আমার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড শুধু আমার মেয়েই জানে
- মনির হোসেন
- ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:০৯
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিভিশন সেলে বন্দী রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাবশালী এমপি মন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক ‘ভিআইপি বন্দী’। তাদের ওপর কারা কর্তৃপক্ষের চলছে কঠোর নজরদারি। শুধু তারা নন, তাদের সেলে কারারক্ষী থেকে ডেপুটি জেলার পদমর্যাদার যেসব কর্মকর্তা যাচ্ছেন, কতক্ষণ অবস্থান করছেন তার সবকিছু গেটের সামনে খোলা রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে তারপর যাওয়ার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে।
আইজি প্রিজনের এমন কঠোর নজরদারি করার নির্দেশনার মধ্যেই গত ৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সন্ধ্যার পর ওই কারাগারে আটক ‘ভিআইপি বন্দীদের’ একজন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব:) ফারুক খানের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডি থেকে একটি পোস্ট মুহূর্তে ভাইরাল হয়। আপলোড করা ওই পোস্টে ফারুক খান আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিয়ে কিছু বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।
এটা কি আসল কারাবন্দী ফারুক খানের স্টাট্যাস? নাকি নকল ফারুক খানের স্ট্যাটাস? নাকি তার ওই ফেসবুক আইডি অন্য কেউ ব্যবহার করে দিয়েছে এটি জানতে শুরু হয় দৌড়ঝাঁপ। সাধারণ পাবলিকের নানা মন্তব্যে নড়েচড়ে বসে কারা প্রশাসনও। কারা অধিদফতর তাৎক্ষণিক এ নিয়ে ওই দিন সন্ধ্যার পরই বিজ্ঞপ্তি পাঠানো হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। কারা অধিদফতরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শকের (উন্নয়ন) সই করা ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সোমবার ঋধৎঁশ কযধহ নামের ফেসবুক আইডির একটি পোস্টের স্ক্রিনশর্ট শেয়ার করে তা কারাগারে আটক সাবেক মন্ত্রী কর্নেল (অব:) ফারুক খান কর্তৃক প্রচার করা হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
কারা কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করছে যে, কারাগার থেকে এই ধরনের প্রচার বা ফেসবুক চালানো কোনো মতেই সম্ভব নয়। এতে বলা হয়, বর্তমানে তিনি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। কারাগারে আটক কোনো বন্দীর পক্ষে মোবাইলফোন ব্যবহার করার সুযোগ নেই। তবে অন্য কেউ বা তার আত্মীয়স্বজন ঋধৎঁশ কযধহ নামের আইডিটি পরিচালনা করছে কি-না তা কারা অধিদফতর জানে না। বিষয়টি অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করা হয়েছে। এমন আলোচিত ঘটনার পর প্রায় এক সপ্তাহ অতিবাহিত হতে চলেছে। দু’দিন আগে কারা অধিদফতরের একটি দায়িত্বশীল সূত্র নয়া দিগন্তের প্রতিবেদকের কাছে এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ফারুক খানের স্ট্যাটাস নিয়ে আরো জানতে পরবর্তীতে আমাদের কারা কর্মকর্তারা ফারুক খানের সাথে কথা বলেছেন। তার কাছে স্পর্শকাতর বিষয়টি সম্পর্কে আরো কোনো আপডেট তথ্য আছে কি-না তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কারাগারে আসার পর আমার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি আমি তো বাসায় রেখে এসেছি। এরপর থেকে আমার ফেসবুক আইডিটিও পুরোপুরি বন্ধ থাকার কথা। এখন আমার ওই মোবাইলফোন দিয়ে কেউ ফেসবুক ব্যবহার করছে কি-না তা আমার এখান থেকে জানার কথা নয়। তবে আমার মেয়ে ছাড়া আমার ফেসবুক আইডি নম্বর অন্য কারো ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নাই। কারণ আমার ফেসবুক আইডির পাসওয়ার্ড শুধু জানে আমার মেয়েই, অন্য কেউ না। ফারুক খানের এমন বক্তব্যের পর কারা কর্তৃপক্ষ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন, ফারুক খানের ফেসবুক আইডি হ্যাকড করে কেউ এমন বিভ্রান্তিমূলক পোস্ট দিতে পারে। আবার না-ও পারে। আমরা আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে সব তথ্য দিয়েছি। তবে তদন্তে কী পাওয়া গেছে তা আমরা আর জানতে পারিনি। উল্লেখ্য, গত ১৫ অক্টোবর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকেই তিনি কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দী আছেন।
ফারুক খানের ফেসবুক আইডি পোস্টে যে কথা ভাইরাল হয়
‘অনেক চেষ্টা করে অনলাইনে এসেছি। জেলের চার দেয়াল আমাদের নিজ সত্তার সামনে দাঁড় করায়। অনেক কিছু বলতে চাই, কিন্তু এখন সবই বলতে পারছি না। এতটুকুই বলব, শেখ হাসিনাকে নেত্রী মেনেছিলাম কিন্তু আজকে তার হঠকারিতার জন্যই আমাদের দলের এই পরিণতি। দলের নেতৃত্বে পরিবর্তন এবং সর্বস্তরে শুদ্ধি অভিযান ব্যতীত কোনো ধরনের রাজনীতিতে ফেরা উচিত হবে না। শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ আর চাই না, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ফেরত চাই। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু।’
এমন পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ঢাকা বিভাগের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে বলেছিলেন, কারাগারে আটক কোনো বন্দীর ব্যক্তিগত ফোন ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। তাই তার ফেসবুক চালানো এবং স্ট্যাটাস দেয়ার প্রশ্নই আসে না।
গতকাল কারা অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নয়া দিগন্তকে বলেন, বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনসহ প্রায় শতাধিক ভিআইপি বন্দী আছেন। তাদেরকে কঠোর নজরদারির মধ্যে আমরা রেখেছি। কারাগারে বসে যা ইচ্ছা তা করার দিন নাই। আমাদের আইজি প্রিজন স্যার কারা বিধির বাইরে কোনো বন্দীকে কোনো অন্যায় কাজ করার প্রশ্রয় দিবেন না। আমরাও তার নির্দেশনার বাইরে কোনো বন্দীকে বাড়তি সুযোগসুবিধা দেয়ার প্রশ্নই উঠে না। এক প্রশ্নের উত্তরে ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব ভিআইপি বন্দীকে আমরা পুরোটাই সিসি ক্যামেরার আওতার মধ্যে নিয়ে এসেছি। একই সাথে তারা যখন ডিভিশন সেল থেকে বাইরে বের হচ্ছেন, তখন তাদের গতিবিধি আমরা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছি। তাদের গেটের সামনে যারা ডিউটি করছে তাদের মধ্যে কেউ ভেতরে গেলে সেখানে ওই রক্ষী বা ডেপুটি জেলার কতক্ষণ অবস্থান করেছে তার নাম এবং পদবি রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করেই তারপর যেতে হবে। জ্যামার আরো শক্তিশালী করা হয়েছে। তারপরও শুনছি তারা যখন কারাগার থেকে আদালতে যাচ্ছেন তখন আদালতের বাইরে অথবা হাজতখানা থেকে তাদের মধ্য থেকে কোন কোন বন্দী টিস্যু পেপারে চিরকুট লিখে সাপ্লাই দিতে পারছেন বলে মাঝে মধ্যে শুনছি। ওই কর্মকর্তা বলছেন, তাদেরকে এখন এমনভাবে নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে, তাদের ওখানে কোনো কিছুর শব্দ হলে সেটিরও ‘নোটিফিকেশন’ আমাদের কাছে সাথে সাথে চলে আসছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা