শেখ হাসিনাসহ একাধিক মামলার তদন্ত প্রতিবেদন এ মাসেই
জুলাই-আগস্টের গণহত্যা-মানবতাবিরোধী অপরাধ- হাবিবুর রহমান
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৯
জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলনে সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যাওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলাসহ একাধিক মামলার তদন্ত চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে শেষ হচ্ছে। যেসব অপরাধের গভীরতা অনেক বেশি সেসব অপরাধের তদন্ত প্রতিবেদনই আগে প্রস্তুত করা হচ্ছে বলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন থেকে বলা হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা তদন্ত প্রতিবেদন চিফ প্রসিকিউটরের কাছে জমা দেবেন। ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ দাখিলসহ বিচারিক কার্যক্রমের পরবর্তী ধাপ শুরু হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, আশা করি, এ মাসের মধ্যে একাধিক তদন্ত প্রতিবেদন চলে আসবে। এরপর আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হলে তার কয়েক মাসের মধ্যেই মামলা অনুযায়ী একে একে বিচার শেষ হবে বলে আশা করছি।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম বলেন, ঘটনাস্থল বা ব্যক্তি আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। প্রায়রিটির ক্ষেত্রে মুখ্য বিষয় হলো ঘটনার নৃশংসতা, প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, এই মাসের মধ্যে কয়েকটি তদন্ত প্রতিবেদন সমাপ্ত করে চিফ প্রসিকিউটরের দফতরে তদন্ত সংস্থা জমা দিতে পারবে।
জানা গেছে, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায় তিন শতাধিক অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। প্রতিদিনই ট্রাইব্যুনালে হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের নতুন নতুন অভিযোগ দায়ের হচ্ছে। জুলাই-আগস্ট গণহত্যার ঘটনায় দায়ের করা অভিযোগগুলো বাছাই করে ২৫৭টি অভিযোগের তদন্ত চলছে। এ ছাড়া গুম হওয়া ৮৩ জনের পক্ষে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এদিকে ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত ১৮টি মামলায় মোট ১১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরওয়ানা জারি করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের ১৪ জন প্রসিকিউটর ও ১৭ জন তদন্তকারী কর্মকর্তা যুক্ত রয়েছেন।
তদন্তে এগিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলা : সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত দ্রুত শেষ করা হচ্ছে। শুরুতেই তার বিচার কার্যক্রম হতে পারে প্রসিকিউশন থেকে এমন তথ্য জানা গেছে। আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের তারিখ ধার্য করা হয়েছে।
এ দিকে শেখ হাসিনার বিষয়ে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অগ্রগতি জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
শেখ হাসিনার মামলার তদন্তের বিষয়ে বিভিন্ন সময় ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সারা দেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় যেসব মামলা হয়েছে সেগুলো চলমান থাকবে। তবে আমাদের কাছে তার বিরুদ্ধে যত অভিযোগ আছে বিশেষ করে জুলাই আগস্টের গণহত্যার এবং গত ১৬ বছরের যত গুম ও ক্রসফায়ারের মতো যত মানবতাবিরোধী অপরাধ, পিলখানা ও হেফাজত ইসলামের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ ট্রাইব্যুনালের কাছে এসেছে, সেগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলমান আছে। আমরা বিশ্বাস করি শেখ হাসিনাসহ তার কেবিনেটের বিভিন্ন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা চলমান রয়েছে, তাই প্রায়োরিটির ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিষয়ে তদন্ত খুব জোরেশোরে চলমান রয়েছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে রেড নোটিশ জারির বিষয়ে গত ২১ জানুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা প্রত্যর্পণের জন্য ভারতের কাছে চিঠি লিখেছি। ভারত যদি শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ না করে তাহলে এটা বাংলাদেশের সাথে ভারতের যে প্রত্যর্পণ চুক্তি সেটার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হবে। সে ব্যাপারে আমরা বিশ্ব সমাজে কী পদক্ষেপ নেব সেটা আমরা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ঠিক করা হবে। তিনি আরো বলেন, ইতোমধ্যে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। আমাদের যা যা করণীয় আছে করে যাচ্ছি।
এদিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারিক কার্যক্রমের শুরুতে গত ১৭ অক্টোবর সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনা ছাড়াও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তাদের গ্রেফতার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেয়া হয়।
ইতোমধ্যে যে ৩৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, ফারুক খান, দীপু মনি, আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, গোলাম দস্তগীর গাজী, আমির হোসেন আমু, কামরুল ইসলাম, সাবেক মন্ত্রী ও ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা তৌফিক-ই ইলাহী চৌধুরী ও সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার ও জুনায়েদ আহমেদ পলক, আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রসচিব জাহাঙ্গীর আলম। এ ছাড়া সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক বরখাস্ত মেজর জেনারেল (অব:) জিয়াউল আহসান উল্লেখযোগ্য।
দুই পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা : ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় রাজধানীর মহাখালী, রামপুরা ও উত্তরায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দুই পুলিশ সদস্যসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন। এ ছাড়া রাজধানীর চানখারপুলের ঘটনায় গ্রেফতার পুলিশের কনস্টেবল সুজন হোসেনকে একদিনের রিমান্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
গতকাল পৃথক চারটি আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো: গোলাম মর্তুজা মজুমদার এবং ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো: মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী এই আদেশ দেন।
ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামিম ও বিএম সুলতান মাহমুদ এসব আবেদন করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা