সিসিমপুর না থাকায় শিশুদের আক্ষেপ
- আবুল কালাম
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:১৬
প্রতি বছর বইমেলায় শিশু চত্বরে সিসিমপুর থাকলেও এবার তা নেই। ফলে মেলার প্রথম ছুটির দিনে শিশুচত্বরে ছিল না শিকু, ইকরি, হালুম, টুকটুকির পদচারণা। গতকাল সকালে শিশুরা মেলায় আনন্দে মেতে উঠলেও সিসিমপুর নিয়ে তাদের মধ্যে আক্ষেপ ছিল। ফলে এবারের শিশু চত্বরে নতুনত্ব থাকার পরও তা শিশুদের মন জয় করতে পারেনি। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করলেই হাতের ডান দিকে শিশু চত্বর। বিগত বছরগুলোতে বইমেলায় শিশু চত্বরে ফটক থাকত না। এবার ফটক থাকায় দূর থেকেই চোখে পড়ে শিশুদের জন্য বিশেষভাবে সাজানো মেলার এ অংশটি; যাতে গাছ, ফুল, জেব্রা, জিরাফ, পাখির ছবি দিয়ে নকশা করা হয়েছে। অন্য দিকে গেল বইমেলায়ও শিশু চত্বরে ছিল প্রাণ উচ্ছ্বাসের আয়োজন ‘সিসিমপুর’। এবার তা না থাকায় জায়গাটি খালি পড়ে আছে। আর এ চত্বরে চাকচিক্য থাকলেও বিক্রেতাদের ভাষ্য এখানে নতুন বইয়ের সংখ্যা এবার তুলনামূলক কম।
গতকাল বেলা ৩টার পর মেলায় মানুষের ঢল নামে। সন্ধ্যা হওয়ার আগেই সোহরাওয়ার্দীর পুরো মেলা প্রাঙ্গণ মানুষে একাকার হয়ে যায়। তবে স্টলগুলোতে তুলনামূলক ক্রেতা কম ছিল। বিক্রেতারা জানান, মূলত প্রতি বছরই প্রথম ছুটির দিনে এমনই মানুষ হলেও বিক্রি কম হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হয়নি। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে বিক্রি বাড়বে বলে তাদের প্রত্যাশা।
গতকাল মেলায় ছিল শিশুপ্রহর। সকাল সাড়ে ৮টায় বাংলা একাডেমিতে শুরু হয় শিশু-কিশোরদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। ছুটির দিন থাকায় বইমেলায় শিশু-কিশোরদের ঢল নামে। সকালে এর উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুস সাত্তার। এর পরই সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর আবৃত্তি প্রতিযোগিতার প্রাথমিক নির্বাচন অনুষ্ঠান।
শিশুদের নিয়ে আগত অভিভাবকরা জানান, প্রতি বছর বইমেলায় শিশুপ্রহরে সিসিমপুরকে কেন্দ্র করে থাকে আলাদা উত্তেজনা। শিশুপ্রহরে রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিশুরা মা-বাবার সাথে সিসিমপুর দেখতে আসে। বই কেনার পাশাপাশি সিসিমপুরই যেন পুরো শিশুপ্রহর মাতিয়ে রাখে। সামনে জায়গা না পেলে বাবার কাঁধে ওঠে, মায়ের কোলে বসে সিসিমপুরের সাথে আনন্দে মেতে ওঠে আগতরা। কিন্তু এবার ফাঁকা পড়ে আছে সিসিমপুরের স্টেজ বানানো সেই জায়গাটি। সেখানে বসেনি কোনো বইয়ের স্টলও। বইমেলায় ঢুকেই শিশুরা প্রথমে সে দিকে গেলেও ফিরে আসতে হচ্ছে হতাশ হয়ে। তবে সিসিমপুর না থাকার বিষয়ে বইমেলার সদস্য সচিব সরকার আমিন জানান, সিসিমপুর এবার আবেদনই করেনি; যে কারণে এ বছর সিসিমপুর রাখা হয়নি।
মেলায় শিশুদের প্রকাশনী কেবল শিশুচত্বরে নয়, আছে উদ্যানের অন্য অংশেও। শিশু চত্বরে আছে শব্দশিল্প প্রকাশন, ঝিঙেফুল, শিশুরাজ্য, ফুলঝুড়ি, পঙ্খীরাজ, শিশুবেলা, চিরন্তন প্রকাশ, শৈশব প্রকাশ, কাকাতুয়াসহ বিভিন্ন প্রকাশনী। আছে বাংলা একাডেমির শিশুতোষ বইয়ের স্টলও। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চের পাশে আছে শিশুতোষ বইয়ের প্রকাশনী ‘দোলন’।
মেলায় ‘ময়ূরপঙ্খী’ এনেছে তাহমিনা রহমানের ‘চকলেটের পাহাড়’, হাসান হাফিজের ‘পিঁপড়াবাহিনী ও ঘাসফড়িং’, ফারজানা তন্নীর ‘নতুন বন্ধু’, রাজিয়া সুলতানার ‘বাবির গাড়ি বুম বুম’।
এ দিকে গতকাল বিকেলে মেলায় চায়না বইয়ের স্টল পরিদর্শন করেন সাংস্কৃতিক উপদেষ্টা মোস্তফা সরওয়ার ফারুকী। এরপর ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘স্মরণ : গোলাম মুরশিদ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সামজীর আহমেদ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন স্বরোচিষ সরকার এবং গাজী মো: মাহবুব মুর্শিদ। সভাপতিত্ব করেন মোরশেদ শফিউল হাসান।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলন, গণহত্যা, জুলাই বিপ্লবের রক্তাক্ত দিনলিপি, সমন্বয়কদের বয়ানে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের নেপথ্যের ঘটনা, জুলাই শহীদদের বীরত্ব গাথা, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কিভাবে ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠে, শেখ হাসিনার পলায়ন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে সাংবাদিক ও গবেষক মুহাম্মদ নূরে আলমের গবেষণামূলক বই ‘৩৬ শে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে ৩৬ জুলাই থিঙ্কট্যাঙ্ক গ্রুপ। বইমেলায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ৯৬২ নম্বর স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে। বইয়ের মূল্য ৫০০ টাকা, তবে মেলা উপলক্ষে ২৫% ডিসকাউন্টে দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ০১৮৭৮৭১৬৮৭৪ নম্বরে সরাসরি অর্ডার করা যাবে।
জানা যায়, বইটিতে মোট ৫টি অধ্যায় রয়েছে।থবইটিতে শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের পতন, স্বৈরাচার হয়ে ওঠা ও তার পলায়ন নিয়ে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।থবইটিতে বিচার বহির্ভূত হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ব্যাপক ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ ও গণহত্যার বর্ণনা রয়েছে বিস্তারিতভাবে। জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের প্রকৃত মাস্টারমাইন্ড শেখ হাসিনা সে সম্পর্কেও বাস্তবধর্মী আলোচনা রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে বহুল আলোচিত আয়না ঘর নিয়েও রয়েছে একটি আলোচনা।থশান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের শপথ গ্রহণ নিয়ে একটি আলোচনা রয়েছে। জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হত্যাকাণ্ড নিয়েও রয়েছে আলোচনা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে ভারতের ভূমিকা ও পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ নিয়েও রয়েছে আলোচনা। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনে আমেরিকার হাত ছিল কি না তার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। জুলাই-আগস্ট ২০২৪-এর ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও গণহত্যার বাস্তবধর্মী ঘটনা নিয়ে বইটি রচিত হয়েছে। বইটির লেখক সাংবাদিক ও গবেষক মুহাম্মদ নূরে আলম বলেন, ‘৩৬ শে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ একটি বাস্তবধর্মী গবেষণামূলক বই। উত্তাল দিনে ছাত্র আন্দোলনের সময় একজন সংবাদকর্মী হিসেবে যা দেখেছি তাই লেখেছি। অনেক অজানা তথ্য রয়েছে বইটিতে। পাঠকরা বইটি পড়ে অনেক কিছুই জানতে পারবেন। তিনি বলেন, বইটি পাঠকদের জুলাই-আগস্টের উত্তাল দিনগুলোর কথা স্মরণ করিয়ে দিবে এটি আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। বইটির সম্পর্কে ঢাকা বিশ^দ্যিালয়ের আরবি বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল কাদির বলেন, বইটি জুলাই বিপ্লবের ও গণহত্যার প্রামাণ্য দলিল হবে। এই বইয়ের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম জেন-জি’র বিপ্লব, গণহত্যার বিবরণ এবং শত শহীদের বীরত্ব গাথার সম্পর্কে জানতে পারবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক সাদিক কায়েম বলেন, ‘৩৬ শে জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ বইটিতে পাঠক জানতে পারবেন মাত্র ৩৬ দিনে ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে কিভাবে ফ্যাসিস্ট হাসিনা পলায়নে বাধ্য হয়। এ বইটি জুলাই বিপ্লবের প্রামাণ্য দলিল। আগামীতে আর যেন ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে সেজন্য এই বইটি সবার পড়া দরকার।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা