০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৬ মাঘ ১৪৩১, ৯ শাবান ১৪৪৬
`

দেশে অস্থিরতার নেপথ্যে কামাল সিন্ডিকেটের ১৮ কর্মকর্তা

-

দেশব্যাপী বিভিন্ন সহিংস কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। তারা টুঙ্গিপাড়ায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আসামি ছিনতাইয়ের চেষ্টাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর হামলা ও বাড়িঘর লুটপাটের ঘটনাও ঘটাচ্ছে। সভাপতি শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে দেশ থেকে পালিয়ে গেলেও এমন অস্থিরতা সৃষ্টি করছে দলটির নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে থাকা সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল সিন্ডিকেটের ১৮ কর্মকর্তা এবং পুলিশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় শেখ হাসিনার আস্থাভাজন কর্মকর্তারা বহাল থাকায় এমন ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা। তবে এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানান, স্বৈ^রাচারী আওয়ামী শাসনামলে চাকরির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ছিল সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান। মন্ত্রণালয় ছাড়াও পুলিশের পদায়ন নিয়ন্ত্রণ করত তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব ড. হারুন অর রশীদ বিশ্বাসের সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের অন্যতন হোতা ছিল যুগ্মসচিব ধনঞ্জয় কুমার দাস। ২০২২ সালের ১০ এপ্রিল সরকারের একটি গোপন প্রতিবেদনে ধনঞ্জয় কুমার দাস সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তিনি চরম দুর্নীতিগ্রস্ত ও কট্টর ইস্কনপন্থী। ২০১৮ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে জননিরাপত্তা বিভাগে কর্মরত। পুলিশে নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্য করে বিপুল অর্থের মালিক হয়েছেন। হাসিনা সরকারের পতনের পর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধাতে নানাভাবে চেষ্টা করেছেন। এমনকি শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে নিজেই মাঠে নেমেছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অধিশাখার দায়িত্বে থাকা এই যুগ্ম সচিব। মন্ত্রণালয়ে কোনো কর্মকর্তাকে পদায়ন করতে হলে মৌখিক নির্দেশনা নিতে হতো এই সিন্ডিকেট থেকে। শিক্ষা জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিল অথবা আওয়ামী পরিবারের সদস্য না হলে এই মন্ত্রণালয়ে পদায়ন পাওয়া ছিল অসম্ভব। কামাল-হারুন-ধনঞ্জয় সিন্ডিকেটের আশীর্বাদে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদায়ন পাওয়া ১৯ কর্মকর্তা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। যারা শেখ হাসিনার সাথে পালিয়ে যাওয়া ধনঞ্জয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে আইনশৃঙ্খলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচার করছেন। যাতে দেশের বিভিন্ন স্থানে দলটির নেতাকর্মীরা পুলিশের ওপর হামলার সাহস পাচ্ছে।

সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের হাত ধরে স্বরাষ্ট্রে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তাদের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জননিরাপত্তা বিভাগের সীমান্ত অধিশাখার যুগ্মসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন শেখ ছালে আহম্মদ। দ্বিতীয় মেয়াদে এই কর্মকর্তা ২০২১ সালের ১১ আগস্ট থেকে পদায়নের তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বহাল তবিয়তে আছেন। দুই বছরের বেশি সময় ধরে জননিরাপত্তা বিভাগের শৃঙ্খলার মতো সংবেদনশীল জায়গায় কর্মরত আছেন উপসচিব নাসরিন পারভীন। জননিরাপত্তা বিভাগে এই কর্মকর্তা যোগদান করেছেন ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর।
চার বছরের বেশি সময় ধরে একই বিভাগে কর্মরত আছেন বিকাশ বিশ্বাস। ধনঞ্জয় কুমার দাশের বিশ্বস্ত এ কর্মকর্তা ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারি এই পদে যোগ দেন। প্রায় দুই বছর ধরে একই বিভাগের শৃঙ্খলা-২ শাখায় কর্মরত আছেন আমিনুল ইসলাম। তিনি ওই পদে ২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি যোগ দেন।
অগ্নি শাখার যুগ্মসচিব সেখ ফরিদ আহমেদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন ৬ বছর ধরে। ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি এই কর্মকর্তা এ মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।

তিন বছর চার মাস ধরে নিরাপত্তা শাখায় কর্মরত আছেন যুগ্মসচিব শরিফা আহমেদ। ২০২১ সালের ২০২১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এই মন্ত্রণালয়ে যাগ দেন। ড. ফারুক আহম্মদ যুগ্মসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন। শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হয়ে সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। উন্নয়ন শাখার অতিরিক্ত সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন ফয়সাল আহমেদ। প্রায় দুই বছর ধরে এই কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত আছেন। বহিরাগমন-৩ শাখার যুগ্মসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তৌফিক-ইলাহি চৌধুরী। গত বছরের শুরুতে এই কর্মকর্তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।
প্রশাসন-১ শাখার উপসচিব হিসেবে কর্মরত আছেন আশ্রাফ আহমেদ রাসেল। ২০২২ সালের ২ অক্টোবর এই মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন। প্রশাসন-৩ শাখার উপসচিব শহীদ উল্লাহ এই মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন ২০২১ সালের ২৫ জুলাই। বহিরাগমন-১ শাখার উপসচিব কামরুজ্জামান কর্মরত আছেন ২০২২ সালের ২৯ মে থেকে। কারা-২ শাখার উপসচিব হিসেবে আবু সাঈদ মোল্লা কর্মরত আছেন ২০২০ সালের ২৬ আগস্ট থেকে। বহিরাগমন-৫ শাখার উপসচিব কানিজ ফাতেমা কর্মরত আছেন ২০২২ সালের ১০ জানুয়ারি থেকে। নিরাপত্তা-৩ শাখার উপসচিব ফারজানা সিদ্দীকা কর্মরত আছেন ২০২১ সালের ২৯ জুলাই থেকে। কারা-১ শাখার উপসচিব হিসেবে তাহনিয়া রহমান চৌধুরী কর্মরত আছেন ২০২১ সালের ৮ আগস্ট থেকে। বহিরাগমন-৪ শাখার উপসচিব হিসেবে আমিন আল পারভেজ কর্মরত আছেন ২০২৩ সালের ১ মার্চ থেকে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লে: জেনারেল (অব:) মো: জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আমরা সবকিছুই বিবেচনা করছি। সময়মতো সব ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


আরো সংবাদ



premium cement