১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ মাঘ ১৪৩১, ১৬ রজব ১৪৪৬
`
মার্চ ফর ফেলানীতে সারজিস আলম

সীমান্তে আর কারো লাশ ঝুললে লংমার্চ কাঁটাতার ছিঁড়ে ঢুকে যাবে

সীমান্তে আর কারো লাশ ঝুললে লংমার্চ কাঁটাতার ছিঁড়ে ঢুকে যাবে -

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ফেলানী হত্যার ন্যায্য বিচার এবং বিএসএফ কর্তৃক সীমান্তে ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে আয়োজিত ‘মার্চ ফর ফেলানী-২০২৫’ ছাত্র-জনতার বিপুল অংশগ্রহণে সফলভাবে শেষ হয়েছে। গতকাল কুড়িগ্রাম শহর থেকে শুরু হয়ে ফেলানী হত্যার স্থল সীমান্তে গিয়ে শেষ হওয়া এই লংমার্চে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা, পেশাজীবী সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীরা অংশ নেন।
লংমার্চে যোগ দিতে গতকাল সকাল থেকেই কুড়িগ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ জড়ো হতে থাকেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে পুরো লংমার্চটি এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদে রূপ নেয়। মিছিলে মানুষের একটাই দাবি ছিল সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা বন্ধ এবং ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার।
লংমার্চে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক এবং জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেন, আমরা আর সীমান্তে লাশ দেখতে চাই না। আজ পর্যন্ত সীমান্তে যত লাশ পড়েছে, তার বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেখতে চাই। সীমান্ত হত্যা শুধু একটি দেশের নয়, এটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এর শেষ দেখতে আমাদের এই আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। আর যদি আমার কোনো ভাই বা বোনের লাশ সীমান্তে ঝুলে থাকে, তাহলে কাঁটাতারকে লক্ষ্য করে আজকের মার্চ ফর ফেলানীর মতো লং মার্চ করা হবে। আমরা পৃথিবীর প্রতিটি দেশকে স্পষ্ট করে একটি কথাই বলতে চাই, এই যে সীমান্ত হত্যা, কাঁটাতার দেয়ার নামে জোর করে বাধা দেয়ার জন্য যে প্রয়াস তা রুখে দেয়ার জন্য নতুন করে যে অভ্যুথান হয়েছে এর স্ফুলিঙ্গ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেয়া হবে।
লংমার্চের সমাপ্তি বক্তব্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন, সীমান্তে ফেলানীসহ ছয় শতাধিক নিরপরাধ বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে বিএসএফ। এটি বন্ধ করতে হলে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি ও দুই দেশের মধ্যে সুস্পষ্ট ও কার্যকর নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ফেলানী হত্যার বিচার এবং সীমান্ত হত্যা পুরোপুরি বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী খাতুনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করে। তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকার মর্মান্তিক দৃশ্য মানবতার প্রতি একটি ন্যায্য বিচার ও সীমান্তে হত্যা বন্ধের দাবি জাগিয়ে তোলে। ইতোমধ্যে এই হত্যাকাণ্ডের ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেলানীর পরিবার আজও ন্যায়বিচার পায়নি।
গতকালের লংমার্চে আরো উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আরিফ সোহেল, নির্বাহী সদস্য রিফাত রশিদ, কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আবদুল কাদের, নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী, সদস্য সচিব আখতার হোসেন প্রমুখ।
পরে লংমার্চটি কুড়িগ্রামের পাটেশ্বরী বাজার, মদ্যকৃমারপুর, নাগেশ্বরী উপজেলা সদর হয়ে ফেলানীর বাড়ি গিয়ে শেষ হয়। পথিমধ্যে বিভিন্ন স্থানে ‘জুলাই বিপ্লবের’ ঘোষণাপত্রের ব্যাপারে সাধারণ জনগণের মতামত জানতে পথসভা অনুষ্ঠিত হয়।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল