‘জামায়াতকে নিবন্ধন না দিলে কয়েক কোটি মানুষ ভোট দেয়ার অধিকার পাবে না’
- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:০০
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ওপর দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছেন।
আদালতে আপিল আবেদনের শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসান এ সিদ্দিক ও অ্যাভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পক্ষে ছিলেন আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম।
শুনানির বিষয়ে আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, বাদি পক্ষের এই মামলা করার এখতিয়াই নেই। এখানে তাদের নিজেদের কোনো ক্ষতি হয়নি। তারা করেছে জনস্বার্থে মামলা। জনস্বার্থে মামলা করতে গেলে দেখাতে হয় জনগণের প্রতি কোনো অন্যায় করা হয়েছে। নিবন্ধন দিলে তো কারো প্রতি কোনো অন্যায় করা হচ্ছে না। বরং নিবন্ধন না দিলে হাজার হাজার মানুষ ভোট দেয়া থেকে বঞ্চিত থাকবে। তিনি আরো বলেন, জামায়াতে ইসলামীকে যদি নিবন্ধন না দেয়া হয়, তাহলে দেশের কয়েক কোটি লোক ভোট দেয়ার কোনো অধিকার পাবে না। এই লোকগুলো কোথায় ভোট দেবে? তাদের ভোটাধিকারের কী হবে? তাদের যে সমর্থন আছে, সেটা ১০ শতাংশ বলি বা যেটাই বলি তাদের লোক কি তাদের ভোট দেবে না? ভোট দেবে কী করে?
অপর দিকে নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী তৌহিদুল ইসলাম আদালতে বলেছেন, আমরা বারবার আদালতকে জানিয়েছি যে, নিবন্ধনের প্রক্রিয়া এখনো শেষ করিনি। আমরা এখনো প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। যখন রুল হয়ে গেছে আদালত এটা টেকওভার করছেন। তখন আমাদের কিছু বলার নেই।
এর আগে গত ৩ ডিসেম্বর আপিলের শুনানি শুরু হয়। গত ২২ অক্টোবর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপিল বিভাগের বেঞ্চ জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে খারিজ হওয়া আপিল পুনরুজ্জীবিত করে আদেশ দেন। ওই দিন আইনজীবী শিশির মনির বলেছিলেন, হাইকোর্ট এই মামলায় বিভক্ত রায় দেন। দুই বিচারপতি নিবন্ধন বাতিল করে রায় দিয়েছেন। আরেকজন বিচারপতি নিবন্ধনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। নিবন্ধন বাতিলের পক্ষে যিনি আর্গুমেন্ট করেছেন তিনি বলেছেন, যে ব্যক্তি নিবন্ধন বাতিল করার জন্য আবেদন করেছেন তিনি নিজেই পক্ষ দোষে দুষ্ট। কারণ কোনো রাজনৈতিক দলকে ধর্মের ভিত্তিতে কিংবা কোনো ধর্মীয় আচার-আচরণের ভিত্তিতে পরিচালিত কোনো রাজনৈতিক দল পৃথিবীর কোথাও নিষিদ্ধ করা হয় না। জামায়াতে ইসলামী একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। বাংলাদেশের সব পার্লামেন্টে জামায়াতের প্রতিনিধিত্ব ছিল। এটি গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ ১৯৭২-এর পরিপন্থী এবং বাংলাদেশের সংবিধানের পরিপন্থী।
গত বছরের ১৯ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় জামায়াতের আপিল খারিজ (ডিসমিসড ফর ডিফল্ট) করে আদেশ দেন।
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় গত ১ আগস্ট জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর গত ৫ আগস্ট ছাত্রজনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল বিভাগে খারিজ হওয়া আপিলটি পুনরুজ্জীবিত করার আবেদন করা হয়।
এক রিট আবেদন নিষ্পত্তি করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল ও অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। এরপর ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরে হাইকোর্টে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে জামায়াতে ইসলামী।
২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর জামায়াতে ইসলামীকে সাময়িক নিবন্ধন দেয়া হয়। পরের বছর বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী, জাকের পার্টির তৎকালীন মহাসচিব মুন্সী আবদুল লতিফ, সম্মিলিত ইসলামী জোটের প্রেসিডেন্ট মাওলানা জিয়াউল হাসানসহ ২৫ জন জামায়াতের নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা