২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৩ মাঘ ১৪৩১, ২৫ রজব ১৪৪৬
`

লালমনিরহাটে জেগে ওঠা তিস্তার সাদা বালুর চরে ফসলের সমারোহ

লালমনিরহাটে জেগে ওঠা তিস্তার সাদা বালুর চরে ফসলের সমারোহ -


লালমনিরহাটে চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হয়ে পড়া তিস্তা নদীর বুকে জেগে ওঠা মরুভূমির মতো সাদা বালুতে ফসল ফলাচ্ছেন কৃষকেরা। ২০২৪ সালে কয়েক দফা বন্যার পানিতে ভারতে উজান থেকে ভেসে আসা পলি মাটি বালুতে পরে চাষাবাদের জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠেছে এসব চরাঞ্চল।
বন্যা ও নদী ভাঙনের ক্ষতি কাটিয়ে পলিযুক্ত সাদাবালুর চরে এখন চাষ হচ্ছে বাদাম, আলু, মিষ্টি আলু, ভুট্টা, তামাক, রসুন, পেঁয়াজ, মিষ্টি কুমড়াসহ অর্থকরী ফসলগুলো।
নদীতে পানি না থাকায় ডিজেল চালিত পানির পাম্প (শ্যালো) বসিয়ে সেচের পানি সংগ্রহ করে চাষাবাদ করছেন চাষিরা। তিস্তার বুকে জেগে ওঠা ধু-ধু বালু চরে কৃষকের এই সেচ নির্ভর চাষাবাদে ফসল উৎপাদন খরচ বেড়েছে কয়েক গুণ। এতে বাড়তি খরচে দুশ্চিন্তায় কৃষক। কিন্তু আশার কথা হচ্ছে, তিস্তার এই চরগুলোতে গ্রামের দামি জমির চেয়েও ফলন বেশি হচ্ছে, জমিহীন বর্গা চাষিরা গ্রামের জমির চেয়ে কম দামে চরের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে লাভবান হচ্ছেন এবং ১৫ থেকে ২০ ফিট ডিপ করলেই পানির ব্যবস্থা করতে পারছেন তারা।
গেলো বছরে সিকিমের চুংথাং বাঁধ ভেঙে একদিনে ভেসে যায় তিস্তা। তখন দুর্গতির কমতি না থাকলেও এখন তিস্তা পাড়ে খুশি। ওই বন্যায় স্মরণকালের সব থেকে ঘোলাটে পানি আসে। পানি কমে গিয়ে তিস্তার চকচকে বালুর ওপর ১ থেকে ৩ ফুট পর্যন্ত পলি জমেছে। আর এই পলিযুক্ত বালুতে অল্প সার, পানি ব্যবহার করেই তারা ফলাচ্ছেন ফসল। ইতোমধ্যে চরে চাষ করা আমনের ব্যাপক ফলন হয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদফতরের মতে, প্রায় ১০ হাজার হেক্টর চাষাবাদযোগ্য জমি আছে। প্রতিনিয়ত নতুন চরকে চাষযোগ্য করা হচ্ছে। যেখানে শুধু বালু আছে সেখানে বিকল্প ব্যবস্থা করে চাষের আওতায় আনা হচ্ছে। রবিশস্য, ধান, পাট, আলু, বাদাম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, মরিচ, ডাল এসব অর্থকরী ফসল চরাঞ্চলেই বেশি উৎপাদন হয়।

জেলার হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদরের তিস্তার চরে সবচেয়ে বেশি চাষাবাদ হচ্ছে, তবে সেচের অভাবে জেগে ওঠা চরের বৃহৎ অংশই চাষাবাদের বাইরে রয়েছে আর চাষাবাদ কৃত জমিতেও নদীতে পানি সঙ্কট থাকায় কৃষকরা শ্যালো ইঞ্জিন ব্যবহার করে সেচ কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
মরুভূমির মতো সাদা বালুতে সেচের মাধ্যমে পানি দেয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারো শুকিয়ে যায়, কৃষকদের দাবি তিস্তা খনন করে স্থায়ী প্রবাহমান পানির ব্যবস্থা করা।
তিস্তায় পানি থাকলে সোনালি ফসল ফলাতে তাদের কোনো বেগ পেতে হত না পরিত্যক্ত হাজার হাজার হেক্টর জমি চাষাবাদের উপযোগী হতো পানি না থাকায় তাদের এখন মরণদশা। ডিজেল কিনে ফসল ফলাতে তাদের ফসল ফলাতে হচ্ছে এতে খরচ বেড়ে যাচ্ছে কয়েক গুণ।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা ইউনিয়নের কৃষক মাহতাব আলী(৫৫) বলেন, তিস্তা সড়ক সেতুর পাশে তিস্তা নদীর বুকে ধু-ধু বালুচরে আলু ও লালশাক করেছেন। আলু খেতের পানির দরকার হওয়ায় তিনি নদীর বুকে শ্যালোমেশিন বসিয়েছেন। ফসলে সেচ পদ্ধতির বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, কয়েকজন কৃষক মিলে আমরা একটি শ্যালোমেশিন থেকে সেচের পানি সংগ্রহ করে ধু-ধু বালু চরে চাষাবাদ করছি।

কালীগঞ্জ উপজেলার মুন্সির বাজারে এলাকার কৃষক মো: নজরুল ইসলাম (৫৯) বলেন, তিস্তার পানি নেমে যাওয়ার পর জেগে ওঠা চরে নানা জাতের ফসল চাষ হয়। এবছর আমি পাঁচ একর জমিতে আগাম ভুট্টা লাগিয়েছি। চরের এসব জমিতে ভুট্টার ফলন অন্যান্য জমির চেয়ে অনেক বেশি ধানের চেয়ে ফলন বেশি ও দাম দ্বিগুণ হওয়ায় লাভবান হবেন বলে তিনি জানান।
চর অধ্যুষিত ভোটমারী ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি অফিসার মো: ফরিদুল ইসলাম বলেন, অনাবাদি পতিত জমিকে আবাদযোগ্য করার লক্ষ্যে উপজেলা সম্প্রসারণ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রণোদনার সহযোগিতা কৃষকদেরকে দিয়ে চাষাবাদে উদ্বোধন করা হচ্ছে,পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও পরামর্শ করা হচ্ছে চরের কৃষকদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খামারবাড়ি লালমনিরহাটের উপপরিচালক মো: শায়খুল আরেফিন বলেন, জেলায় তিস্তা ও ধরলা নদীর বিশাল চরাঞ্চলে প্রায় ২০ হাজার কৃষক বালুচরে বিভিন্ন ফসল উৎপাদন করছেন। আলু, ভুট্টা ও মিষ্টি কুমড়া উৎপন্ন করে চরের কৃষকরা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাচ্ছেন। সেচের জন্য ব্যয় কিছুটা বেশি বাড়লেও কীটনাশকের ব্যয় চরের চাষাবাদে কম লাগে। তিস্তা নদীতে পানিপ্রবাহ থাকলে তারা সেখান থেকে সেচের পানি সরবরাহ করে ফসল উৎপাদনে খরচ কমাতে পারতেন আমরা কৃষি বিভাগ থেকে চর কৃষকদের বালুচরে নানা ফসল উৎপাদনে কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে আসছি।

 


আরো সংবাদ



premium cement