২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৬ মাঘ ১৪৩১, ১৯ রজব ১৪৪৬
`

বাংলাদেশের সমালোচনায় এপিপিজির ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ প্রতিবেদন প্রত্যাহার

-

কমনওয়েলথ সম্পর্কিত সর্বদলীয় সংসদীয় গ্রুপ (এপিপিজি) গত নভেম্বরে বাংলাদেশ সম্পর্কে যে প্রতিবেদনটিতে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনব্যবস্থার সমালোচনা করেছিল তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়েছে। গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, এপিপিজি এখন নিজেরাই বলছে, বাংলাদেশের সমালোচনা করে দেয়া ওই প্রতিবেদনটি ভুল এবং ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার সরকারের পক্ষে পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। এ ধরনের অভিযোগের পর ব্রিটেনের একদল এমপি বাংলাদেশকে নিয়ে ওই বিতর্কিত প্রতিবেদন প্রত্যাহার করেছেন।
ব্রিটিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হাউস অফ কমন্সে একজন লেবার এমপি অভিযোগ করার পর বাংলাদেশকে নিয়ে প্রতিবেদনটি আর বিতরণ করা হচ্ছে না এবং ‘পর্যালোচনাধীন’ রয়েছে। একজন ব্রিটিশ মুখপাত্র বলেছেন, বাংলাদেশকে নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনটি পর্যালোচনাধীন একটি অভ্যন্তরীণ নথি হিসেবে রয়ে গেছে এবং গ্রুপের বৃহত্তর আলোচনা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে (পররাষ্ট্র দফতরের) সাথে ভাগ করা হয়েছে। এটি বৃহত্তর প্রচারের উদ্দেশ্যে নয় এবং এপিপিজি বিষয়টিকে আর এগিয়ে নেবে না বা কোনো ফলোআপ করবে না।
হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক তার খালার দলের সাথে তার পূর্বে অপ্রকাশিত সংযোগের কারণে নগর মন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করার পর এই স্বীকারোক্তি আসে, যার ফলে আওয়ামী লীগ ব্রিটিশ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছে বলে অভিযোগ ওঠে।
শেখ হাসিনাকে তার কর্তৃত্ববাদী শাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিদ্রোহের মুখে ক্ষমতাচ্যুত করার তিন মাস পর, গত নভেম্বরে ‘দ্য অনগোয়িং সিচুয়েশন ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এই বিদ্রোহ নিরাপত্তা বাহিনীর নৃশংস কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ অভিযানের মুখোমুখি হয়, যার ফলে আনুমানিক এক হাজার জন নিহত হয়।

প্রতিবেদনে হাসিনার উত্তরসূরি, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে একাধিক সমালোচনা করা হয়েছে। এপিপিজির কনজারভেটিভ চেয়ার অ্যান্ড্রু রোজিন্ডেল একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের একটি দুর্দান্ত ভবিষ্যৎ থাকা উচিত যেখানে সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত এবং ক্ষমতায় থাকা যেকোনো শাসনব্যবস্থার সমর্থকদের চেয়ে সহজলভ্য থাকবেÑ অবিলম্বে পদক্ষেপ পরিবর্তন না করলে, আন্তর্জাতিকভাবে নতুন সরকার যে সদিচ্ছা উপভোগ করে তা বাষ্পীভূত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।’
এই গোষ্ঠীর প্রতিবেদনে ইউনূসের প্রশাসনকে ‘রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে আইন ব্যবহার’ এবং ‘কট্টরপন্থী ইসলামপন্থীদের’ ক্ষমতায়নের অভিযোগ আনা হয়।
লেবার পার্টির এমপি রূপা হক, যিনি সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন। তিনি চলতি সপ্তাহে কমন্সে প্রতিবেদনটির সমালোচনা করেছেন এবং এটিকে ‘বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ওপর একটি ছদ্মবেশী কাজ’ বলে অভিহিত করেছেন। হক দাবি করেন অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূস ব্যক্তিগতভাবে তার কাছে প্রতিবেদনটি উত্থাপন করে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনার সরকার কী করছে, সংসদের নামে এই মিথ্যাচার প্রকাশ করছে?’
আফ্রিকান ও ওরিয়েন্টাল স্টাডিজ স্কুলের অধ্যাপক নাওমি হোসেন বলেন, ‘প্রতিবেদনে এমন মৌলিক ত্রুটি রয়েছে যা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে মোটেও স্পষ্ট নয়Ñ এটি হয় অত্যন্ত পক্ষপাতদুষ্ট, অথবা কেবল অত্যন্ত খারাপ বিশ্লেষণ। জবাবদিহিতার হাতিয়ার হিসেবে এ ধরনের প্রতিবেদন সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়।’
মূলত নয়াদিল্লিভিত্তিক থিংকট্যাংক রাইটস অ্যান্ড রিস্ক অ্যানালাইসিস গ্রুপের দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে বাংলাদেশকে নিয়ে এ ধরনের সমালোচনামূলক প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছিল।

 


আরো সংবাদ



premium cement