আশুলিয়ায় আন্দোলনে নিহত ৪ জনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন

সাভারের আশুলিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার পর থানার ভেতরে ভ্যানে রেখে পুড়িয়ে দেয়া চারজনের লাশ আদালতের নির্দেশে গতকাল কবর থেকে তোলা হয়েছে। সকাল থেকে সাভার উপজেলার সহকারী কমিশনার-ভূমি (আশুলিয়া রাজস্ব সার্কেল) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আক্তারের নেতৃত্বে আশুলিয়া থানার পুলিশ শিল্পাঞ্চলের ভাদাইল পবনার টেক, বুড়িরবাজার আমবাগান কবরস্থান ও ইউনিক চাড়ালপাড়া এলাকার দরগারপার কবরস্থান থেকে লাশগুলো উত্তোলন করে।
এর মধ্যে ভাদাইল পবনার টেক থেকে তোলা হয়েছে আশরাফুল ইসলাম, ইউনিক চাড়ালপাড়া এলাকার দরগারপার কবরস্থান থেকে জাহিদুল ইসলাম সাগর (২৮), বুড়িরবাজার আমবাগান কবরস্থান থেকে আবুল হোসেন (৩৪) ও অজ্ঞাত পরিচয় আরেকজনের লাশ তোলা হয়।
নিহতদের মধ্যে আবুল হোসেন কুমিল্লার মুরাদনগর থানার ফুলঘর গ্রামের মনির মিয়ার ছেলে এবং জাহিদুল ইসলাম সাগর রংপুরের বদরগঞ্জ থানার হাটখোলা গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
লাশ উত্তোলন কাজে নেতৃত্ব দেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া আক্তার জানান, শনিবার সকাল থেকেই আদালতের নির্দেশে আমরা ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত চারজনের লাশ উত্তোলন করেছি। এর আগে নিহতের স্বজনেরা আদালতে মামলা দায়ের করলে আদালত লাশ উত্তোলনের নির্দেশ দেন। আমরা লাশগুলোর সুরতহাল শেষে ডিএনএ টেস্ট এবং ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

এ দিকে লাশ উত্তোলনের সময় কবরস্থানের পাশে নাবালক দুই সন্তান নিয়ে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলছিলেন নিহত আবুল হোসেনের স্ত্রী লাকি আক্তার। তিনি বলেন, আমরা স্বামী-স্ত্রী তৈরি পোশাক কারখানায় কাজ করতাম। আমাদের দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার পর আমি চাকরি ছেড়ে দিলেও আমার স্বামী ইপিজেডের শান্তা গার্মেন্টে চাকরি করত। পরে তার চাকরি চলে গেলে তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। আমার ছোট ছেলেটার ছয় মাস বয়স হওয়ার আগেই তার বাবা মারা গেলো। এখন দু’টি সন্তানকে আমি কিভাবে মানুষ করব। তিনি বলেন, গত ৫ আগস্ট আমার স্বামী বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এরপর তার লাশ থানার ভেতরে ভ্যানে রেখে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। আমার স্বামীর লাশটি ফিরে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন যায়গায় ঘুরেও কাজ না হওয়ায় আদালতে মামলা দায়ের করায় আজকে (শনিবার) লাশ উত্তোলন করা হচ্ছে। আমি চাই আমার স্বামীর লাশটি আমাকে বুঝিয়ে দেয়া হোক এবং দুই ছেলেকে নিয়ে চলার জন্য সরকার একটা ব্যবস্থা করে দিক। এ সময় আবুল হোসেনের বড় ছেলে পঞ্চম শ্রেণী পড়–য়া জুনায়েদ (১১) বাবার লাশটি এক পলক দেখার জন্য ুবারবার উঁকিঝুকি দেয়। বর্তমানে তার ছোট ভাই সাফওয়ানের বয়স এক বছর।

নিহত আবুল হোসেনের প্রতিবেশী ও আহমেদ ল কলেজের শিক্ষার্থী মো: সাদেক বলেন, আমি ও আবুল ভাই বাইপাইল নামাপাড়া এলাকার সাত্তার মণ্ডলের বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। ৫ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে তিনি বাসা থেকে বের হন। একপর্যায়ে আমরা মিছিল নিয়ে থানার কাছে গেলে পুলিশ গুলি করে। এ সময় আমরা জান বাঁচাতে পালাই। পরে জানতে পারি আন্দোলনে নিহত ছয়জনের লাশ থানার ভেতরে ভ্যানে রেখে আগুন দিয়ে জ¦ালিয়ে দেয়া হয়েছে।
স্থানীয় ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী মো: মোখলেছুর রহমান বলেন, আগুনে পোড়ানো লাশের ভিডিও দেখে আমি অনেক কান্না করেছি। কার লাশ এভাবে পোড়ানো হলো প্রথমে জানা যায়নি। পরে চারটি লাশের সাথে আইডি কার্ড থাকায় পরিবারের লোকজন তাদের লাশগুলো শনাক্ত করে নিয়ে যায়। এরা সবাই ছাত্র ছিল। বাকি দু’টি লাশের পরিচয় না পাওয়ায় ৬ তারিখ রাতে আমবাগান কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আশুলিয়া থানার ওসি মো: নূর আলম সিদ্দিকী জানান, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় গুলিতে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মধ্যে সুরতহালসহ ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়েছে বেশ কয়েকজনের। এদের মধ্যে অনেকের স্বজন থানায় ও আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। ফলে ওইসব মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে ও নিহতের পরিচয় শনাক্তে আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লাশগুলো কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।