২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ০৯ মাঘ ১৪৩১, ২২ রজব ১৪৪৬
`
ইআরএফ-এসএমই ফাউন্ডেশন সেমিনারে বক্তারা

বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠান ছোট ব্যবসাকে খেয়ে ফেলছে

-


দেশের বড় বড় শিল্প ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র-ছোট ছোট ব্যবসাকে খেয়ে ফেলছে। বাংলাদেশে শুধু নয়, বিশ্বজুড়ে এখন এটি সমস্যা বলে মন্তব্য করেছে এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো: মুশফিকুর রহমান। তিনি বলেন, প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা এসএমইদের জন্য কাজ করতে পারছি না। দূতাবাসগুলোর মাধ্যমে এসএমইদের পণ্যগুলো বিশ্ববাজারে তুলে ধরার জন্য আমরা পদক্ষেপ নিচ্ছি। আর সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেছেন, এসএমইদের জন্য পলিসি সাপোর্ট দরকার, যাতে করে বড়দের আগ্রাসন থেকে তাদেরকে রক্ষা করা যায়।
রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইআরএফের মিলনায়তনে এসএমই ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে এবং অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন-ইআরএফের সহযোগিতায় ‘এসএমই নীতিমালা-২০২৫ : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ : গণমাধ্যমের ভূমিকা’ কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালার সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো: মুশফিকুর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী এবং ঢাকা চেম্বার সভাপতি তাসকিন আহমেদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। সঞ্চালনা করেন ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এসএমই ফাউন্ডেশনের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুহাম্মদ মোরশেদ আলম।

মূল প্রবন্ধে মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এসএমই নীতিমালা ২০২৫-এর সম্ভাব্য বাস্তবায়নকাল জুলাই ২০২৫ থেকে জুন ২০৩০। নীতিমালায় বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতের উন্নয়নে ১০টি কৌশলগত লক্ষ্যের আওতায় ৮৩টি কর্মকৌশল বা কৌশলগত হাতিয়ার এবং ৩১০টি কার্যক্রম রয়েছে। প্রতিটি কার্যক্রমের জন্য প্রধান বাস্তবায়নকারী (লিড ও কো-লিড) সংস্থা ছাড়াও সহযোগী বাস্তবায়নকারী (অ্যাসোসিয়েট) মন্ত্রণালয় বা সংস্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। কর্মকৌশলগুলোকে স্বল্পমেয়াদি (১ বছর), মধ্যমেয়াদি (২-৩ বছর) এবং দীর্ঘমেয়াদি (৪-৫ বছর) ৩ ভাগে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এই নীতিমালা বাস্তবায়নে নিয়মিত সভা আয়োজন, অর্থ বরাদ্দ, বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার নজরদারি, ঢাকার বাইরে এসএমই ফাউন্ডেশনের কার্যালয় স্থাপন এবং এসএমই ফাউন্ডেশনকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন।
মো: মুশফিকুর রহমান বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিরও প্রাণশক্তি কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাত। বাংলাদেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ। শিল্প খাতে কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ সিএমএসএমই খাতে। এই খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে সরকারি নীতিমালা, কৌশলপত্র ও নির্দেশনা বাস্তবায়নে কার্যক্রম পরিচালনা করছে এসএমই ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন, এসব কর্মসূচির অংশ হিসেবে এসএমই উদ্যোক্তাদের বাজার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এ যাবত ১১টি জাতীয় এসএমই পণ্য মেলা, ৯১টি আঞ্চলিক ও বিভাগীয় এসএমই পণ্য মেলা, ৪টি হেরিটেজ হ্যান্ডলুম ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের পাশাপাশি দুইশোরও বেশি উদ্যোক্তাকে বিভিন্ন দেশে আন্তর্জাতিক মেলায় অংশগ্রহণে সহযোগিতা করেছে এসএমই ফাউন্ডেশন।

তিনি বলেন, একজন তৃতীয় লিঙ্গের উদ্যোক্তাসহ ৫৭ জন সফল উদ্যোক্তাকে জাতীয় এসএমই উদ্যোক্তা পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। চেম্বার বা ট্রেডবডিগুলোর বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা বৃদ্ধি, নারী-উদ্যোক্তাদের অর্থায়নে ব্যাংকারদের উদ্বুদ্ধকরণ কর্মসূচি, গবেষণা পরিচালনা, নারী-উদ্যোক্তা সম্মেলন ও ক্রেতা-বিক্রেতা সম্মিলন, নারী-উদ্যোক্তা পণ্যমেলা আয়োজন, অনলাইন সাপ্লাইয়ার্স প্ল্যাটফর্ম এবং বিজনেস অ্যাডভাইজরি প্ল্যাটফর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে। সারা দেশের ১৭৭টি এসএমই ক্লাস্টার চিহ্নিত করে ক্লাস্টারভিত্তিক উদ্যোক্তাদের চাহিদার ভিত্তিতে বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে প্রথমবারের মতো রাজশাহীর কালুহাতি পাদুকা ক্লাস্টারে কমন ফ্যাসিলিটি সেন্টার (সিএফসি) প্রতিষ্ঠা করেছে ফাউন্ডেশন। এ যাবত ক্রেডিট হোলসেলিং কর্মসূচির আওতায় প্রায় ১০ হাজার উদ্যোক্তার মাঝে ১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে। ফাউন্ডেশনের সহায়তায় এ পর্যন্ত ৩১টি খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রতিষ্ঠান আইএসও সনদ ২২০০০ অর্জন করেছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ২টি বিজনেস ইনকিউবেশন সেন্টারে নতুন ও স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন সেবা প্রদান করা হয়।

আনোয়ার হোসেন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে সিএমএসএমই খাতের অবদান উন্নত দেশগুলো এমনকি প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায়ও অনেক কম। পাকিস্তানে এই হার ৪০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কায় ৫২ শতাংশ, চীনে ৬০ শতাংশ, ভারতে ৩৭ শতাংশ। এই খাতের বিকাশ ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে শিল্প মন্ত্রণালয় কর্তৃক ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবত সারা দেশে এসএমই ফাউন্ডেশনের বিভিন্ন কর্মসূচির সুবিধাভোগী প্রায় ২০ লাখ ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা। ২০১৯ সালে বাংলাদেশের এসএমই খাতের উন্নয়নে প্রথমবারের মতো এসএমই নীতিমালা অনুমোদন হলেও তা বাস্তবায়নে কোনো অর্থ বরাদ্দ না হওয়ায় নিজস্ব অর্থায়নে এসএমই নীতিমালা ২০১৯-এর আলোকে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে এসএমই ফাউন্ডেশন। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা অনুসারে বাংলাদেশের সিএমএসএমই উদ্যোক্তা ৭৮ লাখ ১৩ হাজারের বেশি। জুলাই বিপ্লবের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এসএমই নীতিমালা ২০২৫-কে ঘিরে দেশের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। তারা আশা করছেন, এই নীতিমালা শতভাগ বাস্তবায়নে সরকার এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বাস্তবায়ন সহযোগী মন্ত্রণালয় ও দফতরগুলোর অনুকূলে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ প্রদান করবে।
তাসকিন আহমেদ বলেন, এসএমই খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে, অর্থের সীমিত অ্যাক্সেস, উচ্চ সুদের হারের কারণে অর্থায়নের সমস্যা, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত, পর্যাপ্ত নীতিমালার অভাব, পণ্যের বাজারজাতকরণের সমস্যা, যা উত্তরণের জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিশ্বে হস্তশিল্পের বাজার হলো সাড়ে ৭০০ কোটি বিলিয়ন ডলারের। আমাদের বাজারজাতকরণের সমস্যা রয়েছে। বর্তমান সরকার এমন কিছু পদক্ষেপ নেবে যাতে আগামী প্রজন্ম তাদেরকে মনে রাখে।

 


আরো সংবাদ



premium cement