মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৯ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
মুক্তিযুদ্ধে সবার সঠিক ইতিহাস তুলে ধরলেই সবাই সঠিক ইতিহাস জানতে পারবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে আগন্তুকের প্রশ্নের সম্পূরক উত্তরে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, গণতন্ত্র মানে মতপ্রকাশ বা অধিকার প্রয়োগ। ভোটের মাধ্যমে মানুষ সেটা প্রকাশ করে থাকে। বাংলাদেশে বিভিন্ন দলের আদর্শের মধ্যে পার্থক্য থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে যেকোনো মূল্যে কথা বলার অধিকার থাকতে হবে। এ বিষয়ে দলমত নির্বিশেষে ঐকমত্য থাকতে হবে। সেইসাথে মানুষের ভোটদানের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই আমরা আগামী ১৫-২০ বছর গণতন্ত্র ধ্বংসের রাহু থেকে মুক্ত থাকব। পাশাপাশি স্বৈরাচারমুক্ত পরিবেশ আমরা ধীরে ধীরে গড়ে তুলতে পারব।
এ সময় অনুষ্ঠানে ডা: জুবাইদা রহমান নিজের জীবনে শহীদ জিয়াউর রহমান ও খালেদা জিয়ার স্মৃতিচারণ করেন বলেন, তাদের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা আমার মতো অনেক শিশু-কিশোরের জন্য পাথেয়। এ সময় তিনি জিয়াউর রহমানকে নিয়ে একটি কবিতা আবৃত্তি করেন।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শহীদ জিয়াউর রহমানই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম বিদ্রোহী। তিনি পরিবারের দিকে এবং নিজের জীবনের দিকে তাকাননি। সুতরাং কে কোথায় কী লিখলো তা নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। আইন করে আমাদেরকে বাধ্য করা যাবে না যে, স্বাধীনতার ঘোষক অন্য কেউ।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল শনিবার দুই পর্বের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)। প্রথম পর্বে ঢাকার শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে (ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলের বিপরীতে) দুপুর আড়াইটা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আলোকচিত্র প্রদর্শনী এবং শিশু-কিশোরদের নিয়ে জিয়াউর রহমান প্রসঙ্গে গল্প বলা অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের মঞ্চে জিয়াউর রহমানের সাথে বিভিন্ন স্মৃতিচারণমূলক বিষয়ে শিশু-কিশোরদের শোনান বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী কনকচাঁপা ও বেবি নাজনীন। পাশাপাশি ছোট্ট শিশুরাও জিয়াউর রহমানের বিষয়ে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাদের অন্যতম আগা খান একাডেমির ছাত্র শাহরিন মো: ছোয়াদসহ কয়েকজন। পাশাপাশি মিলনায়তনের বাইরে জিয়াউর রহমানের জিয়াউর রহমানের জীবনঘনিষ্ঠ অসংখ্য ছবি পরিদর্শন করেন শিশু কিশোরসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেডআরএফের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ডা: ফরহাদ হালিম ডোনার, জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক ডা: শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ, সদস্যসচিব ড. সোহাগ আওয়াল এবং সদস্য ডা: মোস্তফা আজিজ সুমন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাছির, নূরুল ইসলাম মনি, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আফরোজা খান রীতা, জেডআরএফের অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, ডা: পারভেজ রেজা কাকন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ড. আবুল হাসনাত মো: শামীম, অধ্যাপক আবদুল করিম, আমিরুল ইসলাম কাগজী, আতিকুর রহমান রুমনসহ রাজনীতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের ব্যক্তিরা।
এরপর একই স্থানে দ্বিতীয় পর্বে ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান : যাঁর গল্প আমাদের আদর্শ’- শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন জেডআরএফের প্রেসিডেন্ট ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট বিশিষ্ট কার্ডিওলজিস্ট ডা: জুবাইদা রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। অনুষ্ঠানের শুরুতে কুরআন তিলাওয়াত ও মুনাজাত পরিচালনা করেন অধ্যাপক ড. মো: ছবিরুল ইসলাম হাওলাদার। অধ্যাপক নাসরিন সুলতানার পরিচালনায় আরো বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধি ফাহাম আব্দুস সালাম, ডা: সৈয়দা তাজনিন ওয়ারিস সিমকী, অধ্যাপক হালিম খান, চিত্রনায়ক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জ্বল, মুক্তিযোদ্ধা লুতফুল হাসান, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা মো: জামাল হোসেন মজুমদার, সাবেক রাষ্ট্রদূত মুফলেহ আর ওসমান, প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের সমন্বয়ক ইফতেখার মাহমুদ, একাডেমিয়া ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের ছাত্র কায়সান আহিয়ান রেজা। অনুষ্ঠানে জিয়াউর রহমানের ওপর একটি বিশ্লেষণধর্মী ডকুমেন্টারি উপস্থাপন করেন ফ্রি ইউনিভার্সিটি অব ব্রাসেলেসের এমিরেটাস অধ্যাপক এডি ভান ড্রিসে।
আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবেদীন, ড. শাহিদা রফিক, জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, আশরাফ উদ্দিন বকুল, আফজাল হোসেন সবুজ, যুক্তরাষ্ট্র যুবদলের সাবেক সভাপতি আবু সাইদ আহমেদ, যুবদলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, নূরুল ইসলাম নয়ন, বিল্লাল হোসেন তারেক, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, রাজীব আহসান, নাজমুল হাসান, ছাত্রদলের নাছির উদ্দিন নাছির, পেশাজীবী নেতাদের মধ্যে ইউট্যাবের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, ড্যাবের অধ্যাপক ডা: হারুন আল রশিদ, ডা: মো: আবদুস সালাম, ডা: জহিরুল ইসলাম শাকিল, ডা: সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, রুয়েটের ভিসি অধ্যাপক এসএম রাজ্জাক, রাবির অধ্যাপক আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা। অনুষ্ঠানে আগন্তুকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন অতিথিরা।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, গত জুলাই অভ্যুত্থানের আন্দোলনের ৬৪ জন শিশুকে হত্যা করা হয়েছে, যা বিশ্বের ইতিহাসে সেটি কোথায়ও নেই। এ ভয়ঙ্কর হত্যার বিচার না হয়ে তো বাংলাদেশ এগোতে পারে না। জিয়াউর রহমানের সততা আমাকে মুগ্ধ করে। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে, যা দিয়ে কয়েকটি পদ্মাসেতু তৈরি করা যেত। তিনি বলেন, ৭৫ সালের বাকশালে ৪টি বাদে সব গণমাধ্যম বন্ধ করা হয়েছিল। হাজার হাজার সাংবাদিক বেকার হয়ে পড়ে। বিপরীতে সাংবাদিকতার মর্যাদা ফিরিয়ে নিয়ে আসেন জিয়াউর রহমান। যিনি বহুদলীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই হলো গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। বিপরীতে অধ্যাপক ড. মোর্শেদ একটি কলাম লেখার কারণে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনার চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। তবে হ্যাঁ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কিন্তু স্তাবকতা পছন্দ করতেন না।
তরুণ প্রজন্মের ভাবনা নিয়ে ফাহাম আব্দুস সালাম বলেন, শহীদ জিয়াকে কেন স্মরণ করা উচিত এ নিয়ে বিএনপি মনে হয় ব্যর্থ হয়েছে। ৭১ সালে যদি শহীদ জিয়া না থাকতেন স্বাধীনতা যুদ্ধ কি শুরু হতো না? অবশ্যই হতো। আবার যদি ৭৫ সালে জিয়াউর রহমান না থাকতেন তাহলে বাংলাদেশের সর্বনাশ হতো। বাংলাদেশের অবস্থা হতো লাইবেরিয়ার মতো। শহীদ জিয়া দেশের আনাচে-কানাচে তিনি ঘুরে বেড়িয়ে প্রচুর কাজ করেছেন। আজকে নতুন প্রজন্মের নেতাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা নিয়ে এগোনো উচিত।