সোহরাওয়ার্দীতে ৫ রেস্তোরাঁ আতঙ্ক ছড়াচ্ছে
- আবুল কালাম
- ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৫৭
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছ কেটে পরিবেশ নষ্ট করে তৈরি হওয়া পাঁচ রেস্তোরাঁ কোনো কাজেই আসেনি। উদ্যানে আগতদের কাছে এগুলো কফির পানের বদলে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। আলোচিত এই কফিশপগুলোতে বিনোদনপ্রেমীদের আড্ডার পরিবর্তে ভবঘুরে আর নেশাখোররা আস্তানা গেড়েছে। এদের উৎপাতে উদ্যানের পরিবেশ নষ্টের পাশাপাশি বেড়াতে আসা মানুষের জীবনে ঝুঁকি বেড়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে উদ্যানে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকের গেট দিয়ে প্রবেশ করতেই নির্মিত একটি রেস্টুরেন্ট চোখে পড়ে। দেখা যায়, এর ভেতরে বাইরে ভয়ানক নোংরা। এরই মধ্যে একজন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ ভাত বিক্রি করছেন। তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো রেস্টুরেন্টের জন্য তৈরি করা হলেও এখনো চালু হয়নি। নির্মাণের পর থেকেই এভাবে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। যারা ভবঘুরে তারা এখানে বসে শুয়ে সময় কাটায়। তিনিও একজন ভবঘুরে। তাই এখানে আশ্রয় নিয়ে ভাত বিক্রি করেন।
এরপর একটু আগাতেই মুক্তমঞ্চের পাশঘেঁষা আরেকটি স্থাপনা চোখে পড়ল। পাশে যেতেই দেখা গেল এটি নির্মিত কফিশপ। ভেতরে টাইলস বসানো। মানুষের বসার জায়গাও পরিকল্পিতভাবে তৈরি করা। একটি কফিশপ বা রেস্তোরাঁয় যা প্রয়োজন সবই এর মধ্যে আছে। কিন্তু পরিত্যক্ত। যেখানে বিক্রেতা আর খাবার উপকরনের পরিবর্তে কয়েকজন বসে গাজা সেবন করছেন। এ সময় স্থাপনার ছবি তুললে এদের সবাই এসে ঘিরে ধরেন। বলেন, আমরা ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্র। ‘দেখি মোবাইল দেখান। কি তুলেছেন। কার ছবি দেখি’। একপর্যায়ে তারা এ প্রতিবেদকের সাথে বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। জোর করে মোবাইল থেকে ছবি ডিলিট করে আবার নিজেদের জায়গায় চলে যায়। বলে ’এবার চলে যান’। দীর্ঘক্ষণ তাদের এমন ভয়ানক আচরণ অনেকে দূর থেকে দেখলেও কেউ কাছে এসে এর প্রতিবাদ করার সাহস করেননি।
এর আরেকটু সামনে আসতেই টিএসসি মোড়। এর সাথের গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে অসংখ্য দোকান। পুরো উদ্যানের ভেতরের বড় একটা অংশজুড়ে এই ভাসমান দোকানগুলো বসানো হয়েছে। এগুলোতে প্রতিদিন শত শত মানুষ আসেন। দোকানগুলোর পরিত্যক্ত খাবার, পলিথিন ও প্লাস্টিক বোতলে পার্কের পরিবেশে মারাত্মক দূষণ হলেও তাতে কোনো ব্যবস্থা নেই। এর পাশেই আরেকটা কফি হাউজ। এটিও টাইলসসহ নির্মাণকাজ সম্পূর্ণ করা। ভেতরটা ভয়ানক নোংরা। ময়লা বালিশ, দিনের বেলায় টাঙানো মশারি, কয়েকটি বাসন এদিক ওদিক ছড়ানো। অবস্থা দেখে মনে হলো এখানে ভবঘুরেদের বড় আস্তানা।
এরই মধ্যে একজন তরুণ দৌড়ে এসে কিছু লাগবে কি না জানতে চাইল। বললাম কি আছে। জানাল যা চাইব তাই। মানে কী প্রশ্ন করলাম। বলল ‘স্যার এখানে তো ভালো কেউ আসে না। আপনিও যেহেতু আসছেন তা তো আপনার জানাই আছে। কি পাওয়া যায় আর না যায়। কি দিমু বলেন স্যার। পুরিয়া নাকি অন্য কিছু। তবে অন্য কিছু হলে সন্ধ্যার পর আসতে হবে স্যার। এখন তো আলো মানুষ দেখব আরো দুই প্রান্তে দু’টি রেস্তোরাঁর অবস্থা একই ছিল।
উদ্যানে নিয়মিত আসেন এমন কয়েকজনের সাথে কথা হলো। সাইফুর নামে একজন জানান, এখানে আগে পরিবেশ ভালো ছিল। কিন্তু রেস্তেুারাঁ নির্মাণের পর এগুলো আর চালু হয়নি। তাই এগুলোতে নেশাখোর, ভবঘুরে খারাপ লোকরা এসে আসর বসিয়েছে। ফলে প্রতিদিন যারা আসেন তাদের কারো না কারো এদের হাতে বিবৃত পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। আর সন্ধ্যার পর এরা সুযোগ পেয়ে ছিনতাইও করে। ফলে পার্কে আগত মানুষ আতঙ্কিত থাকে। স্ত্রী সন্তান নিয়ে পার্কে আসা তাজুল জানান, তিনি মূলত মেলার প্রস্তুতি দেখতে এসেছেন। কিন্তু প্রাঙ্গণ পার হয়ে টিএসসির গেটের পাশে অবস্থিত নির্মিত কফি হাউজের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকজন তাদের ঘিরে ধরে। সাথে সাথে তিনি ভয়ে স্ত্রীসহ বাইরে বের হয়ে আসেন। এ রকম ঘটনা এখানে এখন নিয়মিত হয় বলেও জানালেন অন্যরা। অথচ পরিবেশ কর্মীদের বাধা উপেক্ষা করে পার্কের সংস্কারের নামে গাছ কেটে পরিবেশ ধ্বংস করে এগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল।
সে সময় এর উদোক্তা প্রতিষ্ঠান গণপূর্ত বলেছিল এখানে কোনো রেস্টুরেন্ট তৈরি হচ্ছে না। সাতটি ভাস্কর্য এলাকায় একটি করে ছোট কফিশপ হবে। যেখানে পাওয়া যাবে শুকনো খাবার। তাই এর বাস্তবায়নে শত গাছ কাটার সিদ্ধান্ত হয়। এরপর কিছু গাছ কাটা হলে পরিবেশ কর্মীরা এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামেন। একপর্যায়ে গাছ কাটা বন্ধ হলেও এই রেস্তোরাঁ নির্মাণ থেমে থাকেনি। কিন্তু পরিবেশের এত ক্ষতির পর নির্মিত এই স্থাপনাগুলো মানুষের কোনো উপকারে আসেনি। উল্টো এখন দর্শনার্থীদের জন্য নিরপত্তাহীন হয়ে দেখা দিয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা