২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`

প্রচণ্ড শীতে বাড়ছে রোগের প্রকোপ

ধোঁয়াটে কুয়াশায় ঢেকে যায় রাজধানীর পথ-ঘাট : নাসিম সিকদার -

অর্বউত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে চলছে মৃদুশৈত্য প্রবাহ। চুয়াডাঙ্গা ঢাকা পড়েছে ঘন কুয়াশায়। নেত্রকোনায় হিমেল হাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে। এই তিন জেলায় শীতজনিত রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাসপাতালগুলোতে শত শত রোগী ঠাণ্ডাজনিত জটিলতা নিয়ে ভর্তি হচ্ছে।
পঞ্চগড় জেলা প্রতিনিধি জানান, হিমালয়ের কাছাকাছি জেলা পঞ্চগড়ে কুয়াশায় ঢেকেছে চার দিক। চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা কমেছে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কোথাও সূর্যের দেখা মিলেনি। হেড লাইট জ্বালিয়ে সড়কে চলছে যান-বাহন। শীতে পঞ্চগড়ের মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে। এবার জলবায়ু পরিবর্তনে প্রকৃত রূপ বদলেছে। শীতজনিত রোগব্যাধি বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার সকাল ৯টায় তেতুঁলিয়া আবহাওয়া পর্যটনকেন্দ্রে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ এবং গতিবেগ ছিল ১১-১২ কিলোমিটার। আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে ৮ দশমিক ১ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে তাপমাত্রা বিরাজ করলে মৃদৃ শৈত্যপ্রবাহ হয়। সে হিসাবে এ এলাকার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ভোর থেকে কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে প্রকৃতি। হিম ঠাণ্ডায় কাতর হয়ে সাধারণ মানুষ জন মানবেতর জীবনযাপন করছে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে অসহায় মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ৯ ডিগ্রির ঘরে। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষ কাতর হয়ে পড়েছে। অসহায় গরিব মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। হিম বাতাসের কারণে মানুষজন শীতের কাপড় পরে চলাফেরা করছে। মানুষের পাশাপাশি শীতে কষ্ট পাচ্ছে প্রাণিকুল। ভ্যানচালক, পাথর শ্রমিক ও চা-শ্রমিক, দিনমজুর চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। শীত থেকে বাঁচার জন্য সাধারণ মানুষজন উপায় না পেয়ে গাছের পাতা, ঘষি, খড় কুটা জ্বালিয়ে ঠাণ্ডা কমানোর চেষ্টা করছেন। বাতাসের কারণে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। দিনমজুরসহ খেটে খাওয়া মানুষজন চরমভাবে বিপাকে পড়েছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাপাত করছেন। শিরিন বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। পঞ্চগড় আধুনিক হাসপাতালে শীতের কারণে বেড়েছে সর্দি, কাশি, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ নানা প্রকার রোগব্যাধি। সবচেয়ে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। দেখা যায়, গত ডিসেম্বরে পঞ্চগড় হাসপাতালে চার শত রোগী ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গা তিন দিন ধরে ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে। দেখা মিলছে না সূর্যের। আর হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত জেলার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
গতকাল সকাল ৯টায় চুয়াডাঙ্গায় ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ।

চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রকিবুল হাসান বলেন, তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হলেও হিমেল বাতাসের কারণে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়া আগামী ২৬ জানুয়ারি থেকে ১০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আর তিন-চার দিন জেলার ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
এ দিকে শীতের কারণে কয়েক দিন ধরেই জেলার হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু, ডায়রিয়া ও মেডিসিন বিভাগে রোগীদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা: মাহবুবুর রহমান বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে দুই ধরনের শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠাণ্ডাজনিত রোগ ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আন্তঃবিভাগে শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে।

নেত্রকোনায় বেড়েছে শীতজনিত রোগ
বাসস জানায় নেত্রকোনার গত দু’দিন ধরে সারা দিনেও সূর্যের দেখা মিলছে না। জেলায় শীতজনিত রোগ বেড়েছে। কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। মোটা জামা কাপড় গায়ে জড়িয়ে এবং খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত অসহায় মানুষ। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের হচ্ছে না। এ অবস্থায় চরম বিপাকে পড়েছে স্কুল-কলেজ, মাদরাসার শিক্ষার্থী ও নিম্নআয়ের লোকজন। প্রচণ্ড শীত উপেক্ষা করে তাদেরকে ভোরবেলায় নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটতে হচ্ছে।
এ ছাড়া তীব্র শীতে বেড়েছে সর্দি, কাশি, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ-বালাই। স্থানীয় হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন বাড়ছে ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে শিশুরা সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া এবং বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি।
নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবু সাঈদ মো: মাহবুবুর রহমান বলেন, ঠাণ্ডাজনিত রোগীর চাপ এখন বেশি। এর মধ্যে বেশির ভাগ শিশু। বিশেষ করে নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি, ডায়রিয়া ও শ্বাসকষ্টের রোগী প্রতিদিন বাড়ছে।
স্থানীয় আবহাওয়া অধিদফতর সূত্র জানায়, গতকাল শুক্রবার সকাল ৭টার দিকে জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
জেলা প্রশাসক বনানী বিশ্বাস বলেন, এরইমধ্যে জেলার ১০টি উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে শীতার্ত মানুষের মধ্যে সরকারি কম্বল বিতরণ করা হয়েছে এবং তা চলমান রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement
মহিলাবিষয়ক অধিদফতরে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি নির্বাচন প্রক্রিয়া কেমন হবে সিদ্ধান্ত জনগণের : অধ্যাপক ইউনূস ট্রাম্প নিয়ে ভারতের উচ্ছ্বাসে কি ভাটা? সীমান্তে বিএসএফের বিশেষ সতর্কতা জারি পরিস্থিতি থমথমে সবজির বাজার নিয়ন্ত্রণে, ঊর্ধ্বমুখী চাল-মুরগির দাম মাওনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দেড় ঘণ্টা মাটিতে পড়েছিলেন আমিনুল পশ্চিমতীরে হামলা বাড়ানোর হুমকি ইসরাইলের লন্ডন ক্লিনিকের ছাড়পত্র পেয়েছেন খালেদা জিয়া দুর্নীতি ও বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে : ডা: শফিকুর রহমান বহিরাগত শ্রমিকদের তাণ্ডবে দেশ ছাড়ছেন ল্যাভেন্ডার গার্মেন্টের চীনা নাগরিকরা গুজব ছড়ানো হচ্ছে আমরা ভালো আছি : আসিফ নজরুল

সকল