সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সিন্ডিকেটে চলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর!
- আমিনুল ইসলাম
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৯
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুজ্জামান কামালের গড়া সিন্ডিকেটেই চলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তাদের অপতৎপরতায় ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানের। নিষিদ্ধ হওয়ার পরও দেশের বারগুলোতে ব্যাপক হারে বিক্রি হচ্ছে ভারতীয় মদ। অথচ অনুমতি থাকার পরও বিদেশী অতিথিদের সামনে অভিযান চালানো হয়েছে বেশ কয়েকটি ৫ তারকা হোটেলে। অভিযোগ রয়েছে, অধিদফতরের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো এখনো নিয়ন্ত্রণ করছে স্বৈরাচার সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামাল ও তার একান্ত সচিব হারুনুর রশিদ বিশ্বাসের সিন্ডিকেট। বৈধ বার-হোটেল রেস্টুরেন্টে মোটা অঙ্কের টাকা আদায়সহ ঘটচ্ছে অপ্রীতিকর সব ঘটনা।
জানা যায়, ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের সময় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার পিএস সাবেক অতিরিক্ত সচিব হারুন বিশ্বাসের নেতৃত্বে গড়ে ওঠে রাজধানী ঢাকার মাদক বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। নামে-বেনামে এক ডজনের বেশি বারের লাইসেন্স নিয়ে বৈধ বারের পুরো ব্যবসাটাই নিয়ন্ত্রণ করে ওই সিন্ডিকেট। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সহায়তায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পছন্দের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হয়। তাদের মূল কাজই ছিল সিন্ডিকেটের মাদক বাণিজ্যের সহায়তা করা। সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা কিংফিশার বারের মালিক মুক্তার। সিন্ডিকেটের কথা মতোই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে কর্মকর্তাদের প্রাইজ পোস্টিং, বদলি, নিয়োগ দেয়া হয়েছে। অবৈধ সুবিধা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আটকে রাখা, রাসায়নিক পরীক্ষার প্রতিবেদন না দেয়া, অসম্পূর্ণ ও অস্পষ্ট প্রতিবেদন দেয়া, খেয়াল-খুশিমতো বার লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন করাসহ সবরকম অনিয়ম চলত। বঙ্গবন্ধু পরিষদের শাখা খুলে দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরে রাজত্ব করেছেন কয়েকজন কর্মকর্তা।
অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতারা কাউকে তোয়াক্কা করতেন না। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পেত না। কেউ মুখ খুললেই তাকে জামায়াত-শিবিরসহ নানা ট্যাগ দিয়ে বদলি করানোসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো। আর যারা তাদের সাথে সখ্য করে চলতেন, তাদের দেয়া হতো ভালো ভালো পোস্টিং। এ ছাড়া পোস্টিংয়ের সময়ও নেয়া হতো এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা। তবে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল পালিয়ে গেলেও তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এখনো মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। তাদের নিয়োগ দেয়া মহাপরিচালক খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো: ইউসুফ ও পরিচালক অপারেশন তানভীর মমতাজসহ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে এখনো বহাল তবিয়তে আছেন।
৫ আগস্টের পর অধিদফতরের ডিজি খন্দকার মোস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে বিক্ষোভ ও অভিযোগ উঠলেও তাকে এখনো বদলি করা হয়নি। আবার এক সময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে জনপ্রসাশনে প্রভাব বিস্তারকারী মোহাম্মদ ইউসুফ দুদকের পরিচালক হিসেবে বিএনপি-জায়ামাতের অনেক নেতাকে হয়রানি করেন। এর পুরস্কার হিসেবে সরকার পতনের কিছুদিন আগে তাকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক হিসেবে পদায়ন করা হয় এই অধিদফতরে। তার মূল কাজই ছিল আসাদুজ্জামান খান কামালের ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা মাদক বারের নিরাপত্তা তদারকি করা। দীর্ঘদিন ধরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালক অপারেশন হিসেবে কর্মরত আছেন প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তা তানভীর মমতাজ। এক সময় পুলিশ সদর দফতরে প্রভাব খাটিয়ে টেন্ডার সিন্ডিকেট গড়ে তুললেও পরবর্তীতে তাকে সেখান থেকে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। তবে কয়েক দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে পাশ কাটিয়ে তিনি অধিদফতরের ডিআইজি পদমর্যাদার পরিচালক অপারেশন পদে পোস্টিং নেন। সম্প্রতি তার নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয় রাজধানীর ৫ ও ৩ তারকা একাধিক হোটেলে। যেখানে বিভিন্ন বৈধ লাইসেন্সধারীর পাশাপাশি বেশির ভাগ অতিথি বিদেশী। এসব স্থানে শতকরা ৮০ জনই থাকেন বিশে^র বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা। অপারেশন পরিচালক তানভীর ক্ষমতা দেখানোর জন্য পরিকল্পিতভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে খোদ অধিদফতরে।
আবার উপ-পরিচালক প্রশাসন আবীর তৌহিদ ইমাম সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে প্রধান কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল তবিয়তে আছেন। এ ছাড়া উপ-পরিচালক মো: হামিমুর রশীদ তার চাকরি জীবনের প্রায় ৯ বছর কাটিয়েছেন সদর দফতরে। রাজধানীর মদের বার এবং মাদক কারবারিদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করে আসাদুজ্জামান কামালের বাসায় পৌঁছে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। যার কারণে পুরস্কার হিসেবে টানা ৯ বছর চাকরি করেছেন সদর দফতরে। সর্বশেষ এই কর্মকর্তা পটুয়াখালীতে ছিলেন।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক (ডিজি) খোন্দকার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘কেউ অপরাধ করলে ছাড় পাওয়ার সুযোগ নেই। সবার বিরুদ্ধে পর্যায়ক্রমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হয়।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা