এক-এগারোর ভয়াবহ পরিণতি বিএনপির চাইতে কেউ বেশি ভোগ করে নাই : মির্জা আব্বাস
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৮
এক-এগারোর সাথে বিএনপিকে যুক্ত করে ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে অভিযোগ করে এর পরিণতি শুভ হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস।
গতকাল শুক্রবার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির উদ্যোগে মরহুম আরাফাত রহমান কোকোর ১০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপিকে যারা ভিন্ন শিবিরে ঠেলে দিয়ে ফয়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন এর পরিণতি ভালো হবে না। ৫ আগস্টের পরে কোনো কোনো পক্ষ যে ধরনের আপত্তিকর কথা-বার্তা, সঙ্ঘাত-বিভেদ সৃষ্টির কথা বলছে, তা যদি চলতে থাকে তাহলে কিন্তু গণতন্ত্রের চেহারা কোনো দিন দেখা যাবে না। এই বিভেদ-বিভ্রান্তি সৃষ্টি না করে দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ রাখার চেষ্টা করেন।
মির্জা আব্বাস বলেন, একটা দল আছে নাম বলব না, গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য, পাগল হয়ে গেছে। তারা এমন ভাব করছে যে তারা যেন কিছুই জানেন না । ভাজা মাছটিও উল্টিয়ে খেতে জানে না। তারা ঘটনা না জেনে পট করে বিএনপির সম্বন্ধে দুই-একটা কথা বলে ফেলেন। যাই হোক, আমি কারো সমালোচনা করবো না।
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বহুমত, বহু পথ, বহু টেলিভিশন, বহু সংবাদপত্র আর ইদানিং কথা বলার সুযোগ পেয়ে বহু কথা বিএনপির বিরুদ্ধে, আমাদের দলের বিরুদ্ধে বলছে। কেউ বলছে, বিএনপি নাকি ওয়ান ইলেভেন আনার পায়তারা করছে। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, ২০০৭ সালের এক এগারোর ভয়াবহ পরিণতি এটা বিএনপির চাইতে কেউ বেশি ভোগ করে নাই। বিএনপির প্রতিটি সাধারণ কর্মী থেকে শুরু করে আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত ওই এক এগারোর ষড়যন্ত্র থেকে রেহাই পায় নাই। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।
‘বিএনপিকে নিয়ে চক্রান্ত’
মির্জা আব্বাস বলেন, আজকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল হঠাৎ করে যেমন নতুন মুখে কথা ফুটলে বাচ্চারা যেভাবে আবোল-তাবোল কথা বলে, সেই ভাবে কথা বলছে। ওনাদের কথা-বার্তায় মনে হয় বিএনপি যেন আওয়ামী লীগের দোসর। বিএনপিকে আওয়ামী শিবিরের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। আমি পরিস্কারভাবে বলতে চাই, আওয়ামী লীগ ভারতের দোসর তাদের দিকে যারা বিএনপিকে ঠেলে দিতে চায় আমি বলব, নিজের চেহারা আয়না দিয়ে দেখুন, নিজের অন্তরটা আয়না দিয়ে দেখুন। দেশবাসীকে আর ফাঁকি দেয়ার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছে । এই অনুষ্ঠানে রিজভী আছেন, সে পঙ্গু হয়ে গেছে। অকালে মৃত্যু হয়ে গেছে তার ছেলেটার। আমার নিজের পরিবারের কথা যদি বলি, আমার জেল হয়েছে ১১ বছর, আমার স্ত্রীর জেল হয়েছে ১৬ বছর, আমার ছোট ভাইয়ের (মির্জা খোকন) আট বছর জেল হয়েছে। এই নিপীড়ন শুধু আমার পরিবার নয়, বাংলাদেশের প্রতিটি বিএনপির নেতাকর্মীর ওপর এই নিপীড়ন হয়েছে। আর আজকে আমাদেরকে ঠেলে দিতে চাচ্ছেন অন্য শিবিরে। উদ্দেশ্যটা কি? আওয়ামী লীগের সিল মারতে চান। আমাদেরকে তাড়াতে চান? এই কথা কখনো চিন্তা করবেন না। এ দেশের অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, এ দেশের স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, এ দেশের অতন্দ্র প্রহরী আমার এই দলের নেতাকর্মী ভাইয়েরা স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের জন্য।
‘নতুন দল হলে বিএনপি স্বাগত জানাবে’
মির্জা আব্বাস বলেন, নতুন একটা দল হচ্ছে দেখে বিএনপি নাকি জেলাস করছে। এই কথা যারা বলেন, তারা জাতির শত্রু। নতুন দল হবে কিংবা হবে না সেটা যারা করতে চায় তাদের ওপর নির্ভর করে। দল ঘোষণা হওয়ার পরে বিএনপির ভূমিকা কী হবে সেটা দেখবেন। আমরা নতুন দল হলে স্বাগত জানাই। যারা দল করবেন তারা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দেশটাকে পরিচালিত করবেন আমরা সরে যাবো প্রয়োজন হলে। কিন্তু ওই রকম উল্টা-পাল্টা কথা-বার্তা বলে দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করবেন না।
তিনি বলেন, বিএনপি গণতান্ত্রিক দল, আমরা গণতন্ত্রের কথা বলেছি, ১৭ বছর রাজপথে লড়াই করেছি। আজকে অনেকে বলেন, ৫ আগস্ট যারা এনেছে তারা সব কিছুর অধিকার রাখে। ঠিক আছে, অস্বীকার করবো না। কিন্তু আমরা যারা ১৭ বছর রক্ত দিলাম, আমাদের ঘর পুড়ল, আমাদের সংসার পুড়ল তাদের কী হবে? আমাদের ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ পাঁচ হাজার লোক গুম হয়ে গেল, হাজার হাজার কর্মী জেল খাটল, তাহলে তাদের অবদান নেই। একজনের অবদানকে স্বীকৃতি দিতে গিয়ে অন্যদের অবদানকে অস্বীকৃতি করার অবস্থা বাংলাদেশে নাই। যারা চেষ্টা করেন তারা অপচেষ্টাই করছেন, যারা চেষ্টা করেন তারা জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করছেন।
দোয়া মাহফিলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, আসাদুল করীম শাহিন, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মহানগর বিএনপি দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, রাজিব আহসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে সকালে বনানী কবরস্থানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিবসহ নেতাকর্মীরা আরাফাত রহমান কোকোর কবরে পুস্পমাল্য অর্পন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকেলে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয় মিলাদ মাহফিল। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে কোকো আরাফাত ।
মানুষ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত : রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে কেউ কেউ ‘রাজনৈতিক দল গঠনের চেষ্টা করছেন বলে শুনতে পাচ্ছি।’ তাহলে মানুষ তো সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলবেই। মানুষ মনে করবে, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো একটা মাস্টারপ্ল্যানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
গতকাল সকালে রাজধানীর বনানী কবরস্থানে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর দশম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবর জিয়ারত শেষে তিনি এই অভিযোগ করেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে দেখছি কোনো কোনো উপদেষ্টা বিএনপির ওপর এক ধরনের বিরূপ ধারণা দিয়ে কেউ প্রকাশ্যে, কেউ অপ্রকাশ্যে বক্তব্য দিচ্ছেন।’
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এই সরকার বিভিন্ন প্রশাসনিক নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিশেষ কোনো রাজনৈতিক দলকে প্রাধান্য দিচ্ছে। শুনছি তারা, কিংস পার্টি তৈরি করছে। আমরা জানি, অন্তর্বর্তী সরকার একটি নিরপেক্ষ সরকার। এগুলো করলে তো অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে মানুষের ধারণা পাল্টে যাবে। সংস্কারের নাম করে অনন্তকাল ধরে নির্বাচন দেবেন না, এটা হতে দেয়া যায় না।’
এক-এগারো ইস্যুতে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কিসের ভয় দেখান যে ১/১১ এর পুনরাবৃত্তি হবে। উপদেষ্টারা কি বিজ্ঞলোকদের রাজনীতি শেখাতে চায়?’
অন্তর্বর্তী সরকার গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ফসল উল্লেখ করে রিজভী বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা ছিল এই সরকার তাদের জন্য কাজ করবে। কিন্তু জনগণ ভোট দিতে পারে না আর আপনারা সংস্কার সংস্কার করেন, বলেন আগে সংস্কার পরে নির্বাচনÑ এ যেন শেখ হাসিনার প্রতিচ্ছবি। কারণ, হাসিনা বলতেন আগে উন্নয়ন, পরে গণতন্ত্র।’
মুজিব গণতন্ত্র হত্যা করেছে, জিয়া ফিরিয়ে দিয়েছে : দুদু
মুজিব আর জিয়া এক জিনিস নয় মন্তব্য করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেছেন, ‘মুজিব গণতন্ত্র হত্যা করেছে আর জিয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে।’
‘জিয়াবাদ ও মুজিববাদ আর চাই না’ জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে দুদু বলেন, ‘আমি বলব, ভাই আপনাকে কে দেখতে বলেছে? কে ঠিকাদারি দিয়েছে আপনাকে? মুজিব আর জিয়া এক জিনিস নয়। মুজিব গণতন্ত্র হত্যা করেছে আর জিয়া গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। মুজিব মুক্তিযুদ্ধের সময় পালিয়ে গেছেন, আর জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছেন এবং যুদ্ধ করেছেন। মুজিব বাংলাদেশের দুর্ভিক্ষ এনেছে, আর শহীদ জিয়া বাংলাদেশ থেকে দুর্ভিক্ষ দূর করেছেন। শহীদ জিয়া আর মুজিবের মধ্যে যে পার্থক্য বুঝে না, সে নাকি আবার রাজনৈতিক দল গঠন করবে! এটা দুঃখজনক। মানুষ জানে, শহীদ জিয়া, বেগম জিয়া এবং তারেক রহমান কী আর ফ্যাসিবাদ কী।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা