১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৮ মাঘ ১৪৩১, ১১ শাবান ১৪৪৬
`

গাজীপুরের সব কিছু এখনো আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে!

গাজীপুরে সেনাবিহনীর তল্লাশি। -

- পরিকল্পনা রয়েছে ঢাকায় বড় নাশকতা করার
- নিয়মিত বৈঠক করছে নিজেরা
- আশ্রয়দাতাদের নিয়ে রহস্য

রাজধানীর পার্শ্ববর্তী জেলা গাজীপুরের সবকিছু এখনো নিয়ন্ত্রণ করছেন পতিত সরকার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এমনকি তারা গোপনে মিটিংও করছেন। সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি ঢাকার সবাইকে নির্ঘুম রাখবেন। নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেছেন, যেকোনো সময় সবাইকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। একটি পক্ষ কমিশন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সব অপকর্ম করার সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ মিলেছে। এমনকি অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এলাকাতেই ওই লোকদের আশ্রয়ে রয়েছে বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। বাইরে থেকেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী এসে গাজীপুরে নিরাপদ আশ্রয় নিয়েছে।

৫ আগস্টের পর গাজীপুরে আওয়ামী লীগের বড় নেতাদের মধ্যে ধরা পড়েছে মাত্র তিনজন। এরা হলেন- সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরন, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আয়নাল হোসেন এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন মণ্ডল। বাকিদের বড় অংশ দেশেই আত্মগোপন করে আছে। এর মধ্যে অনেকেই গাজীপুরেই রয়েছে বলে জানা গেছে। আওয়ামী লীগ আমলের ভূমিদস্যু এবং সন্ত্রাসের হোতা রিপন সরকার দেশেই অবস্থান করছে। গাজীপুরেই তার অবস্থান বলে স্থানীয় সূত্র জানায়। গোপনে নিয়মিত বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও আসা-যাওয়া করছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। প্রথম দিকে পাশের জেলায় অবস্থান করলেও এখন মহানগর এবং আশপাশেই থাকছে। তাকে আশ্রয় দিচ্ছে তারই এক নিকটাত্মীয়। একইভাবে সরকার বংশের বাকি যারা আছেন যুবলীগ সভাপতি রাসেল সরকার, তার ভাই মাহির সাবেক স্বামী রাকিব সরকার, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরা সরকার, তার ভাই হালিম সরকার- তারাও দেশে অবস্থান করছেন। একদিনের জন্যও তাদের বাড়িতে অভিযান চালায়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এখনো তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারেন না বলে স্থানীয় সূত্র জানায়।

গাছার সাবেক কাউন্সিলর হাজী মনির, জুয়েল মণ্ডল এবং কাজল, ছাত্রলীগ নেতা দীপ (খালেদা জিয়ার সমাবেশ পণ্ডের মূল হোতা), ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারি মশি ও আমিন সরকার দেশেই আছেন। নিয়মত দলীয় নেতাদের সাথে ফোনে ও হোয়াটসঅ্যাপে বৈঠক করেন। নির্দেশ পেলে কর্মী নিয়ে মাঠে নামবেন। ঝুট ব্যবসা দখলে রেখেছেন তারা। পুলিশের কিছু লোককে ম্যানেজ করে ব্যবসা-বাণিজ্য টিকিয়ে রেখেছেন। মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এরশাদ দেশ ছেড়েছেন। তবে ফোনে নিয়মিত কথা বলছেন নেতাকর্মীদের সাথে। ধীরাশ্রম এলাকাটি আগে থেকেই আওয়ামী লীগের ঘাঁটি, সেখানে তারা পরিকল্পিতভাবেই ছাত্রদের ওপর হামলা চালিয়েছে। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুরের ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোজাম্মেল হকের বাসভবনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা রাস্তায় নামলে শনিবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত এক শিক্ষার্থীর ওপর গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা।

গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর সম্প্রতি এক বার্তায় গাজীপুরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেন। সেখানে তাকে বলতে শোনা যায় ৭৩ পার্সেন্ট নেতাকর্মী তার নির্দেশে প্রস্তুত রয়েছে। যেকোনো সময় তারা ঝাঁপিয়ে পড়বেন। তিনি ঘোষণা দেন, ঢাকার মানুষ রাতে তো নয়-ই দিনের বেলায়ও ঘুমাতে পারবে না। সেই পরিস্থিতি তিনি সৃষ্টি করবেন। এই বার্তার পরই ধীরাশ্রমে ছাত্রদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাইরে থেকেও বিপুলসংখ্যক আওয়ামী সন্ত্রাসী এসে গাজীপুরে আস্তানা গেড়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জের রামদি ছাত্রলীগের সভাপতি সুশান্ত ভৌমিক একটি বিশাল সশস্ত্রবাহিনী নিয়ে গাজীপুরে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, সবকিছু মাথায় নিয়েই শনিবার রাতে গাজীপুর থেকেই শুরু হয়েছে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’। পুলিশের হিসাব অনুযায়ী গতকাল রোববার পর্যন্ত গাজীপুর থেকে গ্রেফতার হয়েছে ১৩০৮ জন। তবে এর মধ্যে আওয়ামী লীগের শীর্ষ সারির কেউ নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আওয়ামী লীগের ওই সারির নেতারা এমন এমন লোকের বাসায় অবস্থান নিয়েছেন যেখানে আপতত তারা নিরাপদ বলেই মনে করছেন।


আরো সংবাদ



premium cement