০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৫ মাঘ ১৪৩১, ৮ শাবান ১৪৪৬
`

৩২ নম্বরের ধ্বংসস্তূপের সামনে উৎসুক জনতা

-

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে গুঁড়িয়ে দেয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ঘিরে এখন উৎসুক মানুষের ভিড়। ইতোমধ্যে বাড়িটির অর্ধেকের বেশি অংশ ভেঙে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করা হয়েছে। তবে বাকি অংশ আর ভাঙা হচ্ছে না। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়ার দুই দিন পর গতকালও সেখানে ভিড় করেন শত শত উৎসুক মানুষ। একইভাবে ধানমন্ডির সুধা সদনেও ভিড় লেগে ছিল।
এ দিকে জনতার ভিড়ের মধ্যেই টোকাই ও নিম্নআয়ের লোকদের খুলে পড়া রড, লোহালক্কড় ও পোড়া গাড়ির অংশগুলো নিয়ে যেতে দেখা যায়। এদের মধ্যে গতকাল দুপুরে রড কাটতে গিয়ে বাড়ির দোতলা থেকে পড়ে এক ব্যক্তি গুরুতর আহত হয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যেভাবে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় নিম্নআয়ের মানুষগুলো বিধ্বস্ত বাড়ি থেকে রড ও লোহালক্কড় নিয়ে যাচ্ছে তাতে আরো দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ ছাড়া বাড়িটির তিনতলার সামনের অংশ অনেকটা ঝুলন্ত অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। যেকোনো সময়ে ধসে পড়লে বড় ধরনের প্রাণহানি ঘটতে পারে।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিন সকাল থেকে ঘটনাস্থলে উৎসুক মানুষের ভিড় দেখা যায়। এদের মধ্যে অনেকেই এসে খোঁজ করছেন যে এখানের আয়নাঘর কোথায়? ৩২ নম্বর বাড়ির পূর্ব দিকে রাস্তার সাথে ভূমি থেকে কংক্রিটের পিলার, ছাদ ও সিঁড়ি দেখা যায়। তিনতলার জন্য পিলারগুলো ছাদ ছাড়াই দাঁড়িয়ে আছে। ওই ভবনটির বেজমেন্টে বৃহস্পতিবার রাতে উৎসুক জনতা আয়নাঘর থাকার ধারণার কথা বলেছে। এটি নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। সেটি জানতে পেরে গতকাল সকাল থেকে ওই ভবন ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় লেগে যায়।
গতকাল সকালে ওই ভবনে দাঁড়িয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় কলাবাগান থেকে আগত হুমায়ন কবীরের সাথে। তিনি বলেন, শুনেছি ৩২ নম্বর বাড়ির নিচে নাকি আয়নাঘর আছে। এসে দেখি নির্মাণাধীন বাড়ির নিচে বেজমেন্টের চারটি ফ্লোর রয়েছে। গ্রাউন্ড ফ্লোর থেকে সিঁড়ি দিয়ে বেজমেন্টের প্রথম ফ্লোরের নিচে নামতেই চার দিক পানিতে ভরে গেছে। রীতিমতো যেন একটা পুকুর হয়েছে। এখানেই নাকি আয়নাঘর পাওয়া গেছে। আসলে বেজমেন্টের তিনটি ফ্লোর পানিতে ডুবে গেছে। পানি কোথা থেকে এসেছে তা তিনি জানেন না। এরকম অনেকেই আয়নাঘর দেখতে এসে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, ভাঙা কংক্রিটের স্ল্যাব থেকে করাত দিয়ে রড কেটে নিচ্ছেন এক ব্যক্তি। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত তিনি ৬ কেজি রড কেটেছেন। এত রড কী করবেন জানতে চাইলে বললেন, বাজারে বিক্রি করবেন। সেই টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো কিছু খাবেন। কী করেন জানতে চাইলে বলেন তিনি দিনমজুর।

বাড়িটির পেছনের পাঁচতলা ভবনের ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে লোহালক্কড় খুঁজে বের করছেন এক নারী। সেসব লোহালক্কড় তিনি সাথে আনা ব্যাগের ভেতরে ঢোকান। কী করবেন জানতে চাইলে বলেন, এসব লোহালক্কড় তিনি ভাঙ্গারি দোকানে বিক্রি করে দেবেন। ৩২ নম্বরের বাড়িটির ধ্বংসস্তূপ থেকে অনেকেই রড, লোহালক্কড় ও ইট নিয়ে যাচ্ছেন। তাদের বেশির ভাগই দরিদ্র। সকাল থেকে ৩২ নম্বরের বাড়িটি আর ভাঙার কাজ দেখা যায়নি।
এ ছাড়া ৩২ নম্বর বাড়ির পেছনে উত্তর-পূর্ব দিকের কোণায় গাড়ির শেডে থাকা অন্তত আটটি গাড়ি পুড়ে কঙ্কাল হয়ে গিয়েছিল। পুড়ে যাওয়া এসব গাড়ির প্রায় সব অংশই নিয়ে গেছে নিম্নআয়ের মানুষেরা। গতকাল সকালে সর্বশেষ একটি মাইক্রো বাসের পোড়া অংশ পিকআপ ভ্যানে করে তুলে নিয়ে যেতে দেখা যায়।
অন্য দিকে ভাঙা বাড়িটি ঘিরে দেখা গেছে উৎসুক মানুষের ভিড়। তাদের অনেকেই ভাঙা বাড়ির ভেতরে ও আশপাশে ঘুরে দেখছেন। সেলফি তুলছেন। ৩২ নম্বর সড়ক দিয়ে যারা যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই গাড়ির গতি কমিয়ে জানালা দিয়ে বাড়িটি দেখছেন। বেলা বাড়ার সাথে সেখানে মানুষের ভিড়ও বাড়ে। কয়েকজনকে হাতুড়ি দিয়ে কংক্রিটের বড় স্ল্যাব ভেঙে রড বের করে আনতে দেখা গেছে। একদল মানুষ করাত দিয়ে সেই রড কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। কাউকে বাড়িটির ইট নিয়ে যেতেও দেখা গেছে।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতা প্রচারের ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা বুধবার রাতে ধানমন্ডির ওই বাড়ি ঘিরে ব্যাপক বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে বাড়িটিতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার রাতেই ক্রেন, এক্সকাভেটর এনে বাড়ি ভাঙার কাজ শুরু হয়। পরে রাতেই যুক্ত হয় বুলডোজার। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত নীল রঙের এক্সকাভেটর দিয়েই ভাঙার কাজ করা হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল