চোরের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ নরসিংদীবাসী
- হামিম উল কবির
- ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০
চোরদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন নরসিংদীবাসী। প্রতি রাতেই চোর ঢুকছে কোনো না কোনো বাড়িতে। গরু চুরি, বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার ব্যাটারি খুলে নিয়ে যাওয়া, অনেক সময় ব্যাটারির সাথে অটোরিকশাও চুরি হচ্ছে, টিউবওয়েলের ওপরের অংশও চুরি হচ্ছে, এমনকি রাতে রান্নাঘরের হাঁড়ি-পাতিলও চুরি যাচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, একটা সময় তারা নির্বিঘেœ রাত কাটাতে পারলেও ইদানীং বেড়ে যাচ্ছে চুরির ঘটনা।
চুরি হচ্ছে অভিনব কৌশলে। বাড়ির মালিক বুঝতেই পারেন না যে চুরি হচ্ছে। আবার অনেক সময় বুঝতে পারলেও চোরদের ধরার কোনো উপায় থাকে না। ঘর থেকে বের হওয়ার যেসব উপায় আছে চোর সেসব উপায়গুলো বন্ধ করে দিয়েই চুরি করে। গরু চুরির ব্যাপারে এলাকাবাসী জানিয়েছেন, যে বাড়িতে গরু চুরি হয় সে বাড়ির প্রধান গেট অথবা ঘর থেকে বের হওয়ার প্রতিটি দরোজা বাইরে থেকে আটকে দেয়া হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাইরে থেকে তালাও দিয়ে রাখা হয়। অন্য দিকে গোয়ালঘরে তালা দেয়া থাকলেও অভিনব পন্থায় তালা খুলে ফেলা হয়, কোনো ধরনের শব্দ হয় না। তালা খুলতে না পারলেও বেড়া কেটে গরু বের করে ফেলছে, গরু কোনো ধরনের শব্দও করে না। বাড়ি থেকে বের করে ট্রাকে দ্রুত গরু নিয়ে পালিয়ে যায় বলে এলাকাবাসী সন্দেহ করছেন। এরা হয়তো সঙ্ঘবদ্ধ চোর চক্র। আবার নরসিংদীতে স্থানীয় ছিচকে চোরের উপদ্রবও বেড়েছে। এদের বেশির ভাগই নেশাখোর। নেশার টাকা জোগাতে এরা চুরি করে।
এ ব্যাপারে নরসিংদীর জেলার পুলিশ সুপারের সাথে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার সরকারি ফোনটি বন্ধ থাকায়। তবে নরসিংদীর কয়েকটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলে জানা গেছে, চুরির কোনো কোনো ঘটনা সম্বন্ধে তারা জানেন, বেশির ভাগই জানেন না। এলাকাবাসী সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নিয়েও থানায় যায় না বলেও পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। অন্যদিকে এমন অভিযোগও পাওয়া যাচ্ছে যে, সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অভিযোগ করতে না পারলে থানা কর্তৃপক্ষ ভুক্তভোগীর এজাহারও নেয় না। তবে সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
নরসিংদী থেকে এলাকাবাসীর সূত্রে এ ধরনের কিছু ঘটনা জানা গেছে। গত বুধবার রাতের কোনো এক সময় শিবপুর থানার পুটিয়া ইউনিয়নের মোল্লাকান্দা গ্রামের মো: মনিরুজ্জামানের পাঁচটি গরু চুরি হয়েছে। এই পাঁচটির মধ্যে তিনটি গাভী, দু’টি বাছুর। একটি গাভীর গত মঙ্গলবার মরা বাচ্চা হয়েছে। মনিরুজ্জামানের আত্মীয়রা জানিয়েছেন, দু’টি গাভীর রঙ কালো একটি গাভীর রঙ লাল, বাছুর দু’টির রঙ সাদা-কালো ও লাল। আত্মীয়রা জানিয়েছেন, মনিরুজ্জামান স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে গরু কিনেছিলেন। জানা গেছে, প্রতি মাসে তাকে ৩০ হাজার টাকা ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। এখন মনিরুজ্জামান চোখে অন্ধকার দেখছেন যে, তিনি এই ক্ষতি কিভাবে পোষাবেন তা তার জানা নেই, নীরবে চোখের পানি পড়ছে ঘটনা জানার পর থেকে। গরু যে দুধ দেয় তা বিক্রি করে ঋণের কিস্তি দিতেন মনিরুজ্জামান। সেই সাথে তার দুই ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন এমনকি সংসারও চালাতেন দুধ বিক্রি করে। মনিরুজ্জামানের গরু চুরি ছাড়া গত ১৪ জানুয়ারি শিবপুর থানার কলেজগেট এলাকার দোকানে ও চাঁদপাশা বাজারের আট দোকানে চুরির ঘটনা ঘটেছে। এখানে কয়েক লাখ টাকার মাল চুরি গেছে।
নরসিংদীর পলাশ থানার তালতলী বাজারের একটি বাড়ির পাশে বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার চুরি গেছে গত বুধবার রাতে। যে বাড়ির পাশে ট্রান্সফরমার ছিল চুরির সময় সে বাড়ির বাইরের গেটটি আটকে দেয়া হয়। এ ব্যাপারে পলাশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানালেন, এলাকায় কিছু চুরির ঘটনা তিনি জানেন তবে ট্রান্সফরমার চুরির ঘটনা তার নলেজে নেই। তিনি বলেন, তিনি নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছেন। মাদকের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। তিনি জানিয়েছেন, এখানে উঠতি বয়সীরা মাদকের সাথে সংশ্লিষ্ট। এরা বাইরে থেকে মাদক কিনে নিয়ে আসে। মাদকের কোনো ডিলার খুঁজে পাচ্ছি না। এ ব্যাপারে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাওয়ার সাথে সাথে এলাকার অভিভাবকদের সাহায্য চান। পলাশ থানার কয়েক গ্রামের মানুষ জানিয়েছেন, পলাশ থানায় গরু চুরির সাথে অনেক ছোটখাটো চুরিও হচ্ছে। এখানে মাদকসেবীরা নানা ধরনের অপরাধ করছে। এরা দিনের বেলা খুব ঘন কলার ক্ষেতে তাস দিয়ে জুয়া খেলে। রাতে জুয়ার টাকা ও মাদকের টাকাও জোগাতে চুরি করে। পলাশ থানার ইছাখালী গ্রামে কিছুদিন আগে একজনের বাড়ি থেকে তিনটি বড় গরু চুরি হয়েছে কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। এমনকি ব্যাটারি গাড়ির ড্রাইভারকে খুন করে গাড়ি ছিনতাই করে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে এখানে।
মনোহরদীর নয়া দিগন্তের সংবাদদাতা জানান, গত ৬ জানুয়ারি রাতে মনোহরদীর চকতাতারদী গ্রামের দু’টি বাড়ি থেকে ছয়টি গরু চুরি হয়। গত ৫ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ওই গ্রামের তপন চৌকিদারের বাড়ির গোয়াল থেকে তিনটি গরু চুরি হয়। তপন মণ্ডল জানান, গরু দু’টির বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। একই রাতে তার প্রতিবেশী রুহুল মণ্ডলেরও দু’টি বকনা গরু ও একটি বাছুর চুরি হয়। এতে তারও প্রায় দু’ লাখ টাকার বেশি ক্ষতি হয়। এর সপ্তাহ খানেক আগে চালাকচর গ্রামের সাইদুর মেম্বারের বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে তার দু’টি বলদ গরু চুরি হয়। বলদ দু’টির বর্তমান বাজারমূল্য আনুমানিক দেড় লাখ টাকা। একই রাতে তার প্রতিবেশী কাজল রবিদাসেরও দু’টি গাইগরু চুরি হয়। গরু দু’টির বাজারমূল্য হবে আনুমানিক এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। এর কিছুদিন আগে এক রাতে উপজেলার জামালপুর গ্রামের চার বাড়ি থেকে ছয়টি গরু চুরির ঘটনা ঘটে।
মনোহরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আব্দুল জব্বার এ ব্যাপারে জানান, গরু চুরি হচ্ছে, মোটরসাইকেল চুরি হচ্ছে তা মানুষের কাছ থেকে শুনেছেন। তবে কেউ থানায় এসে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করেননি। তিনি বলেছেন, গরু চুরির ঘটনাগুলো আন্তঃথানা ও আন্তঃজেলার চোরদের কাজ হতে পারে। আমরা চেষ্টা করছি এদের ধরতে। কিন্তু আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, পর্যাপ্ত জনবল নেই, এমনকি গাড়িও নেই।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা