দাতাদের প্রতিশ্রুতিতে ভাটা
বাংলাদেশের দায় পরিশোধ ২৬.৪০ শতাংশ বেড়েছে- হামিদ সরকার
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৫
রাজনৈতিক সরকারের পতনের মাধ্যমে পটপরিবর্তনের পর উন্নয়ন সহযোগীদের আর্থিক প্রতিশ্রুতিতে চরম ভাটা পড়েছে। আগের বছরের ৬ মাসের (জুলাই-ডিসেম্বর) তুলনায় বর্তমান সময়ে প্রতিশ্রুতি ৬৭.১১ শতাংশ কমে গেছে। চলতি সময়ে ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার কম প্রতিশ্রুতি এসেছে। অর্থছাড়ও আগের বছরের তুলনায় কমেছে। তবে বাংলাদেশের দেনা পরিশোধ গত ছ’ মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়েছে ২৬.৪০ শতাংশ। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গতকাল হালনাগাদ প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের জন্য যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ছয় মাসে তার ২৫ শতাংশও আসেনি। ফলে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা বন্ধ রাখলে চাপটা আরো বেশি পড়বে। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, রুটিন কাজও নিয়মিত করতে পারছে না সরকার এখনো অস্থিরতা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডির প্রকাশিত তথ্য বলছে, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এডিপি বাস্তবায়নের জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে সহায়তা প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক হাজার ৮২ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এখানে চলতি অর্থবছরের বাজেটে সহায়তা প্রাপ্তির সরকারের লক্ষ্যমাত্রা হলো, আমেরিকা ও জাপান ২২২ কোটি ৩০ লাখ ডলার, বিশ্বব্যাংক ২৪৫ কোটি ৫০ লাখ ডলার, মধ্যপ্রাচ্য ৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার, জাতিসঙ্ঘ ১৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক ১৭৯ কোটি ৪০ লাখ ডলার, সমন্বয় এবং নর্ডিক ১৫ কোটি ১০ লাখ ডলার, ইউরোপ থেকে ১৭২ কোটি ৭০ লাখ ডলার, এশিয়া, জেইসি ও এফএন্ডএফ থেকে ২২৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার ধরা হয়েছে।
প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ছাড় : বাংলাদেশের অন্যতম বড় উন্নয়ন সহযোগী হলো এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটি ৭০ কোটি ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ছ’মাসে দিলো ১০৫ কোটি ২ লাখ ৭০ হাজার ডলার। বিশ^ব্যাংকের আইডিএ প্রতিশ্রুতির ৯১ কোটি ৪৫ লাখ ডলারের বিপরীতে দিয়েছে ৮০ কোটি ৯ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এআইআইবি ১৬ কোটি ডলারের বিপরীতে ৪ কোটি ৩১ লাখ ৮০ হাজার ডলার, জাপান ২৫ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার ডলারের বিপরীতে ৪৪ কোটি ১০ লাখ ৮০ হাজার ডলার, ভারত প্রতিশ্রুতি ছাড়াই ৭ কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার ডলার, চীন প্রতিশ্রুতি ছাড়াই ২৬ কোটি ৭৮ লাখ ১০ হাজার ডলার, রাশিয়াও প্রতিশ্রুতিহীন ৫৩ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার ছাড় করেছে। ভারত, চীন ও রাশিয়া পুরনো প্রতিশ্রুতি থেকে অর্থ ছাড় করছে। অন্যান্য দাতা দেশ ও সংস্থার দেয়া ২৭ কোটি ২০ লাখ ৫০ হাজার ডলার প্রতিশ্রুতির বিপরীতে ছাড় করেছে ৩২ কোটি ৫৩ লাখ ৬০ হাজার ডলার। ছ’মাসে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৬৭.১১ শতাংশ : চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর’২৪ পর্যন্ত প্রথম ছ’মাসে প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা এসেছে ২২৯ কোটি ৮৬ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছর একই সময়ে ছিল ৬৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। ফলে প্রতিশ্রুতি কমেছে ৪৬৯ কোটি ১২ লাখ ২০ হাজার ডলার (৬৭.১১ শতাংশ)। এ বছর প্রতিশ্রুতিতে অনুদানের পরিমাণ ২৮ কোটি ৯৭ লাখ ৯০ হাজার ডলার এবং ঋণ ছিল ২০০ কোটি ৮৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার।
কমেছে অর্থছাড় : আর উন্নয়ন সহযোগীরা অর্থ ছাড় করেছে জুলাই-ডিসেম্বর ছ’মাসে এ বছর মোট ৩৫৩ কোটি ২৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। যার মধ্যে অনুদান ২৭ কোটি ৬ লাখ ৪০ হাজার ডলার এবং ঋণ ৩২৬ কোটি ১৮ লাখ ১০ হাজার ডলার। যেখানে আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছাড় হয়েছিল ৪০৬ কোটি ৩৮ লাখ ৩০ হাজার ডলার। এর মধ্যে অনুদান ছিল ১৮ কোটি ২২ লাখ ডলার এবং ঋণ ৩৮৮ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার ডলার। ফলে গত বছরের তুলনায় অর্থছাড় ১৩.০৭ শতাংশ কম হয়েছে।
দায় পরিশোধ বেড়েছে : ইআরডির তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছর প্রথম ছ’মাসে উন্নয়ন সহযোগীদের সুদ ও আসল বাবদ ১৯৮ কোটি ১৭ রাখ ৮০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশ। যার মধ্যে আসল বাবদ ১২৩ কোটি ৪২ লাখ ২০ হাজার ডলার এবং ঋণের সুদ ৭৪ কোটি ৭৫ লাখ ৬০ হাজার ডলার। আগের বছর সুদাসলে পরিশোধ করা হয় মোট ১৫৬ কোটি ৭৮ লাখ ৪০ হাজার ডলার। এর মধ্যে সুদ বাবদ ৬৪ কোটি ১৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার এবং আসল দিতে হয়েছে ৯২ কোটি ৬১ লাখ ৮০ হাজার ডলার। ফলে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় পরিশোধ ২৬.৪০ শতাংশ বেড়েছে।
ইআরডির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিশ্রুতি কমলেও ছাড়করণ বাড়িয়েছে দাতাসংস্থাগুলো। তবে চলতি অর্থবছর সরকার বাজেটে প্রকল্প সহায়তা খাতে যে পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা পাওয়া কঠিন হবে। ফলে চলতি বছর উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনে (আরএডিপি) প্রকল্প সহায়তার আকার অনেক কমবে। মূলত বিদেশী সহায়তার প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন হার পটপরিবর্তনের আগ থেকেই কমেছে। সেটার এখনো শ্লথগতি। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নের গতির ওপর ঋণদাতাদের অর্থছাড় নির্ভর করে।
বিশ^ব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন গতকাল মুঠোফোনে বিদেশী সহায়তার প্রতিশ্রুতি কমে যাওয়া নিয়ে নয়া দিগন্তকে বলেন, সার্বিক পরিস্থিতির এখনো উত্তোরণ ঘটেনি। প্রকল্প বাস্তবায়ন ও প্রণয়নেও শ্লথগতি। যার কারণে সহায়তার পরিমাণ কমেছে। তবে আগামী ছ’মাসে স্বাভাবিকভাবে বাড়বে।