০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১, ১ শাবান ১৪৪৬
`
চট্টগ্রামের তাফসিরুল কুরআন মাহফিল

‘আল্লাহ প্রদত্ত আদেশ নিষেধ মেনে চললে সুখী সমৃদ্ধ সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব’

চট্টগ্রামের প্যারেড ময়দানে পাঁচ দিনব্যাপী তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের সমাপনী দিনে বক্তব্য রাখেন ড. মিজানুর রহমান আজহারী : নয়া দিগন্ত -


আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ড. মিজানুর রহমান আজহারী বলেছেন, আল্লাহ কুরআনে তিনটি আদেশ ও তিনটি নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হলো- ন্যায় বিচার করা, একে অপরকে সম্মান করা ও নিকট আত্মীয়দের সম্পর্ক ছিন্ন না করা। আর তিনটি নিষেধ হলো অশ্লীলতায় না জড়ানো, ইচ্ছাকৃত মন্দ বা অসৎ কাজে না জড়ানো ও সীমালঙ্ঘন না করা। এই আদেশ-নিষেধ মেনে নিতে পারলে আমাদের সমাজ সুখী, সমৃদ্ধ হয়ে গড়ে উঠবে। আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে বিনা অপরাধে জেলে বন্দী রেখে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয়া হয়েছে। আল্লাহ উনাকে জান্নাতবাসী করুক।

গত রাতে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক প্যারেড ময়দানে (শহীদ রজব আলী ময়দান) ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদ চট্টগ্রাম আয়োজিত পাঁচ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের শেষ দিনে প্রধান মুফাসসিরের আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।
ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মাওলানা খাইরুল বাশারের সঞ্চালনায় এবং চট্টগ্রামের সভাপতি অধ্যক্ষ মুহাম্মদ তাহেরের সভাপতিত্বে মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন- ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। আরো বক্তব্য রাখেন- মাওলানা শামীম সাঈদী, মাওলানা বি এম মফিজুর রহমান, মাওলানা মুনিরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম, বিআইএ জামে মসজিদের খতিব সাফওয়ান বিন হারুন আজহারি, অলি খাঁ মসজিদের খতিব মাওলানা মাহমুদুল হাসান, বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ। মাহফিলে আখেরি মুনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সাইয়্যেদ আনোয়ার হোসেন তাহের জাবিরী আল মাদানী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, চট্টগ্রাম প্যারেড ময়দান বিশ্বনন্দিত মুফসসিরে কুরআন আল্লামা সাঈদীর স্মৃতিবিজড়িত। আমরা কুরআনের ছায়াতলে এক ও অভিন্ন। যেকোনোভাবে আমাদের এই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। মতবিরোধ নিয়েই আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকব। সব ধরনের ইসলামী দলের মধ্যে যদি আমরা ঐক্য ধরে রাখতে পারি তাহলে দেশ থেকে দুর্নীতি, লুটপাট ও চাঁদাবাজি, গুম, খুন দূর করতে পারব। ১৬ বছরের জঞ্জাল ছয় মাসে দূর করা সম্ভব না; কিন্তু আমরা চেষ্টা করছি, সংস্কারের মাধ্যমে একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেয়ার।
তিনি বলেন, আমারা আগামীতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করব। এ দেশে ন্যায় ও ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশে যদি সুখ, শান্তি ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে চাই তাহলে কুরআনের সমাজ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই।
ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি আলহাজ শাহজাহন বলেন, অর্ন্তবর্তী সরকার বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের সরকার। আপনারা হতাশ হবেন না, আমরা আপনাদের সাথে আছি। চট্টগ্রামের জনগণও আপনাদের সাথে আছে। তিনি কওমি ও সরকারি নিছাবের আলেমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়াও মাওলানা শামীম সাঈদী বলেন, আল্লামা দেলোওয়ার হোসেন সাঈদীকে ১৩ বছর জেলে জালেম শাসকেরা শান্তিতে থাকতে দেয়নি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করছি। কুরআনের রাজ কায়েম করার জন্য আল্লামা সাঈদী দেশের আনাচে-কানাচে গিয়েছেন। কুরআনের রাজ কায়েম করতে যদি আমাদের মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয় আমরা সেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করব।

মাওলানা বি এম মফিজুর রহমান বলেন, এ পৃথিবীতে যারা কুরআনকে বিদায় করতে চেয়েছে, তারাই বিতাড়িত হয়ে গেছে। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে আল্লাহর রাস্তায় কাজ করে যেতে হবে। পরস্পর বিভেদ সৃষ্টি করা যাবে না। অনৈক মতভেদ, বিভেদ সৃষ্টি করলে জালেমরা সুযোগ নেবে। আল্লাহ আমাদেরকে একটি নির্দিষ্ট অ্যাসাইন্টমেন্ট দিয়ে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহর বিধানকে দুনিয়ার জমিনে প্রতিষ্ঠা করতে হলে সব মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বক্তব্যে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমরা প্রথমত, আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহর খলিফা। যারা ভেতরে ও বাইরে পবিত্র নেক বান্দাদের আমাদের অন্তর্ভুক্ত করো। যারা জালেম তাদের লেজ কেটে দিয়েছে এবং এখন বান্দার দায়িত্ব আল্লাহর প্রশংসা করা।

বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক তাওহীদুল হক মিজবাহ বলেন, আল্লাহতায়ালা মানুষকে রক্ত পিণ্ড থেকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহতায়ালা মানব ও জিন জাতিকে আল্লাহতায়ালার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। নবী রাসূলগণকে জমিনের মধ্যে দ্বীন কায়েমের জন্য আল্লাহতায়ালা প্রেরণ করেছেন। আর আমাদেরকে নবী রাসূলদের ওয়ারিস বানিয়েছেন। আমাদেরকেও আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টা করতে হবে।
বিশিষ্ট ওয়ায়েজ সাফওয়ান বিন হারুন আজহারি বলেন, আমরা ধর্ম ব্যবসা করি না। ধর্মীয় অনুশাসনের ভিত্তিতে রাজনীতি করি। ইসলামকে ছাড়া রাষ্ট্র বাঁচতে পারে না। আর রাষ্ট্রকে ছাড়া ইসলাম বাঁচতে পারে না। তাই রাজনীতি আর ইসলাম সমান্তরাল।
বিশিষ্ট ওয়ায়েজ মাওলানা মাহমুদুল হাসান, ইসলামবিরোধী শক্তি রাসূল (সা:-কে বিভিন্নভাবে দ্বীনের দাওয়াত না দেয়া জন্য বাধা দিয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর রাসূল শত বাধা, যুদ্ধ পেরিয়ে ইসলামের কোনো একটা আইনকে অস্বীকার করলে ঈমান থাকে না। আল্লাহর সব বিধানের সাথে একনিষ্ঠভাবে ঐকমত্য পোষণের নাম হলো ঈমান।

মাহফিলে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাবেক এমপি মাওলানা আ ন ম শামসুল ইসলাম, বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের এন্তেজামিয়া কমিটির পৃষ্ঠপোষক মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, সাবেক এমপি ও তাফসিরুল কুরআন মাহফিলের এন্তেজামিয়া কমিটির পৃষ্ঠপোষক আলহাজ শাহজাহান চৌধুরী, আইআইউসির সাবেক প্রো-ভিসি ড. প্রফেসর আবু বকর রফিক আহমদ, অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ মির্জা, আবুল হোসেন, ইঞ্জিনিয়ার মোমিনুল হক, মাওলানা হারুনুর রশিদ, ডা: এ কে এম ফজলুল হক, অধ্যাপক নুরুল আমিন চৌধুরী, ড. আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ নুরুল আমিন, মাওলান এ বি এম সিদ্দিকুল্লাহ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, আনোয়ারুল আলম চৌধুরী, অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মোমেন, অধ্যাপক আবদুল আলিম, আলাউদ্দিন সিকদার, অধ্যক্ষ বদরুল হক, অধ্যক্ষ আ ন ম সলিমুল্লাহ, আলহাজ আফছার উদ্দিন চৌধুরী, প্রফেসর ড. শামীম উদ্দিন, প্রফেসর মাহবুবুর রহমান, ড. প্রসেফর আতহার উদ্দিন, সাংবাদিক মুহাম্মদ উল্লাহ, ফয়সল মুহাম্মদ ইউনুস, মোরশেদুল ইসলাম চৌধুরী, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর অধ্যক্ষ শামসুজ্জামান হেলালী, মাওলানা মমতাজুর রহমান, অধ্যক্ষ মাওলানা জাকের হোসাইন, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, সেলিম উল্লাহ জামান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আবদুস শাকুর ও মাওলানা মাহমুদুল হক, ছাত্রনেতা শহীদুল ইসলাম, আলাউদ্দিন আবির, ডা: সাদেক আবদুল্লাহ, তানভীর হোসেন জুয়েল, মুহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন রনি, মুহাম¥দ ইব্রাহিম খলিল, আমিরুল ইসলাম তুহিন, শওকত আলী, আবদুর রহিম প্রমুখ।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল