২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১, ২৩ রজব ১৪৪৬
`

রঙ বদলে ইতিহাস গড়ছে বইমেলা

উদ্যানজুড়ে কর্মচাঞ্চল্য
-


মেলার কোনো রঙ না থাকলেও এবার তাই হচ্ছে। রঙ বদলে এবার ইতিহাস গড়ছে বইমেলা। প্রতি বছর একুশের গ্রন্থমেলায় স্টল নির্মাণ এবং তার সাজসজ্জায় কোনো বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার তা বিদ্যমান। আসছে মেলার রঙ হবে লাল, কালো ও সাদা। এর মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট ছাত্র-জনতা বিপ্লবের প্রেক্ষাপট ফুটিয়ে তোলা হচ্ছে। এ ছাড়া এবারের মেলাকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। সেগুলোর নামকরণ ভাষা শহীদদের নামে করা হয়েছে।
বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্যসচিব সরকার আমিন জানান, এ বছরের বইমেলার থিম হলো ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ’। তারই আলোকে এবার মেলার রঙ হবে লাল, কালো ও সাদা। মেলার অঙ্গসজ্জা ও বিভিন্ন চত্বরে তার প্রকাশ ঘটবে। এর মাধ্যমে মেলাজুড়ে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের চেতনাকে ফুটিয়ে তোলা হবে। লাল বিপ্লবের এবং কালো হবে শোকের প্রতীক। থাকবে জুলাই চত্বর নামে আলাদা চত্বর। পাশাপাশি নানাভাবে সেই গণ-অভ্যুত্থানকে উপস্থাপন করা হবে।
বইমেলার সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন রাত-দিন কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের আগেই এর সব প্রস্তুতি শেষ হবে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি মেলা উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এদিকে সময় কমে আসায় মেলার দুই প্রাঙ্গণজুড়ে কর্মযজ্ঞ চলছে। গতকাল দুপুরে সোহরাওয়র্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা যায় স্টল নির্মাণে এখনো প্রায় অর্ধেক কাজ বাকি। তবে সেই কাজ সমাপ্তে সর্বত্রই নির্মাণ শ্রমিকদের ব্যস্ততা। কোথাও চলছে দেয়াল নির্মাণ, কেউ করছেন বাঁশ-কাঠের কারুকাজ, আবার কেউবা স্টলের সাজসজ্জা।
শ্রমিকরা জানান, সময় ঘনিয়ে আসায় তারা রাতদিন কাজ করছেন। একাধিক শিফটে ভাগ হয়ে বিরতি ছাড়াই তাদের কাজ চলছে। তাদের দাবি নির্ধারিত সময়ের আগেই কাজ পুরোপুরি শেষ হবে।
মেলা কর্তৃপক্ষ জানান, তারা মেলার সব প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছেন। ইতোমধ্যে মেলার স্টল বরাদ্দের লটারিও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিষয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম জানান, মেলার প্রতিটি কাজে সবার অংশগ্রহণ রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। আর প্রতিটি সিদ্ধান্ত একটি বৃহৎ কমিটির মতামতে হয়েছে।

মেলা সুন্দরভাবে সম্পন্নে প্রকাশকদের সহায়তা চেয়ে তিনি বলেন, লটারির ব্যাপারটা যেমন সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে, ঠিক তেমনি অপরাপর ব্যাপারগুলোও সুন্দর হবে। যার প্রভাবটা মেলায় পড়বে।
তবে বৈষম্যবিরোধী সৃজনশীল প্রকাশক সমিতি ও বাংলাদেশ সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এবার পরিচালনা পর্ষদের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে কালো তালিকাভুক্ত প্রকাশকদের প্যাভিলিয়ন বাতিল করেছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। মেলা পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্যাভিলিয়ন বাতিল হওয়া প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- তাম্রলিপি, কাকলী প্রকাশনী, পাঠক সমাবেশ, পুঁথিনিলয়, সময়, মিজান পাবলিশার্স, চারুলিপি, জিনিয়াস পাবলিকেশন, নালন্দা, পার্ল পাবলিকেশন, বিশ্ব সাহিত্য ভবন ও শব্দ শৈলী। এ ছাড়া বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে প্রকাশনা জগতে পরিচিত আগামী প্রকাশনী, অন্য প্রকাশ ও অনুপম প্রকাশনীর প্যাভিলিয়ন সাইজ ২৪/২৪ থেকে কমিয়ে ২০/২০ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এ ছাড়া ১০০টি নতুন প্রকাশনা সংস্থা যুক্ত হওয়াতে এবার মেলার পরিধি আরো বাড়ানো হয়েছে। আগে প্রতিবছর চার থেকে সাড়ে চারশ’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মেলায় অংশ নিয়ে থাকে। এর মধ্যে প্যাভিলিয়ন ৩৪টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান, চার ইউনিট ২৫টি প্রতিষ্ঠান, তিন ইউনিট ৫০টি প্রতিষ্ঠান, দুই ইউনিট ১৬৫টি এবং এক ইউনিট ১৬৬টি প্রতিষ্ঠান।
এর আগে গতবারের মেলার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এবারের মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে পূর্বাচল নয়তো অন্যত্র আয়োজনের নীতিগত সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু হাসিনা সরকারের পতনের পর দৃশ্যপট পাল্টে যায়। নতুন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক পদেও পরিবর্তন আসে। এরপর বইমেলার বিষয়টি সামনে এলে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করে বাংলা একাডেমি। তাতে পুরাতন স্থান বাংলা একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই মেলা হওয়ার সিন্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement