ট্রাম্পের গণহারে বহিষ্কার উৎপাদন কমাবে, মূল্যস্ফীতি বাড়াবে
পলিটিকোর বিশ্লেষণ- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৮
আমেরিকানরা উচ্চ মূল্যবৃদ্ধি ঘৃণা করে। কিন্তু গণহারে অভিবাসী বহিষ্কার দেশটিতে মূল্যস্ফীতির নতুন ঢেউয়ের সূত্রপাত করতে পারে। মার্কিন সাময়িকী পলিটিকো এমন আশঙ্কা করে বলছে, নির্মাণ ও স্বাস্থ্যসেবা থেকে শুরু করে কৃষির মতো শিল্পগুলো শ্রমের জন্য অভিবাসীদের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল, যা নতুন বাড়ি নির্মাণ, বয়স্কদের যত্ন নেয়া এবং খাদ্য সরবরাহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিছু পেশার এক-চতুর্থাংশ থেকে অর্ধেক পর্যন্ত। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা এবং লাখ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানোর যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা সরাসরি সাংঘর্ষিক। কারণ তার এ প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে হবে এমন একটি অর্থনীতির সাথে যেখানে ক্রমবর্ধমানভাবে অস্থানীয় কর্মীদের ওপর নির্ভরশীলতা থাকবে যাতে দাম কম থাকে এবং উৎপাদনশীলতা ক্রমেই বৃদ্ধি পায়।
কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস এবং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব ডালাস বলেছে, বাইডেন প্রশাসনের সময় ২০২৩ সালে ৩৩ লাখ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে এলেও তাদের কারণে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের সন্তানরা বয়স বাড়ার সাথে সাথে নতুন কর্মীর চাহিদা পূরণ করছে।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের প্রাক্তন ট্রাম্প উপদেষ্টা স্টিফেন মুর বলেছেন, ট্রাম্পের নির্বাচনে জয়লাভের দু’টি কারণ হচ্ছে অভিবাসন ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে ভোটারদের ক্ষোভ। এখন ব্যাপক হারে অভিবাসীদের বের করে দিলে তাদের অনুপস্থিতি মার্কিন অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করবে যা কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন হ্রাস করার সাথে সাথে মুদ্রাস্ফীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে কৃষি উৎপাদন ধীর হয়ে যাওয়ার সাথে সাথে মুদিপণ্যের দাম বেড়ে যাবে। এটি আবাসন নির্মাণের খরচ বাড়িয়ে দেবে, নার্সিং হোম ও গৃহস্বাস্থ্য ব্যবসাগুলোতে কর্মীদের ঘাটতি আরো বাড়িয়ে তুলবে, যার ফলে স্বাস্থ্যসেবার খরচ আরো বেড়ে যাবে। গত বছরে মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস পেলেও, বাইডেন যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তার তুলনায় এখনো মুদ্রাস্ফীতির হার ২০ শতাংশেরও বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রে অননুমোদিত অভিবাসীরা সামগ্রিক শ্রমশক্তির একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রতিনিধিত্ব করে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসাব প্রায় ৮.৩ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসী কাজ করছেন, যা মোট কর্মীবাহিনীর প্রায় ৫ শতাংশ। তারা নির্মাণ ও কৃষিক্ষেত্রে শ্রম পুলের বৃহত্তর অংশের প্রতিনিধিত্ব করে, ১০ শতাংশেরও বেশি এবং সমস্ত গৃহ স্বাস্থ্য সহায়তার প্রায় সাত শতাংশ।
ট্রাম্পের কিছু সহযোগী বলেছেন যে প্রেসিডেন্টের ২০ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীকে বহিষ্কারের প্রতিশ্রুতি অবাস্তব। ট্রাম্পের ট্রানজিশন টিমের মুখপাত্র ক্যারোলিন লিভিট বলেন, প্রকৃত অর্থনৈতিক সঙ্কট হলো বছরে ১৮২ বিলিয়ন আমেরিকান ডলার ব্যয় হয় ২০ মিলিয়ন অবৈধ অভিবাসীদের খরচ মেটাতে। সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের গবেষণা পরিচালক স্টিভেন ক্যামারোটা বলেন, এত বিপুল পরিমাণ অভিবাসীকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করতে নতুন ট্রাম্প প্রশাসনের কোনো অবকাঠামো নেই।
ট্রাম্পের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি উপদেষ্টা স্টিফেন মিলার বলেন, অভিবাসীরা তাদের পছন্দমতো কাজ করতে চায় যা অনেক সময় যুক্তরাষ্ট্রের চাহিদা সঠিকভাবে পূরণ করে না।
তবুও অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো সতর্ক করে দিচ্ছে যে, অভিবাসী কর্মীবাহিনীর দ্রুত অবনতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পর্যাপ্ত কর্মীর অভাব রয়েছে এবং এই মাত্রার অর্থনৈতিক ধাক্কা বৃদ্ধি এবং কর্মসংস্থানকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং মুদ্রাস্ফীতিকে বাড়িয়ে তুলবে। জর্জ ম্যাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক মাইকেল ক্লেমেন্স, যিনি অভিবাসনের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করেন, তিনি বলেন, অভিবাসন ছাড়া আমেরিকায় নিযুক্ত কর্মীর সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পাবে, আমাদের সমস্ত চাকরি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির ওপর নির্ভর করে এবং ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি কেবল অভিবাসনের কারণেই টিকে থাকতে পারে। বিশেষ করে আবাসন খাতে আমেরিকার সাশ্রয়ী মূল্যের সঙ্কট মোকাবেলায় লাখ লাখ নতুন বাড়ি নির্মাণ প্রয়োজন। কারণ ভাড়া ও বাড়ির দাম বেড়েছে, যা সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতিকে আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। অথচ এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নে অনেক শ্রমের প্রয়োজন হবে।
ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব হোম বিল্ডার্সের সিইও জিম টোবিন বলেছেন, কর্মরত অভিবাসীদের বহিষ্কার করলে তা নির্মাণ শিল্পের ক্ষয়প্রাপ্ত শ্রমবাজারকে আরো দুর্বল করে তুলতে পারে। যতক্ষণ না আমরা পর্যাপ্ত গৃহকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দক্ষ পেশায় আরো তরুণদের নিয়োগ না করছি, ততক্ষণ পর্যন্ত অভিবাসন মেনে নিতে হবে। তা না হলে রাজনৈতিক ঝুঁকিও সৃষ্টি হবে। ক্লেমেন্স বলেন, অবৈধ অভিবাসন দমন শ্রম সরবরাহকে উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে এবং নতুন বাড়ি নির্মাণের গতি ধীর করে দিতে পারে।
ডেনভার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লো ইস্টের নেতৃত্বে পূর্ববর্তী গবেষণায় দেখা গেছে যে অননুমোদিত কর্মীদের দমনের ফলে স্থানীয় অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী শ্রমিকদের চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ে। অবৈধ অভিবাসীরা কেবল শ্রম বিক্রি করছেন না এবং শ্রমের অন্য বিক্রেতাদের সাথে প্রতিযোগিতা করছেন না, তারা উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং এই উপাদানগুলো অপসারণ উৎপাদন হ্রাস করে।
ইউএসডিএ অনুসারে, অননুমোদিত অভিবাসীরা সমস্ত ফসল চাষিদের প্রায় ৪০ শতাংশ প্রতিনিধিত্ব করে এবং নির্দিষ্ট কিছু রাজ্যে দুগ্ধ খামারে তাদের কর্মীবাহিনীর অংশ আরো বেশি হতে পারে। জর্জ ডব্লিউ বুশ ইনস্টিটিউট-এসএমইউ ইকোনমিক গ্রোথ ইনিশিয়েটিভের পরিচালক জে এইচ কুলাম ক্লার্ক বলেন, যদি কৃষি উৎপাদন ‘গুরুতরভাবে ব্যাহত হয়, তাহলে মুদি দোকানে পণ্যের ঘাটতি সৃষ্টি হবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা