বর্তমান সরকারের সময়েই আয়নাঘরের কাঠামো পরিবর্তন করল কারা
জড়িতদের বিচারের দাবি- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর কারা কিভাবে আয়না ঘরের কাঠামো পরিবর্তন করলো সেটা চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু ১৫-২০ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করাই যথেষ্ট নয়, ন্যায়বিচারের স্বার্থে শেখ হাসিনার বিভিন্ন বাহিনীর দোষী সবাইকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব দাবি জানান।
‘জাতিসঙ্ঘের তদন্ত প্রতিবেদন এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ-বিচার প্রক্রিয়া: আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক নেত্র নিউজ সম্পাদক তাসনিম খলিল, মানবাধিকার কর্মী রেজাউর রহমান লেলিন। অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনার বিভিন্ন বাহিনীর হাতে গুম হওয়া কয়েকজন ভুক্তভোগীর শিশু সন্তান, স্ত্রী, বোনসহ কয়েকজন স্বজন বক্তব্য রাখেন। গুম হওয়া এক ভুক্তভোগীও বক্তব্য দেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মায়ের ডাক’র সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম তুলি।
সাংবাদিক তাসনিম খলিল জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো শেখ হাসিনা সরকারের গণহত্যার বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের প্রতিবেদনকে স্বাগত জানান। তাদের রিপোর্টের মূল কথা ছিল, জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর সঙ্ঘবদ্ধভাবে যে আক্রমণ চালানো হয়েছে, তা যে মানবতাবিরোধী অপরাধ, সেটা প্রমাণিত হয়েছে। তবে জাতিসঙ্ঘ বলছে, মানবতাবিরোধী অপরাধ আরো ভালোভাবে প্রমাণের জন্য অধিক তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। আর এটা প্রমাণিত হয়ে গেলে তখন তা আর বাংলাদেশের বিষয় থাকবে না, এটি আন্তর্জাতিক একটি বিষয় হয়ে যাবে। এতে যারা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচারকাজ ব্যাপারটি উঠে আসবে। বিশদ তদন্তের স্বার্থে জাতিসঙ্ঘকে আমন্ত্রণ জানাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।
তিনি আরো বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ সরকার জাতিসঙ্ঘের এই তদন্তে যা সহযোগিতা প্রয়োজন, তা সরবরাহ করুক। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের যারা তদন্তকারী আছেন, তাদের সদিচ্ছার কোনো অভাব নেই। কিন্তু ক্যাপাসিটির একটি গুরুতর ঘাটতি রয়েছে, কারণ ফরেনসিক আর্কিটেকচার নিয়ে আমাদের কোনো স্পেশালিস্ট নেই। এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহায়তা আমরা চাইতেই পারি। এখানে জাতিসঙ্ঘ আমাদের হেল্প করতে পারে এবং সরকারের পক্ষ থেকেই উচিত এই এপ্রোচটা করা।
তাসনিম খলিল আরো বলেন, পাশাপাশি যে ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে প্রচুর টাকা বিদেশে পাচার করেছেন, সে টাকা উদ্ধারেও সরকারের উচিত জাতিসঙ্ঘের সহায়তা নেয়া। এ ছাড়া আরো কি কি পদক্ষেপ নেয়া যায়, তা মানবাধিকার সংগঠনগুলো এক সঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, জনগণের কাছ থেকে একটি দাবি আসা। জনগণ বা ভুক্তভোগী পরিবার যদি মনে করেন যে সার্বিক বিষয়ে জাতিসঙ্ঘের সহায়তা চাওয়া হোক, তাহলে বর্তমান সরকার সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
নেত্র নিউজ সম্পাদক তাসনিম খলিল ডিজিএফআই হেড কোয়ার্টার, র্যাব-১ ও র্যাব-২ এর আয়না ঘরের আলোকচিত্র প্রজেক্টরের মাধ্যমে তুলে ধরেন। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মঙ্গলবার এই ৩টি আয়না ঘর পরিদর্শন করেন। আলোকচিত্র বিশ্লেষণ করে তাসনিম খলিল দেখান, কিভাবে কোনো কোনো স্থানে আয়না ঘরগুলোর বীভৎসতা মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে। আড়াই ফুট চওড়া একটি কবরের মতো ঘরে মানুষকে নির্যাতন করা হতো। মাসের পর মাস কবরের মতো এসব রুমে দাঁড়িয়ে থাকা লাগতো। শোয়া দূরে থাক, বসারও কোনো ব্যবস্থা ছিল না।
গুম হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা বলেন, পৃথিবীতে মানবতাবিরোধী সবচেয়ে বড় অপরাধ হচ্ছে গুম। কারণ গুম করা হলে হারিয়ে যাওয়া ব্যক্তিটির কোনো চিহ্নই থাকে না। পরিবারের কাছে কেবল তার স্মৃতিটুকুই থাকে। তার আর কোনো অস্তিত্ব থাকে না। যারা ফিরে আসেনি তারা হয়তো আর্তনাদ করে বলেছেন, আমাকে ছেড়ে দেন আমি আর কিছুই করবো না, রাজনীতি করবো না। আমার ঘরে ছোট সন্তান আছে, বৃদ্ধ বাবা-মা আছে, আমাকে ছেড়ে দেন। কিন্তু ঘাতকদের কানে সেই আর্তনাদ পৌঁছায় না। যারা এই গুমের মতো নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তাদের সুষ্ঠু বিচার চাই।
বক্তব্যে গুম হওয়া সাংবাদিকের ছেলে মনোরম পলক বলেন, আমার বাবাকে গুমের পর জেলে রাখা হয়। কিন্তু জামিন দেয়া হয়নি। গুমের সেলগুলো এখন ভাঙা হচ্ছে, রং করা হচ্ছে। তার মানে এর পেছনে এখনো টাকা খরচ করা হচ্ছে। সেটা কে করছে? আরেক বক্তব্যে গুম হওয়া পরিবারের সদস্য লামিয়া ইসলাম মীম বলেন, আমার কিচ্ছু লাগবে না। শুধু আমার বাবার হাতটা ধরে হাঁটতে চাই। আমরা শুনেছি আমার বাবা আয়নাঘরে আছে। কই? আমরা তো আয়নাঘরে দেখলাম, বাবাকে তো পেলাম না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা