ছাত্রদের ওপর হামলায় দিনভর বিক্ষোভে উত্তাল গাজীপুর, সন্ধ্যায় মিছিলে গুলি
- গাজীপুর জেলা ও মহানগর প্রতিনিধি
- ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৩
![](https://www.dailynayadiganta.com/resources/img/article/202502/19691019_154.jpg)
- ওসি সাসপেন্ড, আটক ১৬
- গুলিবিদ্ধ মোবাশ্বের হাসপাতালে
- পুরুষশূন্য সাবেক মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রীর এলাকা
- জাহাঙ্গীরের পরিকল্পনায় হামলা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনার জেরে গতকাল দিনভর বিক্ষোভ মিছিলে উত্তপ্ত ছিল গাজীপুর। গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার দিনভর জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র অন্দোলনের নেতৃবৃন্দসহ ছাত্ররা এসব কর্মসূচি পালন করে। জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সার্জিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এ কর্মসূচিতে যোগ দেন। এ দিকে ছাত্রদের ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ গতকাল বিকেল পর্যন্ত ১৬ জনকে আটক করেছে। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার জন্য জিএমপির সদর থানার ওসি মো: আরিফুর রহমানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল সন্ধ্যায় জোড়া পুকুর পাড়ে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা শিক্ষার্থীদের মিছিলে গুলি করেছে। এতে মোবাশ্বের হোসেন নামে এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
গাজীপুরে ছাত্রদের ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার বেলা ১১টার দিকে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে ভাওয়াল রাজবাড়ী মাঠে জাতীয় নাগরিক কমিটির ব্যানারে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা শুরু হয়। এতে বক্তব্য রাখেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সংগঠক অ্যাডভোকেট আলী নাসের খান, জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা এম এম শোয়ায়েব, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল, ওই সংগঠনের গাজীপুরের সমন্বয়ক আব্দুল্লাহ আল মুহিমসহ স্থানীয় বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। সভা শেষে বেলা সোয়া ১টার দিকে রাজবাড়ী মাঠ থেকে তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহরের রেল ক্রসিং পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে ফের জেলা প্রশাসকের কর্যালয়ের সামনে রাজবাড়ী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও সমাবেশ শুরু করেন। দুপুর আড়াইটার দিকে সার্জিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ তাদের সাথে যোগ দেন।
সমাবেশে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক সার্জিস আলম বলেন, রক্ত ও জীবনের বিনিময়ে ছাত্র-জনতা বাংলাদেশকে মুক্ত করেছে। তাদের জীবনের নিরাপত্তা দিতে হবে। আমরা দেখতে পাচ্ছি খুনি হাসিনার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা এখনো গাজীপুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই সন্ত্রাসীরা সোস্যাল মিডিয়ায় এখনো আমার যোদ্ধাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা-পুলিশ আজ রাতের মধ্যে হামলার সাথে জড়িত খুনিদের যদি না গ্রেফতার করে তাহলে আমাদেরকেও তাদের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। বিগত দিনগুলোতে আমরা গ্রেফতার-গ্রেফতার খেলা দেখতে পেয়েছি। একদল গ্রেফতার করে, দুইদিন পর আদালত বিচারক নামের কিছু অকালকুষ্মাণ্ড, যারা খুনি হাসিনার দোসর তাদেরকে জামিন দিয়ে দেয়। আমরা স্পষ্ট করে বলি- হাইকোর্ট, সুপ্রিম কোর্ট ও প্রত্যেকটা জেলা থেকে ওই খুনির দোসর বিচারকদের অপসারণ করতে হবে। টাকার বিনিময়ে, উপঢৌকনের বিনিময়ে অনেক দাগি আসামিদের জামিন দেয়া হয়েছে। স্পষ্ট করে বলি- আজকের পর থেকে যদি আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের কোনো ক্যাডার আমার ভাইদের কোনো হুমকি দেয়, তাহলে পরদিন চরম পরিণতি হবে। আমার কোনো ভাইয়ের গায়ে যদি একটা দাগ লাগে, তাহলে সেই দাগ প্রশাসনের চেয়ারে এসে লাগবে।
তিনি বলেন, সকালে প্রশাসনের সাথে বৈঠক হয়েছে। সেখানে বলে এসেছি গ্রেফতার খেলা বন্ধ করেন। এসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করার জন্য নতুন এক অপারেশন চালাতে হবে। বাংলাদেশ থেকে সন্ত্রাসীদের বের করতে হবে। আমরা তাদের বলেছি, এই ক্লিন বাংলাদেশ অপারেশন দুই-এক দিনের গ্রেফতার অভিযানের মতো হলে চলবে না। আমরা কিছু দিনের মধ্যে পুরো বাংলাদেশে গর্ত থেকে বের হয়ে উঁকি মারা সন্ত্রাসী যারা, মাঝেমধ্যে সোস্যাল মিডিয়া থেকে রাজপথে উঁকি দিচ্ছে, তাদের সবাইকে জেলখানার ভেতরে দেখতে চাই। গাজীপুরের রাজপথ থেকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলি- বাংলাদেশের কোথাও আমার কোনো সহযোদ্ধার গায়ে কেউ হাত দেয়ার চেষ্টা করলে পুরো দেশ নতুন করে জেগে উঠবে। আমরা যেমন গাজীপুরে আসতে পারি, তেমনি প্রয়োজনে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে পারি। আমরা অভ্যুত্থানে দেখিয়েছি এ দেশের ছাত্র-জনতা সঠিক রাস্তা বিনির্মাণে সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার বহু ধৈর্য ধরেছি। কিন্তু ধৈর্যের একটা বাঁধ আছে। প্রশাসন থেকে শুরু করে যারা কাজ করছেন, তারা যদি আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেফু ফেলেন, তাহলে এই বাংলাদেশে নতুন আরেকটি বিপ্লব আপনাদের দেখতে হবে।
তিনি আরো বলেন, স্পষ্ট করে বলছি, গতকালকের হামলায় যেসব সন্ত্রাসীরা জড়িত ছিল, তাদেরকে আজকের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারসহ প্রশাসনের নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কে আমাদেরকে একটি ব্রিফিং করার কথা। আমারা সেজন্য অপেক্ষা করছি। আমরা প্রতিশ্রুতিতে বিশ্বাসী নই। আমরা এখানে অবস্থান করব, প্রশাসনের কাজ দেখব। অপেক্ষায় আছি। যতক্ষণ না আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে, ততক্ষণ অবস্থান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
বিকেলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. মোহাম্মদ নাজমুল করিম খান ছাত্রদের বিক্ষোভ স্থলে যান। তিনি ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্যে বলেন, যে বিপ্লবের মাধ্যমে আপনারা একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দিয়েছেন, যে বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ১৭ বছরের ফ্যাসিবাদকে আপনারা এ দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন, সেই ফ্যাসিবাদের প্রেতাত্মারা এখনো দেশে রয়ে গেছে। তারা মাথাচাড়া দিচ্ছে। তাদের কোনো মাথাচাড়া বরদাশত করা হবে না। আপনাদেরকে আমি বলতে চাই, আপনাদের শরীরে যে ফ্যাসিবাদবিরোধী রক্ত, আমার শরীরেও সেই ফ্যাসিবাদবিরোধী রক্ত। গতরাতে যে ঘটনাটি ঘটেছে তার জন্য আমি পুলিশের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, ব্যর্থতা স্বীকার করছি। পাশাপাশি আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমি তাদেরকে ছাড় দেবো না, তাদের প্রত্যেকের আঘাতের প্রতিঘাত দিতে চাই। যারা আপনাদেরকে আঘাত করেছে তাদের প্রত্যেককে এই আঘাতের শিকার হতে হবে। আমি আপনাদেরকে বলতে চাই, আমরা এক এক করে সবাইকে খুঁজে বের করব। আমি নিশ্চয়তা দিতে চাই এখানকার যেসব পুলিশ রেসপন্স করতে দেরি করেছে তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
তিনি বলেন, আমি শুনেছি, আমার ওসি দুই ঘণ্টা পর আপনাদের ডাকে সাড়া দিয়েছেন। আমি বলতে চাই, যারা এই ফ্যাসিবাদের সাথে আঁতাত করেছে, তাদের পুলিশে চাকরি করতে দেয়া যাবে না। এতদিন যে ফ্যাসিবাদ পুলিশ তৈরি হয়েছে, এই ফ্যাসিবাদ থেকে পুলিশকে বেরিয়ে আসতে হবে, জনগণের পুলিশ হতে হবে। ইতোমধ্যে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অদ্যরাতে চিরুনি অভিযান চালানো হবে। ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আওয়ামী ফ্যাসিবাদ দমন করার জন্য ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ পরিচালনা করা হবে।
পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বক্তব্যে বলেন, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, দেশের সম্পদ পাচার করেছে। তারা জানত দিন শেষে তারা দেশে থাকবে না। এ জন্য দেশ থেকে তারা ২৬০ বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে। কিন্তু আমাদেরকে এই দেশেই থাকতে হবে, তাই এ দেশের সম্পদ আমাদের, এই দেশের নিরাপত্তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, পুলিশ যেহেতু আমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, নিশ্চয়তা দিয়েছে, এই জন্য আমরা পুলিশকে সহযোগিতা করতে চাই। তবে আমরা সহযোগিতা করব তার মানে এই নয় যে, পুলিশ মামলা বাণিজ্য করবে, আজকে ১৫ জনকে ধরে কালকে জামিন দিয়ে দিবে। আমরা বলতে চাই- সাবেক আওয়ামী লীগ বলতে কিছু নেই, এরা হচ্ছে গণহত্যাকারী, সাবেক মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলতে কিছু নেই, মোজাম্মেল হচ্ছে গণহত্যাকারী।
তিনি আরো বলেন, আমাদেরকে জানতে হবে, কোথায় আমাদের থামতে হবে। দেশের কল্যাণ, সামগ্রিক উন্নতি, সামাজিক নিরাপত্তা, ২৪ পরবর্তী দেশের উন্নতি করতে হবে। আমাদের ছাত্র নাগরিকদের সাথে নিয়ে ২৪ পরবর্তী বাংলাদেশ আমরা বিনির্মাণ করব। প্রশাসন যদি মনে করে আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
গাজীপুরের কমিশনার যেহেতু আমাদের কমিটমেন্ট দিয়েছেন, এই অন্তর্বর্তী সরকার ছাত্র নাগরিকদের যেহেতু প্রতিনিধিত্ব করছেন, এই জায়গা থেকে উনি যে কমিটমেন্ট দিয়েছেন এর প্রতি আমরা আস্থা রাখছি। তবে আমরা পর্যবেক্ষণ করব, দ্রুততম সময়ের মধ্যে যারা এই হামলায় জড়িত ছিল, যারা ১৭ বছর ধরে নির্যাতন নিপীড়ন করেছে, এই গাজীপুরকে সন্ত্রাসের আতুরঘর বানিয়েছে, তাদের আমরা এই অপারেশন ডেভিল হান্টের মধ্য দিয়ে শাস্তির আওতায় আনতে চাই।
এরপর বিকেল ৫টার দিকে ছাত্ররা অবস্থান কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেয়।
পুলিশ, এলাকাবাসী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী ও গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আ ক ম মোজাম্মেল হকের সিটি করপোরেশনের ধীরাশ্রমের দক্ষিণখান এলাকার বাড়িতে কিছু লোক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় মন্ত্রীর অনুসারী আওয়ামী লীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কর্মীরা ওই বাড়ি ঘিরে ফেলে। পাশাপাশি একই সময় স্থানীয় মসজিদের মাইকে মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত পড়েছে বলে ঘোষণা দিয়ে লোকজনকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়। মাইকিং শুনে আশপাশের কিছু লোক ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। পরে তারা কয়েকজনকে ধরে বেধড়ক পেটানো শুরু করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলার যুগ্ম আহ্বায়ক নাবিল বলেন, লুটপাটের খবর পেয়ে আমাদের (বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের) একটি গ্রুপ লুটপাট প্রতিহত করতে ওই বাড়িতে যায়। আমি গিয়ে দেখি ছাত্ররা লুটপাট থামাচ্ছে। এ সময় এলাকার কিছু মুরব্বি ওইটা দেখছিল। আমি মুরব্বিদের বলছিলাম আপনারা কেন থামাচ্ছেন না। এ কথা বলার দুই-তিন মিনিটের মাথায় কিছু উঠতি বয়সের ছেলে বড় বড় রাম দা নিয়ে এসে বলে ধর এদের একটাকেও রাখব না। এ সময় আমাকেসহ ছাত্রদের মারধর করতে থাকে। ছাত্রদের বলি দৌড়ে পালাতে।
তিনি আরো বলেন, সদর থানা, বাসন থানা ও টঙ্গী থানা পুলিশকে ফোন করি তারা আমার কাছে একটা ঘণ্টা ধরে শুধু জানতে চেয়েছে অ্যাডজ্যাক্ট ঘটনা কী? কোথায় ঘটছে, রাস্তা কোনটা, বাসা নাম্বার কোনটা। তিনি বলেন, আড়াই ঘণ্টা পর পুলিশ আসে। ততক্ষণে হামলাকারীরা চলে যায়। প্রশাসন অবহেলা না দেখালে ছাত্ররা এত আহত হতো না।
জানা গেছে, হামলার খবর পেয়ে রাতে পুলিশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিলে ছাত্ররা আহতদের উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক শেখ ফরহাদ জানান, রাতে আহত অবস্থায় ১৫ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তারা হলেন, বিকাশ (১৫), সামিউল ইসলাম (১৮) রাসেল (২১), শুভ শাহরিয়ার (১৭), হামজা (২১), কাশেম (১৭), আকরাম (২৪), হিমেল (২২), রোহান (২২), নাঈম (২১), ইয়াকুব (২০), গৌরব (২১), হাসান (২২), সাগর (২৩) ও সাজ্জাদ (২১)। গুরুতর আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা হলেন, শুভ শাহরিয়া (১৬), ইয়াকুব (২৪), সৌরভ (২২), কাশেম (১৭) ও হাসান (২২)।
এ দিকে ছাত্র আহত হওয়ার খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা রাতেই হাসপাতালের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। খবর পেয়ে রাত ৩টার দিকে জাতীয় নাগরিক কমিটি মুখ্য সমন্বয়ক সার্জিস আলম ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি আহত ছাত্রদের সাথে কথা বলেন এবং চিকিৎসার খোঁজখবর নেন। নেতৃদ্বয় এ সময় চিকিৎসার ব্যাপারে কর্তব্যরত চিকিৎসকের সাথেও কথা বলেন।
বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ
গাজীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িত শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে শহরের জোর পুকুরপাড়ের দিক থেকে মোটরসাইকেলে আসা দুর্বৃত্তরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে থাকা শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি করে পালিয়ে যায়। গুলিতে মোবাশ্বের হোসেন (২৬) নামের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় এক সদস্য আহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুর মহানগরের হারিনাল দক্ষিণপাড়া এলাকার আলী আহমেদের ছেলে। তাকে উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
মোজাম্মেল হকের এলাকা পুরুষশূন্য : গাজীপুরে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ি ‘ভাঙচুর’ ঠেকাতে ছাত্রদের ডেকে নিয়ে ‘ডাকাত’ আখ্যা দিয়ে পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হয়েছে। এ ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গাজীপুর। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও গ্রেফতারের ভয়ে সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়ির আশপাশের এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। শুক্রবার রাতে যে তিনটি মসজিদ থেকে ‘মন্ত্রীর বাড়িতে ডাকাত ঢুকেছে’ বলে মিথ্যা ঘোষণা দেয়া হয়েছিল ওই তিন মসজিদেও শনিবার কাউকে পাওয়া যায়নি। মসজিদে গতকাল কেউ নামাজ পড়তেও যাননি।
জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে হামলা : জানা যায়, গত তিন দিন আগে আওয়ামী লীগের ক্যাডারদের সাথে ফেসবুক মেসেঞ্জারে পলাতক জাহাঙ্গীর আলমের একটি অডিও কনফারেন্স ফাঁস হয়। ওই কনফারেন্সে ঢাকাবাসীর রাতের ঘুম হারাম করতে দলের নেতাকর্মীদের প্রস্তুত থাকতে বলেন জাহাঙ্গীর আলম। কোথায় কী ঘটানো হবে আগেই নির্দেশনা দেয়া হবে বলেও তাতে উল্লেখ করেন তিনি। আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলার নাটক তারই অংশ বলে অভিযোগ বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। শনিবার রাজবাড়ি সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশে ছাত্ররা বলেন, সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা সামাল দেয়ার জন্য ছাত্রদেরকে ডেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে তারা দেখেন বাড়ির ভেতর কিছু লোক অবস্থান করছে। মুহূর্তের মধ্যে রামদা, চাপাতিসহ বিভিন্ন ধারাল অস্ত্রশস্ত্রে যুবলীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় তাদেরকে সাবেক মন্ত্রীর বাড়ির ভেতর নিয়ে কুপিয়ে ও পিটিয়ে গুরুতর আহত করে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুরের যুগ্ম আহ্বায়ক নাবওল আহমেদ বলেন, ‘আমাদের রাত সাড়ে ৮টার দিকে বলা হয়, সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে হামলা হয়েছে। সেখানে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা যেন দ্রুত গিয়ে তাদের বাঁচাই। খবর পেয়ে আমাদের শিক্ষার্থীরা সেখানে তাদের উদ্ধার করতে যায়। সেখানে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে সাবেক মন্ত্রীর বাড়িতে নিয়ে তাদের আটকে মারধর করে।’
নাবওল আহমেদ আরো বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা ফাঁদে পড়েছে বুঝতে পেরে আমরা বহুবার পুলিশকে জানিয়েছি। তারা ঘটনার দুই ঘণ্টা পর এসেছে। যারা হামলা করেছে তারা সবাই আওয়ামী লীগের লোকজন। তাদের হামলায় অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। ১০-১২ জনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে। কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা