বিদ্যুৎ খাতে লুটপাটকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে একমত ব্যবসায়ীরা
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৩৮
বিদ্যুৎখাতে গত দেড় দশকে যারা লুটপাট করে বিদেশে টাকা পাচার করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশন (বিইপপা)। আসন্ন গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বকেয়া বিদ্যুৎ বিল পরিশোধের বিষয়ে গতকাল স্থানীয় এক হোটেলে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন বিইপপার সভাপতি কে এম রেজাউল হাসনাত।
গত দেড় দশকে দায়মুক্তি আইনের মাধ্যমে বিনা টেন্ডারে চাহিদার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়। এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে পতিত আওয়ামী লীগের দলীয় নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীরা শুধু ক্যাপাসিটি চার্জের নামেই হাতিয়ে নিয়েছে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের প্রকৃত মূল্যের চেয়ে উচ্চ মূল্য আদায় করে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে। পাশাপাশি পুরনো ও নিম্নœ মানের বিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রপাতি কিনে কয়েকগুণ বেশি দাম দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে। আবার বাড়তি ব্যয় দেখিয়েও জনগণের পকেট থেকে দফায় দফায় দাম বাড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। বিদ্যুৎ খাতের এ মহালুটপাট হয়েছিল রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির মদদে। আর এর দায়ভার দেশের ওপর পড়েছে। প্রয়োজন না থাকার পরেও প্রতিবেশী ভারতীয় কোম্পানি আদানীর সাথে অসম চুক্তির মাধ্যমে উচ্চ দরে বিদ্যুৎ কিনে জনগণের ঘাড়ে চেপেছে। গতকালের সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে রেজাউল হাসনাত বলেন, যারা লুটপাট করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান। তবে ঢালাওভাবে সবার ওপর দোষ না চাপানোর জন্য তিনি আহ্বান জানান। কারণ, তার তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রর মধ্যে দু’টিই টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে কাজ পেয়েছিল। ফলে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো অনিয়মের সাথে জড়িত ছিলেন না বলে দাবি করেন।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় দরপত্র ছাড়া একের পর এক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের লুটপাটের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগ তদন্তে বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি পর্যালোচনায় একটি কমিটি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তিতে উল্লেখিত ট্যারিফ (বিদ্যুতের দাম) পর্যালোচনায় আরেকটি কমিটি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কমাতে পরিকল্পনা তৈরি করছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন বিদ্যুৎ খাতের ব্যবসায়ীরা।
সংবাদ সম্মেলনে ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমনের কারণে তাদের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তারা দাবি করেন। তবে একই কারণে কেন্দ্রভাড়া থেকে কত টাকা লাভ পেয়েছেন, তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি তারা। বিদ্যুতের উৎপাদন খরচ কমানোর বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চাইলেও তা পাওয়া যায়নি।
বিইপপা সাবেক প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম বলেন, প্রাথমিক জ্বালানিতে উচ্চ করারোপ করা একটি ভয়ঙ্কর বিষয়। ভারত, ভিয়েতনাম, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানে এটি দেখা যায় না। এটি বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ বাড়িয়ে দেয়। একদিকে কর নিয়ে খরচ বাড়ায়, আরেক দিকে ভর্তুকি দেয়া যৌক্তিক নয়।
আরেক প্রশ্নের জবাবে রেজাউল হাসনাত বলেন, সরকারের সাথে একাধিকবার আলোচনা হয়েছে। বকেয়ার বিষয়ে তাদের পরিষ্কার করে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, বিদ্যুৎ দিতে না পারলে তার দায় বিদ্যুৎকেন্দ্রকে দেয়া যাবে না। সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল বকেয়া ১৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে ফার্নেস তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বকেয়া ১০ হাজার কোটি টাকা। টাকার অভাবে অনেকে জ্বালানি তেল আমদানি করে বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারছে না। তাই তেলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রাখতে হলে দ্রুত বকেয়া পরিশোধের দাবি জানান তারা। বোরো মৌসুমে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারলে খাদ্যঘাটতি তৈরি হতে পারে বলে তারা আশঙ্কা করেছেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা