এবার টিউলিপকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণে চাপ বাড়ছে

বড় ধরনের দুর্নীতির তদন্তের পর টিউলিপ সিদ্দিককে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের চাপ বাড়ছে খোদ ব্রিটেনে। ব্রিটেনের বিরোধী নেতারা মনে করেন, সাবেক লেবার এমপির ‘আইন প্রয়োগের মুখোমুখি হওয়া উচিত’। কারণ বাংলাদেশে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত চলছে। ব্রিটিশ ট্যাবলয়েড ডেইলি মেইলের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশী রাজনীতিক ববি হাজ্জাজের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, তিনি বাংলাদেশ সরকার ও দুদকের কাছে ব্রিটেন থেকে টিউলিপ সিদ্দিককে দেশে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন। টিউলিপ সিদ্দিক বর্তমানে তার খালা শেখ হাসিনার সাথে তার যোগসূত্রের জন্য তদন্তাধীন, যিনি আগস্টে দুর্নীতি ও নিষ্ঠুরতার অভিযোগের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান।
এদিকে ব্রিটেন সরকার টিউলিপকে প্রত্যর্পণ আদেশ মেনে চলার জন্য অনুরোধ করবে কিনা জানতে চাইলে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের মুখপাত্র সংবাদমাধ্যম গুইডো ফকসকে বলেন, তারা ‘কল্পনাপ্রসূত কিছু বলবেন না।’

টোরি নেতা কেমি ব্যাডেনোচ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের বিরুদ্ধে টিউলিপ সিদ্দিককে মন্ত্রিত্ব দেয়ার ব্যাপারে ‘দুর্বল’ নেতৃত্বের অভিযোগ আনেন এবং মন্ত্রীর (টিউলিপ) সাথে তার বন্ধুত্বের কারণে তিনি কিভাবে প্রক্রিয়াটি বিলম্বিত করেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। টিউলিপকে নিয়ে ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনে কড়া সমালোচনা ও মিডিয়াগুলোর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশের এক পর্যায়ে টিউলিপ দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান। কেমি ব্যাডেনোচ বলেন, সপ্তাহান্তে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে টিউলিপ দুর্নীতি দমন মন্ত্রীর পদে সম্পূর্ণরূপে অযোগ্য। তবুও কিয়ার স্টারমার তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে রক্ষা করার জন্য দ্বিধাগ্রস্ত এবং বিলম্ব করেছেন। এখনো, যখন বাংলাদেশ টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করেছে, তিনি তার অনিবার্য পদত্যাগে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন। কিয়ার স্টারমারের এ ধরনের কার্যকলাপকে কেমি, ‘একজন দুর্বল প্রধানমন্ত্রীর দুর্বল নেতৃত্ব’ বলে অভিহিত করেন।
ব্রিটেনের ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্ট এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করে বলেছে যে, এই বিরোধ মোকাবেলায় দেখা গেছে যে লেবার এখনো সরকারের তদন্তে অভ্যস্ত নয়। নীতিশাস্ত্র এবং সততার ক্ষেত্রে গত সরকারের ব্যর্থতার জন্য এত দ্রুত সমালোচনা করার পর, স্টারমার এবং তার দলকে দেখাতে হবে যে তারা ক্ষমতায় আসার পর যে মানদণ্ড বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা পূরণের গুরুত্ব তারা সত্যিই বোঝেন।

লিবারেল ডেমোক্র্যাট মুখপাত্র সারাহ ওলনি বলেছেন, ‘এটা ঠিক যে টিউলিপ সিদ্দিক পদত্যাগ করেছেন, আপনি একজন দুর্নীতি দমন মন্ত্রীকে দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে আটকে রাখতে পারেন না।’
একটি গোপন তদন্তে টিউলিপ সিদ্দিক ‘দুঃখজনক’ আচরণের নিন্দা জানানোর পর গত ১৪ জানুয়ারি লেবার সরকার থেকে পদত্যাগ করেন এবং বলেন যে তিনি ব্রিটিশ সরকারের কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে চান না। ২০১৩ সালে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য একটি চুক্তিতে দরকষাকষির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, যেখানে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এমপি থাকাকালীন তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধভাবে জমি বরাদ্দের ঘটনায় দ্বিতীয় তদন্তে টিউলিপের নামও এসেছে।
এসব দাবির পর, বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ তাকে ‘আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি’ করার জন্য বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি জানান। হাজ্জাজ গুইডো ফকসকে বলেন যে টিউলিপের যুক্তরাজ্য এবং বাংলাদেশ উভয় দেশের দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে এবং তিনি দাবি করেন যে তিনি দেশটির দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) তাকে ফিরে আসতে বলার জন্য অনুরোধ করবেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে আমরা অবশ্যই দুদক এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে টিউলিপকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মুখোমুখি হতে অথবা এখানে আদালতের মুখোমুখি হতে অনুরোধ করার জন্য চাপ দেবো। মি. হাজ্জাজ আরো দাবি করেন যে, লেবার সরকার ‘স্বৈরাচারী শাসনের আস্থাভাজনদের দ্বারা ব্যাপকভাবে সমর্থিত। লেবার এবং আওয়ামী লীগ প্রায় সহযোগী দলের মতো এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি খুব ভালোভাবে জানে।
ডেইলি মেইলের প্রতিবেদনে টিউলিপের খালা শেখ হাসিনার শাসনামলের সাথে সংযোগ নিয়ে সঙ্কট মোকাবেলার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের রাজনৈতিক বিচারবুদ্ধি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। টিউলিপের বিদায়ের আগের দিন, ১০ নম্বর ডাউন স্ট্রিট তার ওপর ‘পূর্ণ আস্থা’ প্রকাশ করেছিল, যদিও কয়েক সপ্তাহ ধরে ব্রিটিশ মিডিয়াসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোতে তাকে নিয়ে ক্ষতিকারক শিরোনাম হয়েছিল।