরবরাহকারী দরপত্র দাখিল করে। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সবগুলো দরপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ভারতীয় সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইটে লিমিটেডকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে সুপারিশ করে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি মেট্রিক টন চালের দাম ৪৩৪.৫৫ মা. ডলার দাম উল্লেখ করে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে এই চাল সরবরাহ করবে।
উল্লেখ্য, বিদেশ থেকে সরকারিভাবে খাদ্যশস্য আমদানির ক্ষেত্রে পণ্য আগমনের পর পণ্য খালাসের আগেই দরদাতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, খাদ্য অধিদফতরের প্রতিনিধি এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। সংগৃহীত নমুনা খাদ্য অধিদফতরের স্থানীয় পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় এবং পরে সংগৃহীত নমুনা কম্পোজিট করে এক প্যাকেট পরীক্ষার জন্য খাদ্য অধিদফতরে পাঠানো হয়। খাদ্য অধিদফতরের পরীক্ষাগারে তা পরীক্ষা করে গুণগত মান নিশ্চিত করা হয়। দরপত্রে উল্লিখিত নির্দেশের কোনো প্যারামিটারের সাথে পণ্যের প্রাপ্ত গুণগত মান নিম্নমানের হলে দরপত্রে উল্লিখিত সমুদয় চাল প্রত্যাখ্যান করার বিধান রয়েছে। এই শর্ত মেনেই সর্বনিম্ন দরদাতা ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল সরবরাহ করবে।
জানা গেছে, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক বিষয় পর্যালোচনা করে দরপত্রে অংশগ্রহণকারী আটটি প্রতিষ্ঠানকে গ্রহণযোগ্য দরদাতা ঘোষণা করে। গ্রহণযোগ্য দরদাতাদের মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক দাখিলকৃত দরপত্রে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চালের জন্য উদ্বৃত দর প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৪.৫৫ মা.ডলার। যা উৎস দেশগুলোর গড় দর (৪৫৫.৮১ মা. ডলার) অপেক্ষা (৪৫৫.৮১-৪৩৪.৫৫)= ২১,২৬ মা. ডলার কম। এ ছাড়া মেসার্স বাগাদিয়া ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড কর্তৃক প্রদত্ত দর বাংলাদেশের বন্দর পর্যন্ত প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৪.৫৫ মা. ডলার, যা বাজার দর যাচাই কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত প্রাক্কলিত দরের চেয়ে কম হওয়ায় ওই দর গ্রহণের জন্য দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সুপারিশ করে। খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ওই সুপারিশের সাথে একমত পোষণ করে তা অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে ক্রয় প্রস্তাব পাঠায়।
সূত্র জানায়, প্রতি মেট্রিক টন ৪৩৪.৫৫ মা. ডলার (প্রতি কেজি ৫৩.০১৫১ টাকা) হিসেবে ৫০ হাজার মেট্রিক টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল ক্রয়ের জন্য দুই কোটি ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ মা. ডলার অর্থাৎ গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ডলারের বিনিময় হার প্রতি দা. ডলার ১২২ টাকা (সম্ভাব্য) হিসেবে ২৬৫ কোটি সাত লাখ ৫৫ হাজার টাকার প্রয়োজন হবে।
এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদনের জন্য অর্থ উপদেষ্টা ড.সালেহউদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠেয় সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির পরবর্তী সভায় উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। সভাটি কাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হবে।
জানা গেছে, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ সরকারি বিতরণ ব্যবস্থা সচল রাখার উদ্দেশ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উৎস থেকে চাল সংগ্রহ করে থাকে। ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে ও জনস্বার্থে আন্তর্জাতিক উৎস থেকে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে তিন লাখ মে. টন নন বাসমতি সিদ্ধ চাল এবং জি টু জি পদ্ধতিতে মায়ানমার থেকে এক লাখ মেট্রিক টন, পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন ও ভিয়েতনাম থেকে ১.০০ লাখ মেট্রিক টন আতপ চালসহ মোট ৬.০০ লাখ মেট্রিক টন চাল ক্রয়ের চুক্তি সম্পাদিত হয়েছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির জন্য চুক্তির কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। চুক্তির বিপরীতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ ৬৪ হাজার ১৬২ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে মায়ানমার থেকে ৮২ হাজার মেট্রিক টন চাল বন্দরে পৌঁছেছে। তারমধ্যে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৯৫ হাজার ৬৯৬ মেট্রিক টন এবং জি টু জি ভিত্তিতে মায়ানমার থেকে ৮১ হাজার ৮৯৯ মেট্রিক টন চাল খালাস হয়েছে। এ ছাড়া, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র, জি টু জি পদ্ধতি এবং বৈদেশিক উৎস থেকে স্থানীয় দরপত্রের মাধ্যমে আরো চাল আমদানির কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা