১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৯ মাঘ ১৪৩১, ১২ শাবান ১৪৪৬
`
হাসিনাকে গুলি ও বোমা হামলা মামলা

মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৪ আসামি কারামুক্ত

-


১৯৯৪ সালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী (বর্তমানে পলাতক) শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগে করা মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া চার আসামি হাইকোর্টে খালাস পাওয়ার পর কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তারা।
মুক্তি পাওয়া চারজন হলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেসুর রহমান ওরফে বাবলু, জেলা বিএনপির সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক কে এম আখতারুজ্জামান, পৌর বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক ও ঈশ্বরদী প্রেস ক্লাবের সভাপতি আজিজুর রহমান ওরফে শাহীন এবং বিএনপির স্থানীয় নেতা শামসুল আলম।

সূত্র জানায়, সাবেক স্বৈরশাসক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিরোধীদলীয় নেত্রী থাকাকালে পাবনার ঈশ্বরদী রেলস্টেশনে তাকে বহনকারী ট্রেনে গুলি ও বোমা হামলার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় পুলিশের ঈশ্বরদী রেলওয়ে থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে তৎকালীন ছাত্রদল নেতা ও ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ সাতজনকে আসামি করেন। পরের বছর পুলিশ কোনো সাক্ষী না পেয়ে আদালতে চূড়ান্ত অভিযোগপত্র জমা দেয়। তখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু আদালত সে অভিযোগপত্র গ্রহণ না করে বেশি তদন্তের জন্য মামলাটি সিআইডিতে পাঠান। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটির পুনঃতদন্ত হয়। ১৯৯৭ সালের ৩ এপ্রিল পুলিশ ঈশ্বরদী বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনের নামে আদালতে আবার অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়। এরপর ২০১৯ সালের ৩ জুলাই রায় দেন পাবনার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ মো: রুস্তম আলী। রায়ে ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ৪৭ আসামির সবাইকে খালাস দেন হাইকোর্ট।
রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিচারিক আদালতের রায়ে ওই মামলায় মৃত্যুদণ্ড পাওয়া ৯ জনসহ ৪৭ আসামির সবাইকে খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। এ মামলার চারজন ফাঁসির আসামি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে বন্দী ছিলেন। হাইকোর্টের আদেশ কারাগারে পৌঁছানোর পর গতকাল মঙ্গলবার তাদের মুক্তি দেয়া হয়।

কারামুক্ত ৪৭ জনকে ঈশ্বরদীতে গণসংবর্ধনা
ঈশ্বরদী (পাবনা) সংবাদদাতা জানান, ঈশ্বরদীতে শেখ হাসিনার ট্রেনে হামলা মামলার সব আসামিকে খালাসের পর ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ৯ নেতাকর্মী মুক্তি পাওয়ার পর মঙ্গলবার ১১ ফেব্রুয়ারি গণসংবর্ধনা দিয়েছে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি। ৪৭ আসামির মধ্যে যাবজ্জীবন ২৫ ও ১০ বছরের ১৩ জন গত বছরের আগস্টে মুক্তি পেলেও ফাঁসির আসামি ৯ জন মুক্তি পান গত সোমবার ও মঙ্গলবার। গতকাল মুক্তিপ্রাপ্ত এসব নেতাকে ব্যাপক আয়োজনে গণসংবর্ধনা প্রদান করেছে ঈশ্বরদী উপজেলা ও পৌর বিএনপি। কারাগার থেকে এসব নেতা মুক্তিলাভের পর শত শত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে ঈশ্বরদীর হাজারো বিএনপি নেতাকর্মীরা তাদের শোভাযাত্রা সহকারে ঈশ্বরদীতে আনেন। দুপুরে ঈশ্বরদীর আলহাজ স্কুল মাঠে জমায়েত হওয়ার পর বিশাল শোডাউন নিয়ে শহরের প্রধান সড়কে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন কারামুক্ত ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এসব বিএনপি নেতারা।
পরে শহরের পুরনো মোটরস্ট্যান্ডে কারামুক্ত এসব নেতাকে গণসংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব, অ্যাডভোকেট জামিল আখতার এলাহী, মৃত্যুদণ্ড থেকে মুক্ত হয়ে আসা ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মকলেছুর রহমান বাবলু, পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টুসহ স্থানীয় নেতারা।

গণসংবর্ধনায় কারামুক্ত বিএনপি নেতারা ঈশ্বরদী বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজ আমরা মুক্ত হতে পেরেছি। আপনাদের ভালোবাসায় সিক্ত আমরা। ঈশ্বরদীতে বিএনপির কেউ রাহাজানির সাথে যুক্ত থাকবে না। প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে মব জাস্টিস প্রতিষ্ঠা করবেন না কেউ। নিজের হাতে আইন তুলে না নিয়ে আইন ও আল্লাহর প্রতি সবাইকে শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।
এ সময় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মকলেছুর রহমান বাবলু ও জাকারিয়া পিন্টু বলেন, প্রথম থেকেই তিনি এই মিথ্যা মামলা দেখভাল করছেন। কারারুদ্ধ নেতাদের বাড়িতে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন। আমাদের মুক্ত করার জন্য এই মামলার যাবতীয় অর্থ তিনি ব্যয় করেছেন। মামলা পরিচালনা করে তাদের মুক্ত করে আনার জন্য ব্যারিস্টার কায়সার কামাল ও আইনজীবী জামিল আক্তার এলাহীসহ সংশ্লিষ্টদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
উল্লেখ্য, ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর উত্তরাঞ্চলে দলীয় কর্মসূচিতে যোগ দিতে ট্রেনে খুলনা থেকে সৈয়দপুর যাচ্ছিলেন শেখ হাসিনা। ট্রেনটি পাবনার ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ঢোকার সময় হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় ট্রেনে গুলিবর্ষণ ও বোমা হামলার অভিযোগে ঈশ্বরদী জিআরপি (রেলওয়ে পুলিশ) থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলা করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
টিকিট সিন্ডিকেট ভাঙার খবরে স্বস্তি বাংলাদেশে আদানিকে পূর্ণমাত্রায় বিদ্যুৎ সরবরাহের আহ্বান আবরার হত্যা মামলায় হাইকোর্টে তৃতীয় দিনের শুনানি সাবেক মেয়র আতিকসহ ৬ জনকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ বাংলাদেশ-ভিয়েতনাম সরাসরি বিমান চলাচল নিয়ে আলোচনা রাজবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনায় সেনা সদস্য নিহত মানিকগঞ্জে থানায় দায়িত্বরত অবস্থায় পুলিশ সদস্যের মৃত্যু সোনারগাঁওয়ে ধরা পড়ল ৮ মণ ওজনের শাপলাপাতা মাছ তরুণদের হাত ধরেই বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদ মুক্ত হবে : যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা সাড়ে ১৬ হাজার গায়েবি মামলা প্রত্যাহার হচ্ছে : আইন উপদেষ্টা তৌহিদী জনতাকে হুমকি নয়, সতর্ক করেছি : উপদেষ্টা মাহফুজ

সকল