রোহিঙ্গা সহায়তা অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র
‘আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কসাই’- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪৩
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর নির্বাহী আদেশে আগামী ৯০ দিনের জন্য সব ধরনের বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি সাময়িকভাবে বন্ধ ঘোষণা করেছেন। তবে এ অবস্থার মধ্যেও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব অপূর্ব জাহাঙ্গীর।
গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এ সময় প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সুইজারল্যান্ডের দাভোস সফরের বিষয় তুলে ধরতে প্রেস উইংয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে গত ২১ থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত দাভোস সফর করেন প্রধান উপদেষ্টা। গত শনিবার তিনি দেশে ফিরেন।
অপূর্ব জাহাঙ্গীর বলেন, রোহিঙ্গাদের জন্য সাহায্য আমেরিকা বন্ধ করছে না, এ জন্য প্রধান উপদেষ্টা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, মার্কিন দূতাবাসের কর্মকর্তারা রোববার প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করে রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়েছেন।
এ দিকে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে এ বছর বড় আকারে আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার এ বছরই আন্তর্জাতিক সম্মেলন করবে। এতে ১৭০টি দেশ অংশ নেবে। রোহিঙ্গা ইস্যুতে আয়োজিত সম্মেলনের সহআয়োজক জাতিসঙ্ঘ।
আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশের কসাই : সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম পতিত স্বৈরাচার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বাংলাদেশের কসাই (বুচার অব বাংলাদেশ) বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, দেশের ছোট ছোট বাচ্চা, শিক্ষার্থী, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাওলাকে নির্দয়ভাবে খুন করা হয়েছে, তার অন্যতম কসাই তিনি। কামাল বাংলাদেশের কসাই (বুচার অব বাংলাদেশ)। যেসব মিডিয়া তার নিউজ করে তাকে কাভারেজ দিচ্ছে, তাদের মানটা বুঝা যায়।
মিডিয়ায় তার সাক্ষাৎকার প্রচারকে বড় রকমের আন্তর্জাতিক প্রোপাগান্ডা ক্যাম্পেইন বলেও উল্লেখ করেন প্রেস সচিব। তিনি বলেন, পৃথিবীর কেউ কোনো কসাইকে প্লাটফর্ম (মিডিয়া কাভারেজ) দেয় না। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাক্ষাৎকারের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বিগত সময় থেকে শুরু হওয়া গুজবের বিষয়ে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, যদি এটা আইনের ব্যত্যয় হয় তাহলে আইনি ব্যবস্থার বিষয় আছে।
ব্যবসায়ীদের নির্বাচনের দাবি প্রসঙ্গে প্রেস সচিব বলেন, ব্যবসায়ীদের জন্য বিনিয়োগের ভালো পরিবেশ দিয়েছি। বিদেশী বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাচ্ছে। তাদের কাজ হচ্ছে আমরা বাংলাদেশে বিনিয়োগে সঠিক পরিবেশ দিতে পারছি কি না। সেটা তাদের বড় কনসার্ন হওয়া উচিত।
প্রধান উপদেষ্টা ও উপদেষ্টারা পালিয়েছেন এমন গুজবগুলো কারা ছড়িয়েছে- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, যারা পালিয়েছেন তারাই ছড়াচ্ছে। শেখ হাসিনা পালায় না বলে, উনি পালালেন। ওনার চ্যালা-চামুন্ডারা এগুলো করছেন। প্রতিবার ওনি (প্রধান উপদেষ্টার বিদেশ সফর) আসলে এটা বলেন, এটা বলে যদি ওনারা মনে মনে সুখ পান, তা পেতে দেন।
দেশে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শফিকুল আলম বলেন, কারখানা খুলবে, বন্ধ হবে এটা প্রাকৃতিক নিয়ম। কিন্তু সরকার দেখে রফতানি বাড়ছে কি না। দেশের রফতানি সেপ্টেম্বরে বেড়েছে ৭ শতাংশ, অক্টোবরে ১৬ বা ১৮ শতাংশ, নভেম্বরে ২২ শতাংশ, ডিসেম্বরের ১৮ শতাংশের মতো। আমাদের গ্রোথ তো সেই রকম আছে। রফতানি বৃদ্ধি মানেই হচ্ছে নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হওয়া।
বন্ধ হওয়া কারখানার মালিকদের বিষয়ে তিনি বলেন, তাদের বেশির ভাগ মালিক পালিয়ে গেছেন। পুরো দায়টা আমাদের ওপর দিয়ে গেছেন। ব্যাংক থেকে যা যা ছিল তা চুরি করে পালিয়ে গিয়ে বেতন না দিয়ে মজা দেখতেছেন। ভাঙচুর করা হচ্ছে দুই-তিনটা কারখানা মিলেই। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাদের অবদান খুবই সামান্য। একদম কিছুই না। রফতানি তথ্যে সরকার কারসাজি করছে না জানিয়ে শফিকুল আলম বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রফতানির তথ্য কারসাজি করা হয়েছিল। এটা ওই সময়ে রিপোর্ট হয়েছিল।
শাহবাগে মাদরাসা শিক্ষকদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রেস সচিব বলেন, পুরো ঘটনার ফুটেজ আমাদের দেখতে হবে। দেখার পরে এটার ব্যাপারে মন্তব্য করতে পারব।
কবে নাগাদ পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা সম্ভব হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৈশ্বিকভাবে পাচারকৃত টাকা ফিরিয়ে আনা খুবই ধীরগতির (স্লো) প্রক্রিয়া। এটা নিয়ে যত দ্রুত মুভ নেয়া দরকার, তা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার করেছে। যে টাকা চুরি হয়েছে তা দেশের খেটে খাওয়া মানুষের টাকা, সেটা চুরি করে নিয়েছে শেখ হাসিনার চোরতন্ত্রের লোকজন। এটা যেভাবে হোক ফিরিয়ে আনব। এটার জন্য আমাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন প্রয়োজন, তা সবাই দিচ্ছে। টাকা ফিরিয়ে আনা আমাদের টপ প্রায়োরেটি। প্রধান উপদেষ্টা যাদের সাথেই বৈঠক করছেন, সেখানে বিষয়টি তুলছেন। সরকারের ঘোষণার পরেও মাজারে হামলার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, মাজার বাংলাদেশে একটি অন্যতম ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি। দেশের লাখ লাখ জনগণ মাজারে যান। তাদের ধর্মীয় অনুভূতিকে সম্মান করি। যারা মাজারে হামলা করবে, তাদের বিষয়ে সরকারে জিরো টলারেন্স। কোনোভাবে বরদশত করব না।
আসিয়ানের সদস্য হতে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের সমর্থন চান প্রধান উপদেষ্টা : প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে অংশীদারিত্ব বাড়াতে বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হতে আগ্রহী। এ লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সাথে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাদের সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম ও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রার সাথে আলাদা বৈঠক করেন। সেখানে বাংলাদেশের আসিয়ানে সদস্য হওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। অধ্যাপক ইউনূসের বরাত দিয়ে প্রেস সচিব বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন-আমরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অংশ। বাংলাদেশ আসিয়ানের সদস্য হতে চায়। রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানেও সহায়তা চাওয়া হয়।’
শফিকুল আলম বলেন, আসিয়ানের সদস্য হওয়া মানে বাংলাদেশের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচন হওয়া। ব্যবসা ও বিনিয়োগ বাড়বে, বড় বাজার উন্মুক্ত হবে। যদি সদস্যপদ পাওয়া যায়, তাহলে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য এর চেয়ে বড় সুখবর আর হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
প্রেস সচিব জানান, থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীর সাথে শিপিং জোরদারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মিয়ানমার আসিয়ানের সদস্য, তাই এই দুই দেশকে বলা হয়েছেÑ রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে সহায়তা করার জন্য। এখনো রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে বলে উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট বাংলাদেশের জন্য বড় চিন্তার বিষয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা