মাথা ছাড়াই মুরগিটি বাঁচে আড়াই বছর
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৩৪
অবিশ্বাস্য মনে হলেও যুক্তরাষ্ট্রে একটি মুরগি মাথা ছাড়াই আড়াই বছর বেঁচে ছিল। ১৯৪৫ সালে দেশটির কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের ফ্রুইটাতে এমন ঘটনা ঘটেছিল।
সে সময় স্থানীয় বাসিন্দা ওলসেনের একটি পারিবারিক মুরগির খামার ছিল। এক দিন বাজারে নেয়ার জন্য তিনি মুরগি জবাই করছিলেন। এর মধ্যে একটি মুরগি আশ্চর্যজনকভাবে মাথা কাটার পরও দৌড়াচ্ছিল। ওলসেন ব্যাপারটিকে স্বাভাবিকভাবেই নেন। কারণ মুরগি জবাই করার কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত নড়াচড়া করে।
তাই বেশি কিছু না ভেবে ওলসেন মুরগিটিকে ধরে একটি বাক্সের মধ্যে রাখেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে পরের দিন সকালেও ওলসেন দেখতে পান মুরগিটি বেঁচে আছে। তিনি এই ঘটনায় কৌতূহলী হয়ে মুরগিটির নাম দেন তিনি ‘মাইক’।
মুরগির মস্তিষ্কের বেশির ভাগ অংশ মাথা ও চোখের পেছনে থাকে। যখন ওলসেন মাথা কাটার জন্য কোপ দেন তখন মাইকের মাথার সামনের বেশির ভাগ বিচ্ছিন্ন হলেও শ্বাস-প্রশ্বাস, হজম ও অন্যান্য শারীর বৃত্তীয় ক্রিয়াকলাপ নিয়ন্ত্রণের সাথে জড়িত মস্তিষ্কের অংশটি অক্ষত রয়ে যায়।
পরে তিনি মুরগিটিকে খাওয়ানোর কৌশল আবিষ্কার করেন। সেটির খাদ্যনালীতে ড্রপার দিয়ে পানি ও তরল খাবার দিতেন। পাশাপাশি সিরিঞ্জ দিয়ে গলা থেকে শ্লেষ্মা অপসারণ করতেন। এভাবে বেশ সুস্থ সবল শরীর নিয়েই বেঁচে ছিল মাইক। সে সময় মাইক এতটাই বিখ্যাত হয়ে উঠেছিল যে, টাইম ম্যাগাজিনও এটিকে নিয়ে প্রতিবেদন ছেপেছিল।
হোপ ওয়েড নামে একজন প্রবর্তক বিখ্যাত মুরগির কথা শুনে সেটি দেখতে আসেন। তিনি ওলসেনকে মুরগিটিকে সল্টলেকের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে রাজি করান যাতে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করতে পারেন যে সত্যিই কলোরাডোর ফ্রুটাতে একটি মাথাবিহীন মুরগি আছে।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পান মুরগিটির একটি কানের অংশ, জগুলার শিরা এবং মস্তিষ্কের বেস যা মোটর ফাংশন নিয়ন্ত্রণ করে সেটি অক্ষত রয়েছে। ফলে মাইক বেঁচে আছে। সেসময় সল্টলেকের স্থানীয় পত্রিকায় খবর ছড়ায় একটি মুরগি মাথা ছাড়াই বেঁচে আছে। ফলে মানুষ সেই মুরগিকে দেখতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
এ ঘটনায় ওলসেন বুঝতে পারেন, মাইক বিখ্যাত হতে যাচ্ছে! মানুষ এটিকে টাকা দিয়ে দেখতে আসবে। ফলে সল্টলেকে একটি ছোট সাইড শোয়েরও আয়োজন করা হয়েছিল মাইককে প্রদর্শনের জন্য। ঘটনার পরের ১৮ মাস বিভিন্ন মেলা, কার্নিভ্যাল ও অন্যান্য পাবলিক ইভেন্টে এই মস্তকবিহীন মুরগিটি প্রদর্শন করেন ওলসেন। এগুলো করে বেশ অর্থও কামান তিনি। সেসময় এই শোয়ের একটি টিকিট ছিল ০.২৫ ডলার, যা আজকের সময়ে প্রায় ২.৫০ ডলারের সমান। মাইক দিনে ৬০০ জন দর্শকের সাথে দেখা করত। মাইক শুধু লং বিচের সাইডশোইতেই নয় ফিনিক্স, অ্যারিজোনা এবং দক্ষিণ-পূর্ব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও গিয়েছিল। এ অবস্থায় ১৯৪৭ সালের ১৭ মার্চ অ্যারিজোনার ফিনিক্সে প্রদর্শনীর জন্য সফরকালে গলায় শ্লেষ্মা আটকে মারা যায় মাইক।