ডিবি পুলিশ পরিচয়ে যুবলীগ নেতার ভয়ঙ্কর ডাকাতি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০৫
ছাত্র হত্যায় ২ মামলার আসামি হয়েও বীরদর্পে ডাকাতি
৩০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল ৮ লাখে বিক্রি, গ্রেফতার ১২
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের পদধারী নেতা ছিল বেলাল চাকলাদার। বরিশালের মুলাদী থানার সফিপুর ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বারও সে। জনপ্রতিনিধি ও যুবলীগ নেতার আড়ালে গ্রামে নিয়ন্ত্রণ করত মাদক কারবার। ঢাকার মতিঝিলেও আধিপত্য বিস্তারসহ ছিনতাই, মাদক ও ডাকাতি করত নিয়মিত। তবে ছোট নেতা হলেও তার প্রভাব থাকায় ভয়ে কেউ মামলা করেনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর এই নেতাও আত্মগোপনে চলে যায়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় একটি ও উত্তরা পশ্চিম থানায় আরেকটি হত্যা মামলা রয়েছে তার নাম। একের পর এক ডাকাতি করলেও এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। গত রোববার রাজধানীর শনিরআখড়া থেকে তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। একই সাথে ডাকাত চক্রের আরো ১১ জনকে গ্রেফতার করা হয়।
গতকাল দুপুরে মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রমনা বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো: মাসুদ আলম বলেন, গ্রেফতার বেলাল চাকদার দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির আড়ালে ডাকাতির সাথে জড়িত। রাজধানীর ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে ডাকাতির অভিযোগে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত জানুয়ারি মাসে একই কায়দায় পামওয়েল ও সয়াবিন তেলবোঝাই দু’টি ট্রাক ডাকাতির ঘটনার তদন্তে নেমে এই চক্রকে গ্রেফতার করেছে ধানমন্ডি থানা পুলিশ। চক্রটি তেলবোঝাই দু’টি ট্রাক মুন্সীগঞ্জের একটি কারখানায় রাখেন। সেখানে ৩০ লাখ টাকার সয়াবিন তেল ৮ লাখ টাকায় বিক্রি করে।
বেলাল চাকলাদার ছাড়াও ডাকাত চক্রের অন্য সদস্যরা হলোÑ মো: মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, মো: রাসেল, মো: জাহিদ, মো: জাকির প্রকাশ তৌহিদ, মো: ইসমাইল হোসেন, মো: হিরা শেখ, মো: রফিক, মো: বাধন, চাঁন মিয়া ও মো: আসলাম খান।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ হাজার ৯০০ কেজি সয়াবিন তেল, পরিত্যক্ত দু’টি ট্রাক ও একটি মাইক্রোবাস জব্দ করা হয়।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ডিসি মাসুদ আলম বলেন, আব্দুল কাদের নামে এক ব্যবসায়ীর চারটি ট্রাক আছে। গত ২ জানুয়ারি সন্ধ্যায় তার ট্রাক ড্রাইভার মো: নয়ন ও হেলপার মো: জামিরুল ইসলাম পামঅয়েল বোঝাই ৬০টি ড্রাম একটি ট্রাকে নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার উদ্দেশে রওনা করে। ৩ জানুয়ারি রাত সাড়ে ৩টার দিকে ধানমন্ডি মডেল থানাধীন মিরপুর রোডের ‘হোটেল আড্ডার’ সামনে ৭-৮ জনের একটি দল দু’টি মাইক্রোবাসে করে এসে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে সিগনাল দিয়ে ট্রাকটি আটকায়। তাদের দুইজন লেজার লাইট ও ওয়াকিটকিসহ সাদা পোশাকে নেমে নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে ট্রাকের কাগজপত্র দেখতে চায়। এক পর্যায়ে পিস্তল ঠেকিয়ে ড্রাইভার হেলপারসহ তেলবাহী ট্রাকটি নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। পরে ড্রাইভার ও হেলপারকে চেতনানাশক ওষুধ সেবন করিয়ে হাত ও চোখ বেঁধে কেরানীগঞ্জের রসুলপুর এলাকায় ফেলে দেয়। ওই ঘটনার পর ট্রাকব্যবসায়ী আব্দুল কাদের গত ৭ জানুয়ারি অজ্ঞাত ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা করে। এর ১৯ দিন পর গত ২২ জানুয়ারি রাত ৩টার দিকে একই সড়কের রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ গেটের সামনে একই কায়দায় আরেকটি তেলবোঝাই ট্রাক ডাকাতির ঘটনা ঘটে। সে দিনও ৭৫ ড্রাম সয়াবিন তেল ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি করে নিয়ে যায়, যে ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়। একই কায়দায় ডাকাতির ঘটনার তদন্তে জড়িতদের অবস্থান শনাক্ত করে গত ৩০ জানুয়ারি ঢাকার মগবাজার এলাকা থেকে মঞ্জু, সাইফুল ইসলাম, রাসেল ও জাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত রোববার ডাকাতির মূল হোতা মো: জাকির প্রকাশ তৌহিদকে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করা হয়। পরে এক এক করে এই চক্রের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা