রাশিয়ার যুদ্ধে ১০ বাংলাদেশীকে বিক্রি করেছেন আ’লীগ নেতা
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:৫৮
দালালের খপ্পরে পড়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার হয়ে ১০ বাংলাদেশীকে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন পালিয়ে বাংলাদেশ আসতে পারলেও বাকি ৯ জন যুদ্ধে অংশ নিতে বাধ্য হন। এর মধ্যে কবির রায়হান নামে একজন নিহত হয়েছেন বলে নয়া দিগন্তকে নিশ্চিত করেছেন রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা আকরাম হোসেন। তবে তার শ্যালক সোহান মিয়াসহ এখনো রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন ৮ বাংলাদেশী।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সোহানসহ বাংলাদেশী শ্রমিকদের রাশিয়ায় দালাল চক্রের হাতে তুলে দেয়ার নাটের গুরু ড্রিম হোম ট্র্যাভেল। এটি জননী গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। রাজধানীর বনানীর এফ ব্লকের ৪ নম্বর সড়কের ৪ নম্বর বাড়িতে এর কার্যালয়। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান নড়াইলের বাসিন্দা এম এম আবুল হাসান। তিনি নড়াগাতী থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি।
যেভাবে নেয়া হয় রাশিয়ায়
রাশিয়া থেকে পালিয়ে আসা আকরাম হোসেন নয়া দিগন্তকে জানান, গত অক্টোবরে রাজধানীর বনানীতে অবস্থিত ‘ড্রিম হোম ট্র্যাভেল’ নামক একটি প্রতিষ্ঠান রাশিয়ায় বাবুর্চির কাজের ভিসা দেয়ার কথা বলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১০ জনকে প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি পাঠায়। এরপর সৌদি আরব থেকে তাদের রাশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে গিয়ে বাংলাদেশী শ্রমিকরা জানতে পারেন, জনপ্রতি ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে রাশিয়ার একটি দালাল চক্রের কাছে তাদের বিক্রি করে দেয়া হয়েছে। রাশিয়ায় পৌঁছানোর পর তাদেরকে একটি চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করা হয়। এরপর আলাদা আলাদাভাবে নিয়ে কঠোর সেনা ট্রেনিং দেয়া হয়। মাসব্যাপী এই সেনা ট্রেনিংয়ে রাজি না হলে তাদের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হতো। ট্রেনিং শেষে পাঠানো হয় যুদ্ধে।
যেভাবে পালিয়ে আসেন আকরাম হোসেন
আকরাম হোসেন জানান, যুদ্ধে যেতে রাজি হননি। এ সময় রাশিয়ান যোদ্ধারা তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। তখন ওই সেনাদের তিনি জানান, যুদ্ধ করার জন্য রাশিয়ায় আসেননি। মেরে ফেললেও যুদ্ধে অংশ নেবেন না। পরে সেখানে থাকা এক সেনাকর্মকর্তা তাকে একটি রেলস্টেশনে ফেলে দিয়ে আসেন। এরপর আকরাম দালালকে ফোন দিয়ে দেশে ফিরিয়ে আনতে অনুরোধ জানান। তবে দালাল চক্রটি তার কাছে আরো ৬ লাখ টাকা দাবি করলে আকরাম তার বাড়িতে ফোন দেন। এরপর বাংলাদেশ থেকে তার পরিবার বিমানের টিকিট কিনে দিলে এক তুর্কি নাগরিকের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।
এ দিকে রাশিয়ায় আটকে থাকা বাকি ৮ বাংলাদেশীর জীবন হুমকির মুখে রয়েছে। তাদের পরিবারের আহজারিতে গতকাল প্রকম্পিত হয়েছে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব।
রাশিয়ায় আটকে পড়া যশোরের কোতোয়ালির জাফরকে (৩৫) ৪ বছরের ছেলে আল মুবিন প্রতিদিন বাবার ফিরে আসার ব্যাপারে জানতে চান খাদিজা আক্তারের কাছে। খাদিজা আক্তার নয়া দিগন্তকে বলেন, স্বামী জাফর ছাড়া পৃথিবীতে আমার কেউ নেই। আমার চার বছরের ছেলেটা প্রতিদিন জানতে চায় বাবা কবে আসবে? আমি কোনো উত্তর দিতে পারি না। আমার ২৮ মাসের একটি মেয়ে আছে। আমি তাদের নিয়ে কী করব বুঝতে পারছি না। আমি আমার স্বামীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
এ দিকে আকরাম হোসেনের শ্যালক সোহান (২৬) রাশিয়ায় আটকা পড়েছেন। যুদ্ধে অংশ নিতে হচ্ছে প্রতিদিন। সোহানের স্ত্রী সুষ্মিতা নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি সরকারের কাছে স্বামীকে ফিরিয়ে আনার জন্য সহযোগিতা চাই। আমার দেড় বছরের একটা বাচ্চা আছে। আল্লাহর কাছে বলি আমার বাচ্চাকে যেন তিনি অল্প বয়সে এতিম না করেন।
সোহানের মা রুনা বেগম নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার স্বামী এ পৃথিবীতে নাই। সোহান আমার একমাত্র ছেলে। তার আয়ে আমাদের সংসার চলে। আমাদের ভালো রাখার জন্য সে বিদেশ গিয়েছিল। আমার ছেলেকে নিয়ে প্রয়োজনে না খেয়ে থাকব, শুধু আমার বুকের মানিকটাকে আমার কাছে ফিরিয়ে দেয়া হোক।
রাশিয়াতে আটকে পড়া আরেক বাংলাদেশী ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার বাসিন্দা মো: আমিনুল। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে উভয় শিশু। আমিনুলের স্ত্রী জুমা আক্তার নয়া দিগন্তকে বলেন, আমি স্বামীকে ফেরত চাই। সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই আমার স্বামীকে ফিরিয়ে আনতে সহযোগিতা করুন।
তিনি বলেন, আজ আমরা বড় অসহায়। সরকারের সহযোগিতা ছাড়া আমরা এই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারব না। আল্লাহরাস্তে আমাদের একটু সহযোগিতা করুন।
নরসিংদীর মোবারকও (২৮) দালালের খপ্পরে পড়ে এখন রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছেন। পরিবার মোবরককে ফেরত পাওয়ার আশায় পথচেয়ে প্রতীক্ষা করছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, আমরা আর্মি ক্যাম্পে বাবুর্চি হিসেবে পাঠিয়েছি। ওখানে নিয়ে তাদের দিয়ে যুদ্ধ করানো হবে বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা