০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪২৩১, ৬ শাবান ১৪৪৬
`

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের পেট্রলপাম্প ধর্মঘটে ভোগান্তি

-


রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের পেট্রলপাম্পগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট গতকাল শুরু হয়েছে। পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ অনুযায়ী, নওগাঁয় নোটিশ ছাড়া একটি পেট্রলপাম্প উচ্ছেদ করেছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। এর প্রতিবাদে ধর্মঘট ডাকা হয়। কিন্তু সড়ক ও জনপদ বিভাগ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে এবং উচ্ছেদের আগে মাইকিং করা হয়েছে। এ ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবহন মালিক, শ্রমিক, যাত্রী, মোটরসাইকেলচালক ও সেচপাম্পের মালিকরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।
রংপুর ব্যুরো জানায়, পূর্ব ঘোষণা, নোটিশ ও আনুষ্ঠানিকভাবে না জানিয়ে নওগাঁয় সড়ক ও জনপথ বিভাগের পেট্রলপাম্পে উচ্ছেদ অভিযানের অভিযোগে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের পেট্রলপাম্পগুলোতে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট করছে পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বলেছে, পত্রিকায় গণবিজ্ঞপ্তি ছাড়াও মাইকিং করে জানানো হয়েছে। ধর্মঘটে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবহন মালিক শ্রমিক ও বাইকচালকরা। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিসট্রিবিউটরস, এজেন্ট অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের প্রায় ৮০০ পেট্রলপাম্পে সকাল ৮টা থেকে অকটেন পেট্রল ও ডিজেল উত্তোলন এবং সরবরাহ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ আছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, ধর্মঘটের কারণে সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন বাইকচালক ও পরিবহন শ্রমিকরা। পেট্রলপাম্পগুলোতে বাইক, কার, মাইক্রো, পিকআপ, ট্রাক, বাস থামিয়ে ভিড় করছেন চালক ও শ্রমিকরা। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না জ্বালানি। এতে গন্তব্যে পৌঁছতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিশেষ করে অফিসগামীরা পড়েছেন বিপাকে।

রংপুর মহানগরীর শাপলার ইউনিক পেট্রলপাম্পে সকাল সোয়া ৮টায় কথা হয় পীরগাছাগামী একটি সরকারি অফিসের কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাথে। আমি এই পাম্প থেকেই তেল নিয়ে যাতায়াত করি। এখন বাইকেও পেট্রল নেই। অফিসেও যেতে হবে। ধর্মঘটের বিষয়টা আমার জানা ছিল না। বিপদে পড়লাম। কিভাবে কি করি। পরে তাকে বাইক ঠেলে সামনের দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেল।
গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় এক প্রেসবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটরস, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগের সভাপতি মো: মিজানুর রহমান রতন ও সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল জলিল জানান, নওগাঁ জেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ কোনো ধরনের পূর্বঘোষণা, নোটিশ বা আনুষ্ঠানিক চিঠি না দিয়ে আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল সকাল ৮টা থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব পেট্রলপাম্প মালিককে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন-বিপণন বন্ধ এবং পরিবহন ধর্মঘট পালনের আহ্বান জানানো হলো।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নওগাঁর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী নূরে আলম সিদ্দিক নয়া দিগন্তকে জানান, উচ্ছেদ করা হয়েছে সান্তাহারে। ওই এলাকাটি বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের। কিন্তু ভুল করে নওগাঁ বলা হচ্ছে। আমি যতদূর জানি নোটিশ মাইকিংসহ যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হয়।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আসাদুজ্জামান নয়া দিগন্তকে জানান, হাইওয়ের পাশে উচ্ছেদ অভিযানের নিয়ম মেনে আমরা উচ্ছেদ করেছি। উচ্ছেদ করার আগে গত ২৪ জানুয়ারি পত্রিকায় আমরা গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। এরপর সেখানে লাগাতার মাইকিং করা হয়েছে। সুতরাং নোটিশ না দেয়া, ঘোষণা না দেয়া আনুষ্ঠানিকভাবে না জানানোর অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং সরকারকে বেকায়দায় ফেলার কৌশল। তিনি বলেন, যেখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে সেখানে সরকারের ৯০ শতক জমি আছে। আমরা সেখানে সবারটা উচ্ছেদ করেছি। কিন্তু ওই পেট্রলপাম্প মালিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার কারণে তিনি জনগণকে ভোগান্তিতে ফেলতে এই ধর্মঘট ডেকেছেন।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, কুড়িগ্রামে ধর্মঘট ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন মালিকরা।

সড়ক জনপথ বিভাগের উচ্ছেদ অভিযানের প্রতিবাদে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের সব পেট্রোলপাম্পে অনির্দিষ্টকালের জন্য তেল উত্তোলন, বিপণন ও পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ডিলার্স, ডিস্ট্রিবিউটর্স, এজেন্টস অ্যান্ড পেট্রলপাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন।
পাম্প বন্ধ থাকায় তেল না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন পেট্রলনির্ভর বিভিন্ন যানবাহনের চালকরা, সেই সাথে কৃষকরাও পড়েছে বিপাকে। খোলাবাজারে বেশি দামে ডিজেল কিনে চালাতে হচ্ছে পাম্প।
পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি জানান, পঞ্চগড় পেট্রলপাম্পের মালিকরা পেট্রল, ডিজেল ও অকটেন বেচাবিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন পরিবহন মালিক, শ্রমিক, মোটরসাইকেল চালকসহ অন্য সাধারণ গ্রাহকরা।
জেলার পেট্রল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু হিরন বলেন, আমাদের পুরনো একটি ফিলিং স্টেশনে নোটিশ ছাড়াই বন্ধ করা হয়েছে। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে রাতেই তেল উত্তোলন, বিপণন এবং পরিবহন ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ জন্য আমরা গ্রাহকদেরকে নোটিশ দেয়ার সুযোগ পাইনি। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সব ধরনের পেট্রলপাপে¥ জ¦ালানি তেল উত্তোলন, বিপণন এবং পরিবহনে ধর্মঘট চলছে।
শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় জ¦ালানি তেল সরবরাহ এবং সব পেট্রলপাম্প বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় পেট্রলপাম্প মালিক ও শ্রমিক ঐক্য পরিষদ। জেলার শাহজাদপুরের বাঘাবাড়ির পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা তেল ডিপো থেকে কোনো তেল উত্তোলন এবং সরবরাহ হচ্ছে না। ফলে তেল সঙ্কটে স্থবির হয়ে পড়েছে উত্তরবঙ্গের ১৬টি জেলা। ব্যাহত হচ্ছে চলতি ইরিগেশন প্রজেক্ট। সরেজমিন বাঘাবাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পেট্রলপাম্পগুলোর প্রধান ফটকে ঝুলছে তালা এবং সারি সারি দাঁড়ানো রয়েছে তেল বহনকারী ট্যাংকলরিগুলো।

উত্তরবঙ্গে তেলের পাম্প ধর্মঘট প্রত্যাহার
বগুড়া অফিস জানান, পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন নেতার অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার প্রতিবাদে রাজশাহী বিভাগে ডাকা পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে এই ধর্মঘট শুরু হয়ে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতিও কেন্দ্রীয় মহাসচিব এবং বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান রতন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ঢাকায় জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বৈঠক শেষে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এর পর থেকে পুনরায় পাম্পগুলোতে তেল বিক্রি শুরু হয়। গত মঙ্গলবার বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ বগুড়া-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কে আদমদীঘি উপজেলায় পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিলের মালিকানাধীন আনিকা পেট্রোল পাম্পের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে। এর প্রতিবাদে বুধবার সকাল থেকে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগে পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট আহ্বান করা হয়।

বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৪ জানুয়ারি সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে। সেই অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি মহাসড়ক সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের কাজ শুরু করা হয়।
বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, পেট্রোল পাম্পে জ্বালানি নিতে আসা যানবাহন চলাচলের জন্য সড়ক বিভাগের জায়গা পেট্রোল পাম্পগুলো ইজারা নিয়ে থাকে। কিন্তু বগুড়ার আদমদীঘিতে আনিকা পেট্রোল পাম্প সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে। সেই স্থাপনা উচ্ছেদ করায় তারা পেট্রোল পাম্প ধর্মঘট আহ্বান করে।
পেট্রোল পাম্প ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিভাগীয় সভাপতি ও বগুড়া জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান রতন বলেন, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে আগে থেকে কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি। আকস্মিক উচ্ছেদ অভিযানে পেট্রোল পাম্প মালিকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তিনি বলেন, আনিকা পেট্রোল পাম্প ছাড়াও আদমদীঘিতে আরো একটি পাম্পের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। তিনি জানান, লিজ কমানোর ব্যাপারে জ¦ালানি উপদেষ্টা আশ^াস দিয়েছেন। এর পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে পাম্পে তেল বিক্রি স্বাভাবিক করা হয়েছে। এ ছাড়া বগুড়া জেলা প্রশাসনের সাথেও একটা সভা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement