পৃথক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের প্রস্তাব বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের
- হাবিবুর রহমান
- ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:২৯
- ষ যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের বিচারকদের সমন্বয়ে আদালত গঠন করা যেতে পারে
- বিচারাধীন বিরোধগুলোকে মধ্যস্থতা বা বিকল্প পদ্ধতিতে নিরসনে কার্যকর বিধান করতে হবে
বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনের প্রস্তাব করেছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে- দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের নিরিখে সুনির্দিষ্ট কিছু জেলা আদালতে প্রয়োজন অনুসারে এক বা একাধিক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপন করা যেতে পারে। এই লক্ষ্যে যথাযথ বিধান সম্বলিত একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে, এবং দেওয়ানি কার্যবিধিসহ অন্যান্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।
এ দিকে চলমান বিচারিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। সম্প্রতি এ বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, চলমান বিচারিক সংস্কার কার্যক্রমের অংশ হিসেবে যেসব কার্যক্রম চলমান, তারই অংশ হিসেবে বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এ আদালতগুলো বাণিজ্যিক বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তিতে সহায়ক হবে। এর ফলে ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা সময়োপযোগী ও কার্যকর আইনি প্রতিকার পাবেন, যা বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াবে এবং বেশি পরিমাণে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করবে। তিনি আরো বলেন, এ উদ্যোগ বিচারব্যবস্থাকে পরিবর্তনশীল অর্থনীতির চাহিদার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে এবং বাংলাদেশকে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও বিনিয়োগবান্ধর গন্তব্য হিসেবে উপযোগী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
গত ১৮ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের যে সামারি প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে তাতে এ প্রস্তাব করা হয়েছে। আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে বলে কমিশনের সদস্য তানিম হোসেইন শাওন জানিয়েছেন।
পৃথক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন প্রস্তাবে বলা হয়েছে- সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট ১৮৮৭-এ নির্ধারিত যুগ্ম জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ারের (২৫ লাখ টাকার বেশি) আলোকে যুগ্ম জেলা জজ পর্যায়ের বিচারকদের সমন্বয়ে বাণিজ্যিক আদালত গঠন করা যেতে পারে এবং নিম্ন বর্ণিত বিষয়বস্তুগুলো বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারভুক্ত করা যেতে পারে, যথা : (১) ব্যবসা সংক্রান্ত লেনদেন, চুক্তি ও বাণিজ্যিক দলিলাদি থেকে উদ্ধৃত অধিকার ও দায়-দায়িত্ব।
(২) পণ্য বা সেবার আমদানি-রফতানি বা ক্রয়-বিক্রয়;
(৩) নির্মাণ সংক্রান্ত চুক্তি:
(৪) বীমা সংক্রান্ত বিষয়াদি।
(৫) মেধাস্বত্ব সংক্রান্ত বিষয়াদি
(৬) এজেন্সি ও ফ্র্যাঞ্চাইজি সংক্রান্ত বিষয়াদি;
(৭) সরবরাহ/বিতরণ ও লাইসেন্সিং সংক্রান্ত চুক্তি;
(৮) অংশীদারি চুক্তি;
(৯) প্রযুক্তি উন্নয়ন চুক্তি;
(১০) যৌথ উদ্যোগ বা শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে চুক্তি; এবং অন্যান্য বিষয়াদি, যা উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ বাণিজ্যিক আদালতের এখতিয়ারাধীন বলে নির্ধারণ করবে।
(ঈ) সালিস আইন সংশোধন করে সালিস সংক্রান্ত বিষয়াদি (আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিস ব্যতীত) বাণিজ্যিক আদালতের ওপর ন্যস্ত করা বাঞ্ছনীয়।
(উ) সিভিল কোর্টস অ্যাক্ট ১৮৮৭ সংশোধন করে বাণিজ্যিক আদালতের ডিক্রির বিরুদ্ধে হাইকোর্ট বিভাগে সরাসরি আপিল দায়ের করার বিধান করতে হবে।
(উ) অর্থঋণ আদালত আইনের অনুসরণে বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত আইনে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশের বিরুদ্ধে আপিল ও রিভিশনের বিধান রাখা যাবে না।
(খ) বাণিজ্যিক আদালতে বিচারাধীন বিরোধগুলোকে মধ্যস্থতা (মেডিয়েশন) বা অন্য কোনো বিকল্প পদ্ধতিতে নিরসণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে আইনে প্রয়োজনীয় কার্যকর বিধান করতে হবে।
(এ) বাণিজ্যিক আদালত থেকে উদ্ভূত বিষয়াদির নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্ট বিভাগেও এক বা একাধিক সুনির্দিষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন বেঞ্চ গঠন করতে হবে। হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ বিভাগীয় সদরগুলোতে স্থাপিত হওয়ার পর বিভাগীয় পর্যায়ে এ ধরনের বেঞ্চ গঠন করা যেতে পারে, যেন স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্যিক বিরোধগুলোর সহজ ও দ্রুত নিষ্পত্তি সম্ভবপর হয়।
(ঐ) বাণিজ্যিক বিরোধের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বিবর্তন সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট বিচারকদের হালনাগাদ তথ্য নিয়মিতভাবে অবহিতকরণ এবং যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আর্থিক খাতের সুব্যবস্থাপনা ও এ খাতের মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য এ ধরনের আদালতের প্রয়োজন আছে। তবে আমাদের নজর দিতে হবে মামলার উৎপত্তিস্থলে এবং সেখানেই সমাধানের চেষ্টা করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি মামলার উপত্তিস্থলে সমাধান খুঁজতে হবে। তিনি আরো বলেন, মিথ্যা ও ভুয়া মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতার অন্যতম কারণ। তিনি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা