দুই বন্ধুসহ ৩ জেলায় প্রাণ গেল ৯ জনের

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল ময়মনসিংহে দুই বন্ধুসহ ৩ জেলায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন।
ময়মনসিংহ অফিস জানায়, ময়মনসিংহে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে মোটরসাইকেল আরোহী দুই বন্ধু নিহত হয়েছেন। শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে দিগারকান্দা বাইপাস মোড় এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নিতরা হলেন- নগরীর মাসকান্দা এলাকার বাবুল হোসেনের ছেলে আবির হোসেন (১৯) ও পুরোহিতপাড়া এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে মেহেদী হাসান (২০)।
স্থানীয়রা জানান, দুই বন্ধু আবির ও মেহেদী শহর থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক বাইপাস মোড় হয়ে দীঘারকান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় জিগাতলা নামক স্থানে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুইজনই গুরুতর আহত হন। পরে আশপাশের লোকজন তাদের ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: সফিকুল ইসলাম জানান, ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে লাশ তুলে দেয়া হবে। অটোরিকশাচালক পলাতক রয়েছে। তাকে গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
রংপুর ব্যুরো জানায়, রংপুরে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পাঁচটি সড়ক দুর্ঘটনায় পাঁচজন নিহত এবং ৩০ জন আহত হয়েছেন। অনিয়ন্ত্রিত গতি এবং ঘন কুয়াশার কারণে এই দুর্ঘটনা বলে জানিয়েছে পুলিশ। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৭টায় রংপুর-কুড়িগ্রাম আঞ্চলিক মহাসড়কের সাতমাথা চায়না সিনেমা হলের বাস ট্রাক ও মাহিন্দ্রার ত্রিমুখী সংঘর্ষে তিনজন নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন।

রংপুর মহানগর পুলিশের এডিসি (মিডিয়া) আশিক মাহমুদ জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা কুড়িগ্রামগামী পাভেল এক্সপ্রেস নামে নাইটকোচ ঘটনাস্থলে প্রথমে রংপুরগামী একটি ট্রাককে ধাক্কা দেয়। পরে ট্রাকটি ধাক্কা দেয় মাহিন্দ্রাকে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনজন। তাদের মধ্যে দুইজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন, কাশেম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের সেল্ফ প্রেজেন্টেটিভ (এসআর) রমজান আলী (২৯)। তিনি কুড়িগ্রামের উলিপুরের দারারপার এলাকার
মফিজুল হকের পুত্র। মৃত আরেকজনের নাম মোহাম্মদ শাহিন আলম সোহাগ (২৭)। তিনি কাউনিয়া উপজেলার শ্যামপুরের মঞ্জু মিয়ার পুত্র। এ ঘটনায় নিহত আরেকজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন মিলন বর্মণ নামের এক যুবক।
মৃত রমজান আলীর সহকর্মী সোহেল রানা জানান, অফিসে মিটিং এর জন্য উলিপুর থেকে রংপুর আসছিলেন রমজান আলী। পরশুদিন কথা হয়েছিল তার সাথে। এখন তার লাশ দেখতে হলো। দুর্ঘটনার সাথে জড়িত চালকদের বিচার দাবি করেন তিনি।
অন্য দিকে হাইওয়ে পুলিশের রংপুর জোনের এসপি মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম জানান, সকাল পৌনে ৮টার দিকে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের পীরগঞ্জ বড়দরগাহ হাইওয়ে ফ্লাইওভারের দক্ষিণ পাশে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে ছেড়ে আসা সাদিকা তালুকদার এন্টারপ্রাইজ রাস্তারপাশে যাত্রী নামাচ্ছিল। এ সময় ঘন কুয়াশার কারণে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেস পেছন দিক থেকে ধাক্কা দেয়। এতে দু’টি বাসই দুমড়ে মুচড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই মারা যায় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের পশ্মি মৌতলা খানাবাড়ি এলাকার মৃত সামদানি খানের ছেলে আসলাম খান (৪৫)। এ ঘটনায় দুই বাসের আহত হয়েছেন ২০ যাত্রী। তাদের মধ্যে ছয়জনকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এ দিকে রংপুর-বদরগঞ্জ সড়কের নব্দিগঞ্জে বাসের ধাক্কায় একজন পথচারী মারা গেছেন। তার নাম জানা যায়নি। এ ছাড়াও নগরীর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং তারাগঞ্জের কামারপুকুর এলাকায় দু’টি পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন।
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি জানান, কুষ্টিয়ার মিরপুরে পাথর বোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক ও এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অটোরিকশার আরো দুই যাত্রী। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে কুষ্টিয়া-ঈশ্বরদী মহাসড়কের মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া ঘোড়ামারায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত যাত্রীর নাম তানিয়া আক্তার (৩০)। আহতদের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকালে কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে যাওয়া একটি অটোরিকশা যাত্রী নিয়ে ভেড়ামারা উপজেলার দিকে যাচ্ছিল। অটোরিকশাটি মিরপুর উপজেলার রানাখড়িয়া ঘোড়ামারায় পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা একটি পাথর বোঝাই ডাম্প ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিকশাটি দুমড়ে মুচড়ে ঘটনাস্থলেই চালক ও এক যাত্রী নিহত হন।
কুষ্টিয়া চৌড়হাস হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সৈয়দ আল মামুন বলেন, লাশ উদ্ধার করে হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় পর ট্রাক রেখে চালক ও হেলপার পালিয়ে গেছে।