২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`

বেক্সিমকো শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ বাস-ট্রাকে আগুন

কারখানা খুলে দেয়াসহ নানা দাবিতে বেক্সিমকো গ্রুপের শ্রমিকরা মহাসড়ক অবরোধসহ গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুর করেন : নয়া দিগন্ত -


গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ সব কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী আন্দোলনরত শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। এ সময় তারা চারটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কাঠ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। খবর পেয়ে ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার পর পথচারীসহ স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। শ্রমিকদের হামলায় সাংবাদিক-পুলিশসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের চক্রবর্তী ও মুজারমিল এলাকায় এ বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেন। এর আগে মঙ্গলবার শ্রমিকদের এক গণসমাবেশ থেকে গতকাল বেলা ৩টার মধ্যে তাদের দাবি মেনে নিতে আলটিমেটাম দেয়া হয়।
পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করেন। কারখানাগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। কয়েক মাস ধরে এসব শ্রমিক-কর্মচারীর বেতনভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার বেলা ৩টায় আশুলিয়ার শ্রীপুরস্থ সানসিটি মাঠে শ্রমিকরা জড় হন। দাবি আদায়ের আলটিমেটাম ছিল বেলা ৩টা পর্যন্ত। এ সময়ের মধ্যে কোনো দাবি না মানায় প্রায় চার হাজার থেকে পাঁচ হাজার শ্রমিক নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে উঠে অবরোধ করেন। এতে ওই মহাসড়কের উভয় পাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে শ্রমিকরা মহাসড়কে থাকা যানবাহন ভাঙচুর শুরু করে। একপর্যায়ে তিনটি যাত্রীবাহী বাস ও একটি মালবাহী ট্রাকে আগুন দেয় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা। এ ছাড়া আরো চারটি বাস ও একটি প্রাইভেট কার ভাঙচুর করে। সন্ধ্যা ৬টার দিকে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও শিল্পপুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দেয়। পরে শ্রমিকদের অপর একটি গ্রুপ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালিকানাধীন গ্রামীণ ফেব্রিকস অ্যান্ড ফ্যাশনের প্রধান ফটক ভাঙচুর এবং একপর্যায়ে আগুন দেয়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
ঘটনার সময় বিক্ষোভকারীদের বাধা দিলে পুলিশের সাথে শ্রমিকদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় ঘটনাস্থলের ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা ও বেধড়ক মারধর করে শ্রমিকরা। তারা সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ও ক্যামেরা-মোবাইল ফোন ভাঙচুর করেন। শ্রমিকদের হামলায় দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাভিশনের চিত্র সাংবাদিক আমির হোসেন রিয়েল ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিনিধি আবু সাঈদসহ চার সাংবাদিক আহত হন। ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন বলে পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণপরিবহন ভাঙচুর ও গণমাধ্যম কর্মীদের ওপর হামলার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ কোনাবাড়ি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু তালেব জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাঙচুর করেন। তারা সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।
ডিইপিজেড ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার প্রণব চৌধুরী বলেন, গাড়িতে আগুন দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বাসসহ কয়েকটি ট্রাকে শ্রমিকরা আগুন দিয়েছে। তবে ট্রাকের তেমন ক্ষতি হয়নি। আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করে ফিরছি, পরে বিস্তারিত জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গণ-অভ্যুত্থানের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের মালিক সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হওয়ার পরই বেক্সিমকোর প্রায় ১৬টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এর পর থেকে বন্ধ কারখানা খুলে দেয়া, বকেয়া বেতন ও ব্যাংকিং সুবিধাসহ নানা দাবি জানিয়ে প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী আন্দোলন করে যাচ্ছেন।


আরো সংবাদ



premium cement