সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্রিটিশ ব্যারিস্টারের কাছে গিয়েছিল হাসিনা সরকার
- নয়া দিগন্ত ডেস্ক
- ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:২৯
আলজাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের আলোচিত প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচারের পর সংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করতে ব্রিটেনের বিশিষ্ট একজন ব্যারিস্টারের কাছে গিয়েছিল ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। ব্যারিস্টারের নাম ডেসমন্ড ব্রাউনি কে সি। আলজাজিরায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তার সাথে যোগাযোগ করেছিল বাংলাদেশের আ’লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।
সম্প্রতি গণভবন থেকে ব্রিটেনের দ্য সানডে টাইমসের উদ্ধার করা একটি নথিতে ওই যোগাযোগের তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গণভবনে শেখ হাসিনার শোবার ঘরে নথিটি পড়েছিল। ওই নথির তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ডেসমন্ড ব্রাউনির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন লন্ডনে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তারা। তাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে রাজিও হয়েছিলেন ব্রাউনি। এরপর তিনি হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের একজন আইনজীবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। পরে দু’জন শেখ হাসিনা সরকারকে নানা পরামর্শ দেন।
ব্রাউনির সাথে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের প্রথম যোগাযোগের কয়েক দিন আগে আলজাজিরায় ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামের ওই প্রামাণ্যচিত্র সম্প্রচারিত হয়।
আলজাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্রে শেখ হাসিনা সরকারের দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরা হয়েছিল। তবে ওই প্রামাণ্যচিত্রটি ‘মিথ্যা’ ও ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে উল্লেখ করেছিল বাংলাদেশ সরকার। প্রামাণ্যচিত্রটি সম্প্রচারের পরপরই তাতে তথ্যদাতা জুলকারনাইন সায়ের খানের ভাইকে রড দিয়ে পেটানো হয়েছিল। এ ছাড়া প্রামাণ্যচিত্রটির সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকে দেশ ত্যাগ করেছিলেন অথবা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।
গণভবনে পাওয়া নথি অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে ভার্চুয়াল বৈঠক করেছিলেন ব্যারিস্টার ডেসমন্ড ব্রাউনি। সেখানে তার কথায় মনে হয়, ভবিষ্যতে আলজাজিরার বিরুদ্ধে তাদের হয়ে (হাইকমিশনের কর্মকর্তা) মামলা করতে তিনি প্রস্তুত ছিলেন; কিন্তু হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের আগে একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করা দরকার, যিনি তাকে (ব্যারিস্টার ব্রাউনি) পরামর্শ দেবেন। এরপর ব্রাউনির পরামর্শে লন্ডনের আইনি সহায়তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান পেনিংটন মানচেস কুপারের বিশেষজ্ঞ জেরেমি ক্লার্ক-উইলিয়ামসের সাথে যোগাযোগ করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। কিছুদিন বাদে তিনিও বাংলাদেশ সরকারের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করেছিলেন।
নথির তথ্য অনুযায়ী, আলজাজিরার ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণে কাজ করা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যানকে গ্রেফতারের পরিকল্পনাও করেছিল শেখ হাসিনা সরকার। ক্লার্ক-উইলিয়ামসকে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, তারা বার্গম্যানের বিরুদ্ধেও মামলা করার জন্য প্রস্তুত। ওই কর্মকর্তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ওই প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণের পেছনে ছিলেন ডেভিড বার্গম্যন। তাকে বাংলাদেশে গ্রেফতার করা হবে।
কিন্তু বাংলাদেশ সরকার শেষ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আদালতে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর বিপরীতে তারা নিজেদের প্ল্যাটফর্ম থেকে আলজাজিরার প্রামাণ্যচিত্রটি সরিয়ে নেয়ার জন্য ফেসবুক ও ইউটিউবকে চাপ দেয়ার প্রচেষ্টা শুরু করেছিল। ডেসমন্ড ব্রাউনি সম্প্রতি আইন পেশা থেকে অবসরে গেছেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি সানডে টাইমসকে বলেন, ‘এটা সত্যি যে, ১০ ফেব্রুয়ারি আমার সাথে প্রাথমিক আলোচনার পর আমি ও ক্লার্ক-উইলিয়ামস (বাংলাদেশ) হাইকমিশনকে পরামর্শ দিয়েছিলাম।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা