০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১, ৫ শাবান ১৪৪৬
`
গ্রন্থমেলায় প্রাণের উৎসব

স্বস্তির প্রাঙ্গণে অস্বস্তির ধুলো

গ্রন্থমেলায় প্রকাশিত সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ৬৯ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান ও জনমুক্তির প্রশ্ন; মির্জা তারেকুল কাদেরের নোয়াখালীর দাঙ্গা মহাত্মা গান্ধীর সফর ও তাঁর বিচিত্র জীবনাচার; ড. আহমদ আরমান সিদ্দিকীর ৩৬ জুলাই ২০২৪ এবং নাজিব ওয়াদুদের আধুনিক ফিলিস্তিনী সাহিত্য বইয়ের প্রচ্ছদ -

স্বস্তির গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে ধুলো এখন অস্বস্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গতকাল মেলার চতুর্থ দিনেও পুরো মেলা মাঠে ছিল ধুলোর রাজত্ব। এ নিয়ে ক্রেতা বিক্রেতারা প্রত্যেকেই বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। কর্তৃপক্ষ বলছেন, সকালে দুই প্রাঙ্গণে পানি ছিটানো হলেও মানুষ বাড়ার সাথে পানি শুকিয়ে ধুলো বেড়ে যাচ্ছে। চেষ্টা করেও তা নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতায় একটি পোস্টার ঘিরে সমালোচিত হয়েছে বাংলা একাডেমি। তবে এর দায় ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের হলেও বাংলা একাডেমিকেই দোষারোপ করেছেন পাঠক-সমালোচক। যদিও ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমি বিতর্কিত সেই পোস্টারটি প্রত্যাহার করে সে বিতর্কের অবসান করেছে।
গতকাল মেলার বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঘুরে দেখা যায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ধুলোয় একাকার। এ নিয়ে আগতরা বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিক্রেতারাও। তাদের ভাষ্য মেলায় পানি ছিটানোর জন্য ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে ধুলো নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় তা বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ধুলো থাকলেও তা ছিল অনেকটা সহায়ক। আগামী দু-একদিন পর মেলায় আর কোনো অব্যবস্থাপনা থাকবে না জানিয়ে মেলার সদস্যসচিব জানিয়েছেন, মেলায় কোনো অব্যবস্থাপনা হলে এর দায় বাংলা একাডেমির ওপরই আসে। যার জন্য বাংলা একাডেমি মেলার সৌন্দর্য বাড়াতে ও পরিবেশ সুন্দর রাখতে যা যা করার তারা তাই করবেন।
এদিকে একটি পোস্টার ঘিরে সমালোচনার মুখে পড়েছে বাংলা একাডেমি। যদিও ইতোমধ্যে সেই পোস্টার সরিয়ে নেয়া হয়েছে। তবে বাংলা একাডেমি বলেছে পোস্টারটি তারা তৈরি করেনি।
‘৫২ এর চেতনা ২৪ এর প্রেরণা’ স্লোগান লেখা বইমেলা উপলক্ষে তৈরি করা এই পোস্টার টিএসসি থেকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত পথে কয়েকটি জায়গায় লাগানো হয়। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের চেতনাকে উপস্থাপন করতে এখানে যে ছবি ব্যবহার করা হয়েছে, সেটি ১৯৭১ সালের ১৫ মার্চ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তোলা ছবি। শনিবার গ্রন্থমেলা উদ্বোধনের পর অনলাইনে এই পোস্টারের ছবির পাশে ১৯৭১ সালে শহীদ মিনারের সমাবেশের ছবি দিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ তোলেন কেউ কেউ।
পোস্টারে ব্যবহার করা ছবিতে দেখা যায়, স্লোগানসংবলিত প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বসে আছেন তরুণী, নারীরা। তাদের হাতের প্ল্যাকার্ডে লেখা ‘মা বোনেরা অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’। সেখানে বাঁশের লাঠি হাতে নিয়ে বসে থাকা তরুণী বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী ফেরদৌস হক লিনু।
এরপর বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সূত্রপাত হয়। ফেসবুকে লিনু হক নামে পরিচিত কাজী ফেরদৌস হক লিনুর পোস্টের নিচে এস এম শাহাদাত হোসেইন নামের একজন লেখেন, ‘ইতিহাস বিকৃতিকে ধিক্কার জানাই।’ আব্দুল্লাহিল কাইয়ুম নামের আরেকজন লেখেন, ‘ইতিহাস বিকৃতি আসলে ইতিহাস অস্বীকার।’ এ নিয়ে পৃথকভাবেও অনেকে ফেসবুকে পোস্ট দেন। এরপর বিষয়টি বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষের নজরে এলে তারা তা প্রত্যাহার করে নেন।
এ বিষয়ে একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রথম কথা এটা বাংলা একাডেমির পোস্টার না। তবে গ্রন্থমেলার পোস্টার। একাডেমির মেলার আয়োজকদের পক্ষ থেকে এটি বানানো হয়নি। অন্য একটি পক্ষ তৈরি করেছে। আমাদের কোনোভাবে দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। তবে আমরা জানার সাথে সাথে পোস্টারটি অপসারণ করা হয়েছে।’ পোস্টারে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের নাম আছে। তবে এটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ভুল বলে জানান এক কর্মকর্তা।
মেলায় এসেছে লেখক ও চিন্তাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান। এটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন। বিশিষ্ট চিন্তক ফরহাদ মজহারের লেখার সঙ্কলন নিয়ে প্রকাশিত হয়েছিল গণপ্রতিরক্ষা। দীর্ঘদিন বইটি আর পাওয়া যেত না। গুরুত্বপূর্ণ বইটি এবারের মেলায় নতুন করে এনেছে আগামী প্রকাশনী। ঐতিহ্য নিয়ে এসেছে ড. আহমদ আরমান সিদ্দিকীর ৩৬ জুলাই ২০২৪ ও নাজিব ওয়াদুদের (অনুবাদক) আধুনিক ফিলিস্তিনি গল্প।
গতকাল বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুমুদিনী হাজং’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মতিলাল হাজং এবং পরাগ রিছিল। সভাপতিত্ব করেন আবু সাঈদ খান।
নোয়াখালীর দাঙ্গা
প্রকাশিত হয়েছে মির্জা তারেকুল কাদের রচিত ‘নোয়াখালীর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা : মহাত্মা গান্ধীর সফর ও তার বিচিত্র জীবনাচার’। ১৯৪৬ সালের আগস্ট মাসে নোয়াখালীতে সংঘটিত হয়েছিল এক ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এর কিছুদিন পর দিল্লি থেকে মহাত্মা গান্ধী ছুটে এসেছিলেন নোয়াখালীর দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায়। উদ্দেশ্য ছিল হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা। দীর্ঘ চার মাসের এই সফরকালেই তিনি সম্পন্ন করেন তার বিখ্যাত পল্লী-পরিক্রমা; যা ছিল অনন্য বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। কিন্তু এই সফরকালেই তার কিছু কর্মকাণ্ড আজও প্রশ্নবিদ্ধ ও বিতর্কিত। সফরকালে গান্ধীজি কর্তৃক ইসলাম ধর্মের অপব্যাখ্যা, মুসলমানদের তীব্র আপত্তি ও বাদানুবাদ, মুসলিম নিধনস্থল বিহারে না যাওয়া, তার সাম্প্রদায়িক মনমানসিকতা, হিন্দুধর্মের আচার অনুষ্ঠানের ব্যাপক প্রচার, নারীপ্রীতি, নারীসঙ্গ ও যৌনচিন্তা, বিচিত্র জীবনাচার, রাজনৈতিক আদর্শ ও নীতির বিসর্জন, দ্বৈতনীতি প্রভৃতি বিষয়ে আলোকপাত করা হয়েছে তথ্য প্রমাণসহ। বইটিতে আরো আছে কলকাতা, নোয়াখালী ও বিহার দাঙ্গার সচিত্র ইতিহাস এবং গান্ধীজির জীবনী। বইটি ৮০ গ্রাম অফসেট কাগজে মুদ্রিত এবং চার কালারের জ্যাকেটসহ ২১৬ পৃষ্ঠার হার্ডবাইন্ডিং। ব্যতিক্রমধর্মী ও আকর্ষণীয় এই বইটির মূল্য ৪৮০ টাকা। একক ক্রেতারা পাবেন ২৫ শতাংশ কমিশন (পুস্তক ব্যবসায়ীদের জন্য আছে আকর্ষণীয় অফার)। যোগাযোগ : মির্জা তারেকুল কাদের, মোবা : ০১৭১৫৮২২৭৭৮।


আরো সংবাদ



premium cement