জুয়েলারি খাতে বছরে ভ্যাট ফাঁকি ৫০০০ কোটি টাকা
৪০ হাজার প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ভ্যাট দেয় মাত্র ১০০০- শাহ আলম নূর
- ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
দেশের বিপুলসংখ্যক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান ক্রেতার কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করলেও জমা হচ্ছে না সরকারের কোষাগারে। এমন পরিস্থিতিতে জুয়েলারি খাত থেকে প্রতি বছর পাঁচ হাজার কোটি টাকারও বেশি ভ্যাট থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশে ৪০ হাজারের বেশি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র এক হাজার প্রতিষ্ঠান ক্রেতাদের কাছ থেকে ভ্যাট আদায় করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিচ্ছেন। এ দিকে দেশের মোট জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধিত রয়েছে। বাকি ৮০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধনের বাইরে রয়ে গেছে। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে তারাও নানাভাবে ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে থাকে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। সব প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় ও সরকারের কোষাগারে জমা নিশ্চিতের মাধ্যমে এ খাতে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন সরকারি তথ্যে দেখা যায় দেশে বছরে স্বর্ণের চাহিদা ২০ টন থেকে ৪০ টন। অর্থাৎ দেশে জুয়েলারি খাতের বাজারের আকার এক লাখ কোটি টাকারও বেশি। বর্তমানে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিক্রির ওপর পাঁচ শতাংশ ভ্যাট দিতে হয়। দেশের সব জুয়েলারি দোকানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে পারলে বছরে কয়েক হাজার কোটি টাকা ভ্যাট আদায় সম্ভব। এতে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে জুয়েলারি শিল্প।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতির (বাজুস) মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশে অনেকেরই ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে। তবে তারা যথাযথ ভাবে ভ্যাট আদায় করে না। ঠিক তেমনিই অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন থাকলেও ভ্যাট আদায় করছেন না। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে পারলে এর পরিমাণ হবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। তবে প্রথমেই সবাইকে ভ্যাটের আওতায় আনা সম্ভব না হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন। এর মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব আয়ে এ খাতে অবদান বাড়বে বলে তিনি আশা করেন।
এ দিকে দেশের জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভ্যাটের আওতায় আনতে এনবিআর যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে তাকে সাধুবাদ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। চিঠিতে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জুয়েলারি খাত থেকে যথাযথভাবে মূসক আদায়ের জন্য দেশের সব জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ফিসক্যাল ডিভাইস (ইএফডি) বা বিক্রয় ডাটা কন্ট্রোলার বসানোর যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে প্রায় ৪০ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্যানুযায়ী মাত্র আট হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে। বাকি প্রায় ৩২ হাজার জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান সরকারকে কোনো রকম ভ্যাট প্রদান না করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। এতে জুয়েলারি ব্যবসায়ীদের মধ্যে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হচ্ছে। একই সাথে সরকার হারাচ্ছে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জুয়েলারি ব্যবসায় সমতা আনয়ন ও সরকারের রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূসক নিবন্ধনবিহীন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আনা একান্ত অপরিহার্য বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে জুয়েলারি খাত থেকে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধির লক্ষ্যে মূসক নিবন্ধনবিহীন জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা ও নিয়মবহির্ভূতভাবে ব্যবসা পরিচালনা করায় অনিবন্ধিত জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়।
এ দিকে রাজস্ব বোর্ডের ভ্যাটনীতি অনুবিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘শুধু জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান নয়। দেশে অনেক খাত ও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এখনো ভ্যাটের আওতার বাইরে রয়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে এনবিআর প্রতিটি খাতকে ভ্যাটের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান দিয়ে শুরু হয়েছে। এ জন্য বাজুস এনবিআরকে সহযোগিতা করবে।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দেশে বিপুলসংখ্যক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা অনেক সহজ কাজ। তবে এনবিআর এ সহজ কাজটি এখন পর্যন্ত শেষ করতে পারেনি। এমন চিত্র সরকারের রাজস্ব আদায়ের প্রচেষ্টার দুর্বলতা প্রকাশ করে বলে তিনি মনে করেন।
এ দিকে খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ জুয়েলারি বিক্রি হয় তাতে এ খাত থেকে বছরে এক হাজার প্রতিষ্ঠান মাত্র ১০০ কোটি টাকা ভ্যাট আদায় করে। এটি অবাস্তব বলে মনে করেন এ খাতের ব্যবসায়ীরা। আসলে এ খাত থেকে প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি ভ্যাট আদায় সম্ভব বলে তারা মনে করেন। তারা বলছেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে রাজস্ব আদায়ের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকলেও কাঠামোগত সমস্যার কারণে অনেক জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান থেকে যথাযথ ভ্যাট আদায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ জন্য রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তাদের মাঠপর্যায়ে তদারকি বাড়াতে হবে বলে খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা