দুই দশক পর রাহুমুক্ত দারুল ইহসান ট্রাস্ট
- শাহেদ মতিউর রহমান
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৫
দীর্ঘ দুই দশক পর রাহুমুক্ত হয়েছে দারুল ইহসান ট্রাস্ট। সরকারের সবধরনের বিধিবিধান মেনে ১৯৮৬ সালে গঠিত বৈধ ট্রাস্টকে পাশ কাটিয়ে বিগত ২০০৬ সালে একটি কুচক্রী মহল কৌশলে অবৈধভাবে আরেকটি ট্রাস্ট গঠন করে কয়েক শ’ কোটি টাকার সম্পদ দখলে নেয়ার ‘পাঁয়তারা’ করেন সৈয়দ আলী নকি এবং তার সহযোগী অ্যাডভোকেট ফয়জুল কবির ও উসমান গনিদের একটি সিন্ডিকেট। অবশ্য সরকারের আইনে ওই সময়ে ট্রাস্ট আরজেএসসির অধীনে রেজিস্ট্রেশন করার কোনো বাধ্যবাধকতাও ছিল না। ফলে সঙ্গত কারণেই ১৯৮৬ সালের ট্রাস্টি বোর্ড রেজিস্ট্রেশন করার প্রয়োজনও ছিল না।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ ২০ বছর সাভারের গণকবাড়ি এবং ধানমন্ডির ৯/এ নং রোডের বাসা নং-২১-এর বিপুল অঙ্কের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি দখল করে নেন আলী নকির ওই সিন্ডিকেট। ১৯৮৬ সালের গঠিত বৈধ একটি ট্রাস্টকে তারা গোপন রেখে সরকারের সাথে আঁতাত করে একই নামে শুধু ঠিকানা পরিবর্তন করে অবৈধ আরেকটি ট্রাস্ট গঠন করা হয়। যদিও এই ট্রাস্ট আদালতের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত করে আদেশও দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে অবৈধ দখলদারদের রাহুম্ক্তু হয়েছে দারুল আহসান ট্রাস্ট পরিচালিত ধানমন্ডির আশরাফ চ্যারিটেবল, আছিয়া আশরাফ মহিলা মাদরাসা, গণকবাড়ির একটি হাফেজিয়া মাদরাসা এবং সাভারের শ্রীপুরের কাপড়ের মার্কেট ও তৎসংলগ্ন কাঁচাবাজার ও অন্যান্য স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পত্তি। অভিযোগ রয়েছে- ধানমন্ডির ৯/এ রোডের ২১ নং বাড়ির কিছু অংশ দখল করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পরবর্তী সময়ে মন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। নানক তার মেয়ের জন্য এই বাড়িতে দখল করে একটি আলিশান অফিসও তৈরি করে দেন। যদিও তিনি কোনো সময়েই বাড়ি বা অফিসের ভাড়া বাবদ একটি টাকাও কখনোই পরিশোধ করেননি। ৫ আগস্টের পর নানক পালিয়ে গেছেন।
এ দিকে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দারুল ইহসান ট্রাস্টের সেটেলার হিসেবে একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন ড. সৈয়দ আলী আশরাফ। তারই আন্তরিক চেষ্টা এবং ইচ্ছায় ১৯৮৬ সালে গঠন করা হয় দারুল ইহসান ট্রাস্ট। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর ১৯৯৩ সালে দেশের প্রথম প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় (১৯৯২ সালের আইন) হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়। পরপর তিন বিশিষ্ট ব্যক্তি (প্রেসিডেন্ট) যথাক্রমে আব্দুর রহমান বিশ্বাস, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন, অধ্যাপক বি চৌধুরী- তারা তিনজন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের পৃথক পৃথক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিতও ছিলেন। পরে অবশ্য সরকারের রোষানলে পড়ে বন্ধ করে দেয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভিন্ন সময়ে সাভারের গণকবাড়ির ক্যাম্পাসে পরিদর্শনে এসেছিলেন সৌদি পার্লামেন্টর তৎকালীন স্পিকার ড. ওমর আব্দুল্লাহ নাসিফসহ মিসরের খ্যতিমান শিক্ষাবিদ ড. সাফটি। তারা দু’জনেই সাভারের গণকবাড়িতে বিশ্বমানের মাদরাসা ক্যাম্পাস পরিদর্শন করে সেখানে আরবি ভাষা শিক্ষার ওপর শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য বিষয়েও সহযোগিতা করেছেন।
পরবর্তী সময়ে ড. সৈয়দ আলী আশরাফের ছোট ভাই সৈয়দ আলী নকি কৌশলে একটি সিন্ডিকেট করে আগের স্ট্রাস্টি বোর্ডের ঠিকানা পরিবর্তন করে গণকবাড়ি ঠিকানা ব্যবহার করে অবৈধভাবে আরো একটি স্ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে সব সম্পদ দখন করে নেন। তবে এখন দেশের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধেই একাধিক মামলার আদেশে ১৯৮৬ সালের মূল স্ট্রাস্টকেই বৈধ হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সব স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির দখলও প্রকৃত স্ট্রাস্টকে বুঝিয়ে দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ২০ বছর পর অবৈধ দখলমুক্ত হয়ে প্রকৃত মালিকদের হাতে দারুল ইহসান স্ট্রাস্ট ও এর সম্পত্তি ফেরত পেয়ে শিক্ষাঙ্গনে বিশেষ অবদান রাখছে দারুল ইহসান স্ট্রাস্ট পরিচালিত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।