মহার্ঘ্যভাতার সাথে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই
- বিশেষ সংবাদদাতা
- ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:০৩
মহার্ঘ্যভাতার সাথে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, আমরা চশমার ভ্যাট বাড়িয়েছি। ১২৫ টাকায় পৃথিবীর কোন দেশে চশমা পাওয়া যায়? ওখানে ১৫ টাকা বাড়বে। খাবেন ৬০০-৭০০ টাকা, ২০ টাকা ভ্যাট দেবেন না? ভাতের হোটেলে তো ভ্যাট জিরো করে দিয়েছি। গ্লোরিয়া জিন্স থেকে এককাপ কফি খাবেন, ওখানে ১৫ টাকা দিতে আপনার সমস্যা। এ রকম অ্যাটিচিউড থাকলে তো ডিফিকাল্ট। দরকার হলে ২০ টাকা বেশি দিয়ে মিষ্টি খাবো। আমাদের রেভিনিউ এত কম যে, পুরো পিকচারটা আপনাদের কাছে এখনো আসেনি, আসার কথাও নয়।
গতকাল সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। এ সময় খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।
তিনি আরো বলেন, মহার্ঘ্যভাতা যদি দিই সেটা আলাদা হিসাব করব। বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে লোয়েস্ট ট্যাক্স পেয়িং কান্ট্রি। এলডিসির চেয়েও আমাদের ট্যাক্স কম। ভুটান, নেপাল, আইভরি কোস্ট, বুরকিনা ফাসোর চেয়েও কম। এত কম ট্যাক্স দিয়ে কিভাবে চান যে আপনাকে সবকিছু দেবো? এটা এক্সপেক্ট করা ঠিক হয় না।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি কিছুদিন আগে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে গেলাম। আমরা যখন আসি ১৩৫ মিলিয়ন ডলার এলএনজি আমদানির বিল পাওনা ছিল। আমরা সেটা পেমেন্ট করেছি। এখন আবার এক মিলিয়ন ডলার পাওনা হয়েছে। রাশিয়ান অ্যাম্বাসেডর বলছে, তোমরা টাকা দিচ্ছ না, গম আমদানির বিল।
তিনি আরো বলেন, ওই সময় (আওয়ামী লীগ সরকারের আমল) এমন ছিল, এখন খারাপ হচ্ছে বলে আপনারা বলছেন। ওই সময় যে খুব ভালো ছিল তা কিন্তু নয়। আমরা যারা সমালোচনা করি বেশির ভাগই আমার ছাত্র। ওরা বলে রাজস্ব বাড়াতে, কোন জায়গায় আমরা বাড়াব? খালি বলে দিলেই তো হবে না। আমরা ক্ষেত্রগুলো খুঁজছি। যেই জায়গায় রেশনাল হয়, আমরা চেষ্টা করব।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ব্যয়ের দিকটা আমরা সাশ্রয়ী হবো। অনেক অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় আছে। পাঁচ বছরের প্রকল্প ১০ বছর নিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় প্রকল্প আছে যেখানে খরচ হওয়ার কথা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা, খরচ হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। টাকা কোথা থেকে আসবে, এগুলো তো আমাদের শোধ করে দিতে হবে।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন, অকাল বন্যার কারণে আউশ ও আমন সংগ্রহে ঘাটতি হয়েছে। এখন আমাদের সামনে আছে শুধু বোরো মৌসুমের সংগ্রহ। আশা করছি বোরোতে ভালো ফসল হলে আমদানি নির্ভরতা অনেক ক্ষেত্রেই কমাতে পারব। তার জন্য আমরা অপেক্ষা করব না। বোরো এবার দেরিতে বপন করা হয়েছে। কারণ পানি নেমেছে দেরিতে।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমদানি অব্যাহত থাকবে। আমদানির সোর্স হবে মাল্টিপল। প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করলে সহজে আনা যায়, দামও কম পড়ে। নেইবারিং কান্ট্রিকে আমরা যেমন গুরুত্ব দিচ্ছি। পাশাপাশি অন্যান্য দেশে দাম একটু বেশি হলেও আমরা আমদানি করছি। মাল্টিপল সোর্সকে সামনে রাখছি। এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।
তিনি আরো বলেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ধান সংগ্রহ কম হয়। কারণে যেমন ময়েশ্চার চাওয়া হয় সেটা তারা দিতে পারে না। মিলগুলো কাঁচা ধান নিয়ে যাচ্ছে। করপোরেট মিলগুলোর সাথে প্রতিযোগিতা করে পারা যাচ্ছে না। আশা করছি, ইনশা আল্লাহ যে মজুদ ও সরবরাহ রয়েছে তাতে কোনো ঘাটতি হবে না।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, গম আমদানি হবে তিন লাখ টন। এর মধ্যে দুই লাখ টন গম রাশিয়া থেকে জি-টু-জি ডেফার্ড পেমেন্টে আমদানি করব। মিয়ানমারের সাথে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। ২২ হাজার টন চাল এরই মধ্যে চলে এসেছে। বাকি চাল আসবে ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান থেকে।
তিনি বলেন, আমদানি করা চালগুলোর কেজি ৫৬ থেকে ৬০ টাকা পড়ছে। চাল ও গম মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টন আমদানি করা হবে। তবে এটা নির্ভর করবে বোরো ধানের সংগ্রহের ওপর। বোরো ধান যদি আল্লার রহমতে সংগ্রহ করা যায় তাহলে আমদানির পরিমাণ কমবে। আর বোরো উৎপাদন যদি ব্যাহত হয় তাহলে আমদানি বেড়ে যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, বোরো সংগ্রহ শুরু হয় ১৪ এপ্রিল বা পয়লা বৈশাখে। হাওরের বোরো ধান প্রথমে আসে। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যদি সময় পাওয়া যায় (আগাম অতিবৃষ্টি না হয়) তাহলে হাওরের ফসলটা শতভাগ উঠে যায়। হাওরে ২৫ লাখ টন পর্যন্ত ধান উৎপাদন হতে পারে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা