দেশ ছেড়ে পালাতে চান পিচ্চি হেলাল
- আবু সালেহ আকন
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৯
দেশ ছেড়ে পালাতে চান পিচ্চি হেলাল। হেলালের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হুলিয়া জারি হলে তিনি উঠেপড়ে লেগেছে দেশ ছাড়তে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোকে তিনি ম্যানেজ করে ফেলেছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। তার টার্গেট নেপাল অথবা থাইল্যান্ড যাওয়া। সেখান থেকে অন্য কোথাও পাড়ি জমাতে চান তিনি। বিদেশে বসেই আন্ডারওয়ার্ল্ড নিয়ন্ত্রণ করতে চান।
ইমামুল হাসান হেলাল ওরফে পিচ্চি হেলাল দীর্ঘ ২৪ বছর পর গত ১৫ আগস্ট কারাগার থেকে মুক্তি পান। মুক্তির পরই বেপরোয়া হয়ে উঠেন এই সন্ত্রাসী। রাজধানীর মোহাম্মদপুর-আদাবর, ধানমন্ডি ও হাজারীবাগের একক নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন এই হেলাল। আধিপত্য বিস্তারের জন্য অন্যান্য গ্রুপের সাথে একের পর এক সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তার গ্রুপ। এসব সংঘর্ষকে কেন্দ্র করে ওই এলাকায় একের পর এক খুনের ঘটনা ঘটে। গত সেপ্টেম্বরে মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় জোড়া খুনের ঘটনায় পৃথক দু’টি মামলায় পিচ্চি হেলালকে আসামি করা হয়। এর আগেও তার বিরুদ্ধে চারটি হত্যা মামলাসহ আটটি মামলার বিচার চলছে।
জানা গেছে, গত ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মোহাম্মদপুরের রায়ের বাজারের সাদেক খান আড়তের সামনে নির্মাণশ্রমিক নাসিরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই সুমন বিশ্বাস বাদি হয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, নাসিরের পরিচিত শাওনের মোটরসাইকেলে বেড়িবাঁধ তিন রাস্তার মোড়ে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। তারা এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নাসিরকে গুরুতর আহত করে। পরে খবর পেয়ে নাসিরের স্বজনরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যায়। চিকিৎসাধীন নাসিরের ওই রাতেই মৃত্যু ঘটে। এই হত্যা মামলায় ইমামুল হাসান ওরফে পিচ্ছি হেলাল, রাহুল, শাহরুখ, রয়েল, পারভেজ, ইমন ওরফে এলেক্স ইমনসহ মোহাম্মদপুরের আরো অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। একইভাবে হত্যা করা হয়েছে মুন্নাকে।
আওয়ামী লীগের ১৫ বছর ওই এলাকায় চাঁদাবাজি করেছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগের সন্ত্রাসীরা। সক্রিয় ছিল যোশেফ-হারিছ বাহিনী, অনু, রাজিব, সলু, সাদেক খানের বাহিনী। তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিলেন ওই এলাকার মানুষ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান তারা। ১৫ আগস্ট কারাগার থেকে জামিনে মুক্ত হন পিচ্চি হেলাল। জামিন পেয়েই ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, বসিলা, আদাবর, লালমাটিয়া এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব শুরু করেন পিচ্চি হেলাল। পিচ্চি হেলালের নেতৃত্বে ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরের বাসস্ট্যান্ড, মার্কেট, ফুটপাথ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি শুরু হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, জেলে বসেই মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন থেকে চার লাখ টাকা চাঁদা আদায় করা হতো পিচ্চি হেলালের নামে। এমনকি আওয়ামী লীগ নেতা, জনপ্রতিনিধিরাও চাঁদার ভাগ দিতেন পিচ্চি হেলালকে।
এলিফ্যান্ট রোডের একটি মার্কেট নিয়ন্ত্রণ করতে কয়েক দিন আগে সেখানে পিচ্চি হেলাল বাহিনী সন্ত্রাসী হামলা চালায় বলে অভিযোগ রয়েছে। পিচ্চি হেলালের হাত থেকে বাঁচতে ইতোমধ্যে কয়েকজন সাংবাদিক সম্মেলনও করেছেন। মহানগর পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলেছেন, পিচ্চি হেলালসহ জামিনে মুক্তি পাওয়া কোনো সন্ত্রাসীই আইনের হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। পুলিশ কর্তাদের এই ঘোষণার পর পিচ্চি হেলাল দেশ ছেড়ে পালানোর চেষ্টা শুরু করেছেন বলে একটি সূত্র জানায়। আরো কয়েক সন্ত্রাসী ইতোমধ্যেই পালিয়ে গিয়েছে বলে জানা গেছে।
২০০১ সালের ২৬ ডিসেম্বর ২৩ জনের নাম উল্লেখ করে শীর্ষ সন্ত্রাসীর একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ওই তালিকায় পিচ্চি হেলাল অন্যতম। পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তাকে গ্র্রেফতার করা হয়। সেই থেকেই জেলে ছিলেন হেলাল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা