সাবেক গভর্নর রউফসহ ২৫ জনের লকার খুঁজে পাওয়া যায়নি
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৩:১৭
বাংলাদেশ ব্যাংকে রক্ষিত কর্মকর্তাদের লকারের সন্ধানে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদারসহ ২৫ কর্মকর্তার নামে সেফ ডিপোজিট লকার খুঁজে পায়নি অভিযান চালাতে আসা দুদক টিম।
গতকাল রোববার দুপুর সাড়ে ১২টায় দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামানের নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি দল বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারে তল্লাশি চালাতে প্রবেশ করে। আদালতের অনুমতিসাপেক্ষে এ অনুসন্ধান চালানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযান শেষে দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান বলেন, ২৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসেছিলাম, তাদের নামে লকার নেই। আরো অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। আদালতের অনুমোদনের ভিত্তিতে পরে অভিযান চালাবে দুদক।
বিদেশী নাগরিকত্ব গ্রহণ করে অর্থ পাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও অবৈধ সম্পদ অর্জন, শেয়ারবাজার থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নেয়া, রিজার্ভের অর্থ তছরুপ ও সঞ্চয়পত্র জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক-বর্তমান ২৫ কর্মকর্তাকে নজরদারিতে রেখেথছে দুদক। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের অনেকে এখনো বাংলাদেশ ব্যাংকে কর্মরত, অনেকে এখন চাকরিতে নেই। বাংলাদেশ ব্যাংকে এখন পর্যন্ত মোট ২৭২টি সেফ ডিপোজিট লকারের সন্ধান পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, আদালতে নির্দেশে দুদকের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের লকারের রেজিস্ট্রার চেক করে দেখেন। কিন্তু রেজিস্ট্রারে এই ২৫ কর্মকর্তার কোনো লকার সুবিধা পাননি। এ জন্য কোনো লকার আজ (রোববার) খোলা হয়নি। ভবিষ্যতে আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী অন্য কোনো ব্যক্তির লকার খোলার আদেশ পাওয়া গেলে খুলে দেখানো হবে বলেও জানান তিনি। আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। কেউ কেউ লকার খোলার বিপক্ষে মত দিয়েছেন, আবার অনেকে দুর্নীতিবাজদের অপকর্মের বিচার চেথয়েথছেন।
জানা গেথছে, দুদক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক দুই গভর্নর ড. আতিউর রহমান ও মো: আবদুর রউফ তালুকদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে। দুদকের অনুসন্ধান তালিকায় রয়েছেন ডেপুটি গভর্নর মোছা: নুরুন্নাহার, ড. হাবিবুর রহমান, কাজী সাইদুর রহমান, উপদেষ্টা আবু ফরাহ মো: নাসের, নির্বাহী পরিচালক ড. সায়েরা ইউনুস, পরিচালক ইমাম আবু সাঈদ, পরিচালক (এফপিআইবি) সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পরিচালক আবদুর রউফ, মঞ্জুর হোসেন খান, মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম পরিচালক সুনির্বাণ বড়ুয়া, জোবায়ের হোসেন, নিক তালুকদার, রুবেল চৌধুরী, লেলিন আজাদ পলাশ, উপমহাব্যবস্থাপক তরুণ কান্তি ঘোষ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ ফেরদৌস কবির, পদস্থ কর্মকর্তা এ বি এম মোবারক হোসেন, উপপরিচালক হামিদুল আলম সখা, সহকারী পরিচালক মো: কাদের ও সহকারী ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন।
দুদকের তালিকায় সাবেক নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম, সাবেক ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামান, খুরশিদ আলম, সাবেক পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ, সাবেক উপপরিচালক মোফাজ্জল হোসেন, সহকারী মহাব্যবস্থাপক (বরখাস্ত) সিকদার লিয়াকত ছাড়াও বিএফআইইউর তিন অতিরিক্ত পরিচালক, দুই যুগ্ম পরিচালক ও এক উপপরিচালক রয়েছেন।
এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তা ভল্টে কর্মকর্তাদের অর্থসম্পদ জমা রাখার ব্যক্তিগত সব লকার সাময়িকভাবে ফ্রিজ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গভর্নরকে চিঠি দেয় দুদক।
দুদকের পরিচালক কাজী সায়েমুজ্জামান সই করা চিঠিতে বলা হয়, গত ২৬ জানুয়ারি আদালতের অনুমতি নিয়ে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অনুসন্ধানের উদ্দেশে গঠিত দুদক টিম বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েন ভল্টে রক্ষিত অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক ডেপুটি গভর্নর সিতাংশু কুমার সুর চৌধুরীর সেফ ডিপোজিট তল্লাশি করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে তার জমা করা তিনটি সিলগালা কৌটা খুলে ৫৫ হাজার ইউরো, এক লাখ ৬৯ হাজার ৩০০ মার্কিন ডলার, ১০০৫.৪ গ্রাম স্বর্ণ ও ৭০ লাখ টাকার এফডিআর পাওয়া গেছে; যা তার নিয়মিত আয়কর রিটার্নে উল্লেখ করা হয়নি। অন্য কিছু কর্মকর্তাও সিলগালা করে সেফ ডিপোজিট রেখেছেন। এসব সিলগালা কৌটাতেও অপ্রদর্শিত সম্পদ থাকার অবকাশ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে দুদকের অনুসন্ধান চলমান রয়েছে।
দুদক জানায়, গত ৩০ জানুয়ারি বেলা ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অর্থ উপদেষ্টার সাথে দুদক চেয়ারম্যানের ‘দুদক ও সম্পদ পুনরুদ্ধার বিষয়ক’ আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রক্ষিত সম্পদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ওই ভল্টে রক্ষিত সম্পদ সাময়িকভাবে ফ্রিজের সম্মতি দিয়েছেন। গভর্নরকে দেয়া দুদকের চিঠি ও অর্থ উপদেষ্টার সম্মতি থাকায় ভল্টের সব লকারের সম্পদ ফ্রিজ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে এর মালিকরা তাদের লকার থেকে কোনো ধরনের অর্থসম্পদ সরিয়ে নিতে পারবেন না। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওই সব লকার খোলা ও লকারে থাকা অর্থসম্পদের তালিকা তৈরির অনুমতির জন্য আবেদন করে দুদক।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা