ব্যাপক লোকসমাগমেও বিক্রি কম
- আবুল কালাম
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৮
একুশে বইমেলায় প্রতিদিন ব্যাপক লোক সমাগম হলেও বই বিক্রি কম। বিক্রেতারা জানান, মেলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন বিকেলে মেলা প্রাঙ্গণ লোকে- লোকারণ্য হলেও বিক্রি একেবারেই কম। তাদের ভাষ্য প্রতিদিন যারা আসেন তারা স্টলে না এসে প্রাঙ্গণে আড্ডায় মেতে ওঠেন। আবার মেলা শেষে কেনাকাটা না করেই ফিরে যান। এতে লোকের সমাগম দেখা গেলেও বিক্রি হতাশাজনক।
গতকাল মেলায় ঘুরে দেখা যায় কর্মদিবস থাকায় বিগত শুক্র ও শনিবারের চেয়ে লোক সমাগম কম। এর মধ্যে যারাই এসেছেন তাদের বেশির ভাগই মাঠে ও লেকেরপাড়ে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। সন্ধ্যায় সূর্য ডোবার সাথে দিনের চেয়ে লোকের সংখ্যা বাড়লেও বেশিরভাগ স্টল ছিল ক্রেতাশূন্য। কিছু প্যাভিলিয়নে ক্রেতার দেখা মিললেও স্টলগুলো ছিল প্রায় ফাঁকা।
আগত দর্শনার্থীদের ভাষ্য, বিকেল বেলা আড্ডার সময়। তাই তারা মেলাতে আড্ডা দিতে এসেছেন। বই কেন কিনছেন না- এমন প্রশ্নে তাদের বক্তব্য- সময় তো যায়নি। মেলা তো মাত্র শুরু। এখন ঘোরাঘুরি করে নতুন বই দেখছেন। মেলা শেষের আগে তালিকা অনুযায়ী বই কিনবেন।
মেলার ৯ম দিনে গতকাল নতুন বই এসেছে ৯৭টি। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘মাকিদ হায়দারের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চঞ্চল আশরাফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন আসিফ হায়দার এবং শাওন্তী হায়দার। সভাপতিত্ব করেন আতাহার খান।
প্রাবন্ধিক বলেন, কবি হিসেবে মাকিদ হায়দারের আত্মপ্রকাশ গত শতাব্দীর ষাটের দশকে। তার নিকট-অতীত ও সমকালীন কবিদের রচনায় রোমান্টিক আবেগ প্রকাশের যে ধারা গড়ে উঠেছিল, তার অনুগামী না হয়ে নিজস্ব পৃথক একটি ধারা গড়ে তোলার চেষ্টায় তিনি ব্যাপৃত থেকেছেন। তিনি এমন এক বর্ণনারীতির চর্চা করেছেন, যা ষাটের দশকের কবিতায় খুব কমই দেখা যায়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নিরাভরণ কিন্তু অর্থবোধক সারল্যের অনুশীলন করেছেন তিনি।
আলোচকদ্বয় বলেন, কবি মাকিদ হায়দারের কবিতায় গদ্যের যে ভূমিকা ছিল তা আধুনিক কাব্যধারার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। জটিল শব্দ ও বাক্য ব্যবহার না করে তিনি তার কবিতায় সহজবোধ্য ভাষা ও বাক্যরীতির প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। ফলে তার কবিতা সহজেই পাঠকের হৃদয় স্পর্শ করতে পারে।
সভাপতির বক্তব্যে আতাহার খান বলেন, পারিবারিকভাবে সাহিত্য-সংস্কৃতির আবহে বেড়ে ওঠা মাকিদ হায়দার তার সমকালীন কবি-সাহিত্যিকদের থেকে ভিন্নমাত্রায় নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন। আরোপিত রূপ বা আড়ালের আশ্রয় না নিয়ে স্পষ্ট এবং প্রচলিত ভাষাতেই তিনি কাব্যরচনা করেছেন। তার কবিতা নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যজগৎকে সমৃদ্ধ করেছে।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন আবু সাঈদ খান এবং পাভেল পার্থ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তি শিল্পী সাহেদ মন্তাজ, শাহ কামাল সবুজ ও আফরোজা পারভীন।
বইমেলার ১০ম দিনে আজ মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ : মনিরুজ্জামান’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মাশরুর ইমতিয়াজ। আলোচনায় অংশ নেবেন সালমা নাসরীন এবং মামুন অর রশীদ। সভাপতিত্ব করবেন অধ্যাপক মনসুর মুসা।
মেলায় এসেছে এক মলাটে চল্লিশ ছোটকাকু। বাংলাসাহিত্যে এই প্রথম শিশুসাহিত্যিক ফরিদুর রেজা সাগর-এর সৃষ্টি ছোটকাকু সিরিজের চল্লিশটি গ্রন্থ একসঙ্গে এক মলাটে প্রকাশ করলো অন্যপ্রকাশ। চল্লিশটি ছোটকাকুর অনন্য সংকলন এটি। কাল দুপুর ১২টায় চ্যানেল আইয়ের স্টুডিওতে বইটির প্রকাশনা উৎসব অনুষ্ঠিত হবে।
ঐতিহ্য নিয়ে এসেছে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘বঙ্গদেশের কৃষক’, আনোয়ার হোসেইন মঞ্জুর অনুবাদ নাগিব মাহফুজের ‘প্যালেস অব ডিজায়ার’, এবং হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘লাগে উরাধুরা’। বইগুলো ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে পাওয়া যাচ্ছে।
একুশে বইমেলায় মাকতাবাতুল হাসানের গাছের চারা উপহার
মাকতাবাতুল হাসান প্রকাশনী একুশে বইমেলা ২০২৫-এ বইপ্রেমী ও পরিবেশপ্রেমীদের জন্য নিয়ে এসেছে একটি বিশেষ উদ্যোগ। এই উদ্যোগের আওতায় তাদের বই কিনুন বা না কিনুন, প্রত্যেকেই উপহার পাবেন একটি গাছের চারা।
এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শুধু বইমেলায় জ্ঞানের আলো ছড়ানোর উদ্দেশ্যেই নয়; বরং প্রকৃতি রক্ষায় সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যেও কাজ করছে। মাকতাবাতুল হাসান-এর এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, প্রতিটি গাছ একটি নতুন জীবনের প্রতীক। বই আমাদের মানসিক বিকাশ ঘটায়, গাছ আমাদের পরিবেশকে সুরক্ষিত রাখে। আমরা বিশ্বাস করি, বই ও গাছের এই সংমিশ্রণ মানুষকে জ্ঞানার্জন ও পরিবেশ সুরক্ষার দিকে একসাথে অগ্রসর হতে অনুপ্রাণিত করবে।
মাকতাবাতুল হাসান-এর এই উদ্যোগ শুধু বইপ্রেমীদের মধ্যেই নয়; বরং পরিবেশ রক্ষায় সচেতন মানুষের মধ্যেও ভালো লাগা ছড়িয়ে দিচ্ছে।
মেলার ২৭০ নম্বর স্টলটিতে প্রতিদিন মানুষ আসছেন, শুধু একটি গাছের জন্য নয়; বরং একটি বার্তার অংশ হতে।
উল্লেখ্য, মাকতাবাতুল হাসান পরিবেশ ও জ্ঞানচর্চাকে একত্র করার এই প্রয়াসের মাধ্যমে সবার মধ্যে একটি নতুন চিন্তাধারা ছড়িয়ে দিতে চায়। প্রতিষ্ঠানটি প্রত্যাশা করছে, তাদের এই উদ্যোগ দেশের মানুষকে প্রকৃতি রক্ষায় আরো সচেতন করবে। বিজ্ঞপ্তি।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা